সাংবাদিক নির্যাতন: ডিসির বিরুদ্ধে রিটের নথি গায়েব
সাংবাদিক নির্যাতনে অভিযুক্ত এবং কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনসহ চারজন কর্মকর্তার পোস্টিংয়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়েছিল। ওই রিটের নথি পাওয়া যাচ্ছে না।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৭ জুলাই) আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে একটি চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়েছে, গত ১৪ জুন হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ৩৫ নম্বর কোর্টে ১১৪ নম্বর সিরিয়ালে রিটটি (৬৭৮৫/২০২১) শুনানির জন্য আসে। পরবর্তীতে রিটটি গত ২১ জুন একই আদালতে ১০০ নম্বর সিরিয়ালে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। কিন্তু রিট পিটিশনের মূল ফাইল সংশ্লিষ্ট সেকশনে খুঁজে না পাওয়ায় আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। বিষয়টি গত ২১ জুন আদালতে উপস্থাপন করা হলে আদালত রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে আবেদন করতে নির্দেশ দেয়। এজন্য আজ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের নামে জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে (১৪ মার্চ) একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে বাড়ি থেকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায় জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এরপর তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার হুমকি দিয়ে জেলা প্রশাসনে নিয়ে বিবস্ত্র করে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। পরে তার কাছে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়ার অভিযোগ এনে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়ে মধ্যরাতেই জেলা হাজতে পাঠানো হয়। এ ঘটনা গণমাধ্যমগুলো তুলে ধরলে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
পরেরদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনায় পরদিন ঘটনাস্থলে যান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। তার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন, আরডিসি নাজিম উদ্দিন, সহকারী কমিশনার রিন্টু বিকাশ চাকমা ও এনডিসি এস এম রাহাতুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
পরবর্তীতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় কার্যধারা শুরু করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যার ধারাবাহিকতায় সুলতানা পারভীনকে দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) স্থগিত, এনডিসি রাহাতুল ইসলামের তিনটি ইনক্রিমেন্ট কর্তন, আরডিসি নাজিম উদ্দিনকে নিম্নধাপে নামিয়ে দেওয়া এবং রিন্টু বিকাশ চাকমাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। যদিও রিন্টু বিকাশ চাকমার বিষয়টির এখনও প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। তবে অন্যদের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। তাদের মধ্যে এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল ডিসি অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়। পরে এসব পোস্টিংয়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টদের একটি আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে নোটিশের জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
গত ২৩ আগস্ট হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় নির্যাতনের শিকার মো. আরিফুল ইসলাম রিগান এ রিট দায়ের করেন। পরে আইনজীবীরা গণমাধ্যমকে জানান, ওই চারজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। সে মামলায় তারা এখনো জামিন নেননি। ফলে আইনের দৃষ্টিতে তারা এখনো পলাতক। অথচ তারা ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে বরখাস্ত না করে একজনকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে এবং অন্য তিনজনকে পোস্টিংয়ের চেষ্টা চলছে। যা আইন বহির্ভূত। তাই একজনের পোস্টিংয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং মামলার তিন আসামিকে যেন পোস্টিং দেওয়া না হয়, সে কারণেই হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়া সত্ত্বেও সাবেক এনডিসি রাহাতুল ইসলামকে বরিশাল ডিসি অফিসে দেওয়া পোস্টিং (সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট) কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
আদেশে একই ফৌজদারি মামলার অপর তিন আসামিকে পোস্টিং না দেওয়ার বিষয়ে বিরত থাকতে বিবাদিদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতেও রুল জারি করে আদালত।
আদেশে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের জন্য সরকারের পূর্বানুমিত নেওয়ার বিধানকে কেন, অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতেও রুল জারি করে আদালত। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব রুল জারি করে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান।
গত ২১ জুন সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় করা ফৌজদারি মামলায় পলাতক আসামি সিনিয়র সহকারী সচিব বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন হাইকোর্টে উপস্থিত হয়ে তার পদায়ন স্থগিতাদেশ না করতে আবেদন জানান।
এমএ/