অবৈধ সম্পদ: সেলিম খানের বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি টাকার মামলা
চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম খানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাড়ে ৩৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করে কমিশন। এ ছাড়া মামলায় প্রায় ৬৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগও আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ সংস্থাটির সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বাদী হয়ে এই মামলা করেন। দুদকসূত্রে সোমবার (১ আগস্ট) এই তথ্য জানা গেছে।
দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে রবিবার (৩১ জুলাই) মামলা অনুমোদন হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সম্মেলনে সচিব বলেন, সেলিম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কমিশনের অনুমোদনক্রমে তার বরাবর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করা হয়। এরপর সম্পদ বিবরণী দাখিল করলে তার দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাই শেষে ৬৬ লাখ ৯৯ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তাছাড়া কমিশনের অনুসন্ধানে ৩৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার ১১৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা রুজুর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম খানকে গত ২৬ এপ্রিল মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস ৬০ দিনের জন্য বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। পরে পুনরায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ান হয়।
অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সেলিম খান ও তার স্ত্রী শাহানারা বেগমের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ দিয়েছিল কমিশন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেলিম খানের আয়কর বিবরণীসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই শেষে তার পারিবারিক ব্যয়ের হিসাব পাওয়া যায় ৩৪ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রাপ্ত বেতন-ভাতা ও ঋণসহ তার মোট আয় পাওয়া যায় ৬১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দেওয়া হয়।
তাছাড়া গত ৬ এপ্রিল দুর্নীতির মাধ্যমে অগাধ সম্পত্তি অর্জন বিষয়ে চাঁদপুরের লক্ষ্মীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যাচাইয়ে দুদকের সহকারী পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সা’দাৎ এর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান চালায়। অভিযানকালে দুদকের টিম চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মৌজায় চাঁদপুর-হাইমচর সড়কের পাশে মেঘনা নদী থেকে ৮০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত জমি সরেজমিন পরিদর্শন করে।
পরে ২১ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে জুলাই মাসের প্রথমে চাঁদপুরে অভিযান চালায় দুদক এনফোর্সমেন্ট। চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্যের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখিয়ে ১৩৯টি উচ্চমূল্যের দলিল কারসাজির মাধ্যমে সরকারের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা করেছিলেন সেলিম খান। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় সেটা আর হয়নি। যদি তিনি সফল হতেন তাহলে সরকারের অতিরিক্ত ৩-৪ শ’ কোটি টাকা লোকসান হতো। কিন্তু সেটা হয়নি। তাছাড়া মেঘনা-পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন তিনি। এনফোর্সমেন্ট টিম এ বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। পরে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমএ/আরএ/