ওসির ৮ তলা বাড়ি: হাইকোর্টে ব্যারিস্টার সুমনের রিট
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলের অভিযোগ এবং আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদের অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বুধবার (১০ আগস্ট) এ রিট দায়ের করেন।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির উপর শুনানি হতে পারে।
জনস্বার্থে করা এই রিটে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) ওসি মনিরুল ইসলামের আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ ও মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলের অভিযোগ হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়।
তখন আদালত দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, এ বিষয়ে অবশ্যই অনুসন্ধান হওয়া উচিত।
পরে আদালত তদন্ত চেয়ে ব্যারিস্টার সুমনকে একটি আবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে বলেন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, বিষয়টি আদালতের নজরে আনা দরকার। দুদকের তদন্তের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলা। আইনজীবী বলেন, দেশে অসংখ্য সৎ পুলিশ অফিসার রয়েছে। কিন্তু এই ওসির মতো যদি সবাই এত সম্পদ বানান, তাহলে সৎ অফিসার যারা, তারা মনে অনেক বেশি কষ্ট পাবেন। এর ফলে দেশে আর সৎ অফিসার নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, এভাবে অসৎ অফিসাররা যদি ট্রেন্ড তৈরি করেন, তাহলে সৎ অফিসাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। এজন্য বিষয়টি আদালতের নজরে নিয়ে এসেছি। আদালত শুনেছেন। শুনে আদালত বলেছেন, এটা তো ঠিক না।
তখন আদালত দুদকের আইনজীবীকে ডেকেছেন। দুদকের আইনজীবীও বলেছেন, এটা খুবই হুমকিস্বরূপ; এটা হতাশাজনক। তখন আদালত আমাকে পিটিশন নিয়ে যেতে বলেছেন, বলেন সুমন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট ঢাকায় ওসির আটতলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদ’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ঢাকায় আটতলা বাড়ি করেছেন। বানাচ্ছেন আরেকটি ডুপ্লেক্স বাড়ি। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে তার রয়েছে চারটি প্লট। বাড়ি, প্লটসহ এই বিপুল সম্পদের মালিক ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম। রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সরকারি একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে পত্রিকাটির অনুসন্ধানে ওসি মনিরুলের এসব অবৈধ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে পুলিশ সূত্র বলছে, যতটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, তার সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি।
পুলিশের একজন পরিদর্শক হয়ে ওসি মনিরুল কীভাবে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা নিয়ে পুলিশ বিভাগে আলোচনা চলছে। বর্তমানে তিনি নবম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা স্কেলে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা বেতন পান। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এই সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন মনিরুল ইসলাম, যখন এই পদটি তৃতীয় শ্রেণির ছিল। ২০১২ সালে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হন। প্রায় ৩০ বছরের চাকরিজীবনে বেশির ভাগ সময় ঢাকা রেঞ্জে ছিলেন।
এমএ/আরএ/