সাবেক ডিআইজি মিজানের জামিন মেলেনি
ফাইল ছবি
অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় জামিন পাননি পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান। সোমবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।
তবে ঘুষের মামলায় দণ্ডিত সাবেক এই কর্মকর্তার মামলাটির বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতকে এ নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মাহবুব শফিক। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
আদালতের আদেশের পর আইনজীবী মাহবুব শফিক জানান, গত এপ্রিলে এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। তখন ওই আবেদনে বিরোধিতা করে দুদক শুনানিতে বলেছিল সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে থাকা মামলাটির বিচারকাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ২৬ এপ্রিল আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছিল। কিন্তু মামলাটির বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় গত সপ্তাহে আবার আবেদন করা হয়। আদালত জামিন না দিয়ে মামলাটির বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৪ জুন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩ কোটি ৭ লাখ ৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মিজানসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
দুদকের করা মামলায় ডিআইজি মিজানসহ অন্য আসামিরা হলেন- তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না ওরফে রত্না রহমান, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগ্নে মাহমুদুল হাসান। মাহমুদুল রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় উপ-পরিরদর্শক (এসআই) ছিলেন।
২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আসিফুজ্জামান এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি মিজানুর রহমান তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২৪ লাখ ২১ হাজার ২২৫ টাকায় শুলশান-১ এর পুলিশ প্লাজা কনকর্ডে ২১১ বর্গফুট আয়তনের একটি দোকান বরাদ্দ নেয়। মিজানুর রহমান নিজে নমিনি হয়ে ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর একটি ব্যাংকে এফডিআর অ্যাকাউন্ট করে ৩০ লাখ টাকা জমা করেন। দুদক অনুসন্ধান শুরু করলে তিনি টাকা ভাঙিয়ে সুদে আসলে ৩৮ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭ টাকা তুলে ফেলেন।
আরও অভিযোগ করা হয়, মিজানুর রহমান তার স্ত্রী রত্না ২০১১ সালে কাকরাইলে ১৭৭৬ বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক ফ্ল্যাট কিনে চুক্তিনামা করে বিভিন্ন সময় ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ টাকা নির্মাণ কোম্পানিকে পরিশোধ করেন। পরে ২০১৬ সালে ফ্ল্যাটটি ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানের নামে দলিল রেজিস্ট্রি করেন।
মিজান এ মামলায় ২০২১ সালের ১ জুলাই হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করলে তা নাকচ হয় এবং হাইকোর্ট তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। এরপর ৪ জুলাই তার ভাগ্নে মাহমুদুল হাসানকেও জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এক নারীকে জোর করে বিয়ের পর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় মিজানুর রহমানকে। তার বৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলার মধ্যেই দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ জুলাই আরেকটি মামলা হয়। চলতি বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে ডিআইজ মিজানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করার পর গত ১৩ এপ্রিল দুই মাসের জামিন পান তিনি। এরপর জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয় তার।
এমএ/এসজি/