ওসির ৮ তলা বাড়ি: অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে ব্যারিস্টার সুমন
রাজধানীর রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের আটতলা বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
কমিশনের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বরাবর দেওয়া চিঠিতে আইনজীবী সুমন ওসি মনিরুল ইসলামের সম্পদের অনুসন্ধানপূর্বক আইনি পদক্ষেপ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) এই চিঠি দেন তিনি।
এর আগে গতকাল বুধবার (১০ আগস্ট) ওই ওসির সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন তিনি। তবে তাকে এ বিষয়ে দুদকে আবেদন জমা দিতে পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।
আইনজীবী সুমন এ বিষয়ে বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, বিষয়টি আদালতের নজরে আনা দরকার। দুদকের তদন্তের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা।
সুমন বলেন, দেশে অসংখ্য সৎপুলিশ অফিসার রয়েছেন। কিন্তু এই ওসির মতো যদি সবাই এত সম্পদ বানান, তাহলে সৎ অফিসার যারা, তারা মনে অনেক বেশি কষ্ট পাবেন। এর ফলে দেশে আর সৎ অফিসার নাও হতে পারেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুদকে দেওয়া চিঠিতে সুমন বলেন, ১৯৯২ সালে মনিরুল ইসলাম এসআই পদে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। ওই সময়ে ওই পদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। ২০১২ সালে ইন্সপেক্টর পদে তার পদোন্নতি হয়। একজন সাব ইন্সপেক্টর হিসেবে মনিরুল ৪ বছর ৮ মাস দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় কাজ করেছেন। এই সময়ে তিনি বসিলায় ৪ কাঠা জমির উপর আট কাঠা বাড়ি নির্মাণ করেন।
‘ঢাকায় ওসির আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হয়। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে সরকারি একটি সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে মনিরুল ইসলাম অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।
ব্যারিস্টার সুমনের মতে, বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে-ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওসি ওই অবৈধ সম্পদ গড়েছেন।
দুদকে দেওয়া চিঠিতে আরও বলা হয়, ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা মনিরুল বেতন ২০ হাজার টাকা এবং সাকুল্যে ৫০-৭০ হাজার টাকা পান। মনিরুল যে বেতন পান এর তুলনায় তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ অনেক বেশি।
খবরে বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে মনিরুল মোহাম্মদপুর এলাকায় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্পত্তি দখল করেছেন। পুলিশ বিভাগের সূত্র মতে দায়িত্বে অবহেলা, অসাদরচারণসহ বিভিন্ন অভিযোগে মনিরুলের বিরুদ্ধে একাধিক বার বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট ‘ঢাকায় ওসির আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে ওই দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ঢাকায় আটতলা বাড়ি করেছেন। বানাচ্ছেন আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে তার রয়েছে চারটি প্লট। বাড়ি, প্লটসহ এই বিপুল সম্পদের মালিক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরকারি একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে পত্রিকাটির অনুসন্ধানে ওসি মনিরুলের এসব অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সূত্র বলছে, যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তার সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।
পুলিশের একজন পরিদর্শক হয়ে ওসি মনিরুল কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশ বিভাগে আলোচনা চলছে। বর্তমানে তিনি নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা স্কেলে সাকল্যে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন পান। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এই সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
এমএ/এমএমএ/