নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন বোয়ালমারীর ইউএনও
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে সোমবার (২৫ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতের নোটিশ জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় এ সতর্কতা পেলেন ইউএনও।
আদেশে একই ঘটনায় নাজির উকিল মিয়াকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন আদালত। তাকে আরও সতর্ক হয়ে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালতে ইউএনও মো. রেজাউল করিমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মাহবুব শফিক। আর নাজির উকিল মিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক।
গত ২১ জুন আদালতের নোটিশ জারিকারকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিমকে ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, আপনি একটি পক্ষ নিয়ে যে আচরণ করেছেন তা সভ্য রাষ্ট্রের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
শুনানিতে আদালতের নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়া নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তখন আদালত বলেন, আপনাকে ক্ষমা করলে আমরা আটকে যাব। আদালত সবার ওপরে। আদালতের আদেশ সবার মানতে হয়। আপনি আদালতের আদেশ মানেননি। আদালতের সমন নিয়ে নোটিশ জারিকারকরা আপনাদের কাছে গিয়েছিল। আপনার উচিত ছিল তাকে ধন্যবাদ দেওয়া। অথচ কী দুর্ব্যবহার না করলেন! কত অজুহাত দেখালেন! আপনি যে আচরণ করলেন তা সভ্য রাষ্ট্রে কলঙ্ক লেগে গেল। আপনি একটা ছোট বিষয় হ্যান্ডেল করতে পারেন না! কীভাবে জনসেবা করবেন? একটি কথা মনে রাখবেন আইন আদালত আছে বলেই আপনি সম্মান পান। আপনি যদি আইন না মানেন আপনাকে কেউ মানবে না।
রেজাউল করিমকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি নিজের ভবিষ্যৎ নিজে নষ্ট করেছেন। আদালত অবমাননার ঘটনায় আদালতে আসতে হয়েছে আপনাকে। আপনার ক্যারিয়ারে একটি স্পট পড়ে গেল। আমরা যদি একটি লাইন লিখে দিই আপনার ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাবে।
হাইকোর্ট আরও বলে, আদালতের জারিকারকের সঙ্গে আপনাদের দুর্ব্যবহারের ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। সাধারণ মানুষ কী ভাবছে জানেন? মানুষ ভাবছে বিচার বিভাগ আর নির্বাহী বিভাগের মধ্যে মারামারি লেগে গেছে। এটা শোভনীয় নয়। বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতে হবে।
নাজির উকিল মিয়াকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি মূল অপরাধী। আপনি সিনক্রিয়েট করেছেন। খুব খারাপভাবে মিসগাইড করেছেন।
আইনজীবী শফিক আহমেদকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, আপনি আইনমন্ত্রী ছিলেন। একজন সম্মানিত ব্যক্তি। দুর্ভাগ্যবশত আজ এ মামলায় আপনি এসেছেন।
ইউএনওকে পরে আদালত বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের আচরণ করবেন না। আপনার দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি নজর রাখবেন। আদালতকে সম্মান না করলে আপনি কখনও সম্মান পাবেন না।
পরে আদালত ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। আদেশে তাদের বিরুদ্ধে জারি করা আদালত অবমাননার রুলের আদেশের জন্য আগামী রবিবার দিন ধার্য করে।
আদালতে ইউএনও-নাজিরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
উল্লেখ্য গত ৭ জুন আদালতের নোটিশ জারিকারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বিচারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও নাজির উকিল মিয়াকে তলব করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেন আদালত। ওই দিন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় উপস্থিত ছিলেন।
এমএ/এসএন