রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা: বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট
রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনাগুলোর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। রিটে আইনসচিব ও রেলসচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাপস কান্তি বল বুধবার (৩ আগস্ট) এই রিট আবেদন করেন।
রিটে সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জে রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
রেলের টিকিট নিয়ে অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি আন্দোলন করা মহিউদ্দিন রনির পক্ষে এই রিট করেন আইনজীবী। রিটে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতিকে প্রধান করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিট করার পর গণমাধ্যমকে আইনজীবী তাপস কান্তি বল বলেন, আজ রিট দায়ের করার পর আবেদনটি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে শুনানির জন্য উপস্থাপন করেছিলাম। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়ার নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ আবেদনটি শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এখন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করব।
সেভ দ্য রোড নামে একটি সংগঠনের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সাত মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেলপথে ছোট-বড় এক হাজার ৫২টি দুর্ঘটনায় ১৭৮ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন এক হাজার ১৭০ জন। এসব প্রাণহানির মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়ায় রেলপথে দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনও রয়েছেন।
গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গেটম্যান সাদ্দাম হোসেনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে রেলপথের এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগই গেটকিপারদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে হয়েছে বলে জানানো হয়। ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ১৮টি ইলেকট্রনিক্স গণমাধ্যম, ২২টি নিউজ পোর্টাল ও সারাদেশে সেভ দ্য রোড-এর বিভিন্ন শাখার স্বেচ্ছাসেবীদের তথ্যর ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৬টি। এসব দুর্ঘটনার ১৪ জন নিহত এবং ৫২ জন আহত হয়েছেন। ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪১টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১১১ জন, নিহত হয়েছে ২৭ জন। ১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ২২২টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৮৬ জন, নিহত হয়েছেন ৩১ জন। ১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে ১১২টি। আহত হয়েছে ১৬৬ জন, নিহত হয়েছে ৪২ জন। মে মাসে আহত ২২১ জন, নিহত হয়েছে ২৩ জন; দুর্ঘটনা ঘটেছে ২১২টি।
জুন মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৯৭টি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে ১৭২ জন। নিহত হয়েছেন ১৭ জন। আর জুলাই মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৪২টি। ঈদুল আজহার ঈদযাত্রাসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছে ২৩২ জন, নিহত হয়েছে ২৪ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেলের দুই হাজার ৮৫৬টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ এক হাজার ৩৬১টি। সে হিসাবে প্রায় ৪৮ শতাংশ অবৈধ। আর ৩৩টি ক্রসিং কে বা কারা ব্যবহার করছে, তা কেউ জানে না। এ ছাড়া বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর মধ্যে ৬৩২টিতে গেটকিপার নেই। অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোতে যেমন গেটকিপার নেই, নেই কোনো সুরক্ষা সরঞ্জামও।
এমএ/এসএন