দুদক: জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় প্রকাশ
ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় পাটকল শ্রমিক জাহালমকে জড়ানোর ঘটনায় তাকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশিদ আলম খান রবিবার (৭ আগস্ট) এই তথ্য জানান। ৮৮ পৃষ্ঠার এই রায়ে দুদককে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়েছে, কমিশনের তদন্ত কর্মকর্তা যথাযথভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। তদন্ত রিপোর্টেও এটা উঠে এসেছে। তবে সব দেখে মনে হয়েছে তার কোনো খারাপ উদ্দেশে ছিল না। এখানে দুদকের ৩১ ধারা (সরল বিশ্বাসের ভুল) প্রযোজ্য। যদিও তারা অদক্ষ্য ও অযোগ্য। কিন্তু আমরা ওই অফিসারদের প্রতি ক্ষতিপূরণ আরোপ করছি না। এখানে সালেকের স্থলে জাহালমকে জড়ানোর কোনো উদ্দেশ্য দেখছি না।
রায়ে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আইন ও বিধি অনুসারে তাদের তদন্ত কার্যক্রম চালাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো মামলায় কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের ভুলভাবে যেন না জড়ানো হয় সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৩৩ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে/স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া রুলও জারি করেন আদালত। পরে একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছেন। আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করে।
পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সব ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।
হাইকোর্ট ২০২০ সালের ১৭ এপ্রিল জাহালমকাণ্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে এসব মামলায় দুদক, ব্র্যাক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।
২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রুলের ওপর শুনানি সম্পন্ন হয়। পরে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে ব্র্যাক ব্যাংককে রায়ের অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেন। টাকা পরিশোধ করে এক সপ্তাহ পর রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ ঘটনায় দুদকের পদক্ষেপ নিয়ে উচ্চ আদলত বলেন, দুদকের আইনজীবী প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে-এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করে ১১জনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, তদন্ত রিপোর্টে দেখা যায় ,বিশেষত ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সালেকের স্থলে জাহালমকে এনেছে। তাদের এ কার্যক্রম তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুলপথে পরিচালিত (মিসগাইড) করেছে। আর তারা ইচ্ছা করে এ কাজ করেছে।
এমএ/এমএমএ/