সোহেল চৌধুরী হত্যা
কেস ডকেট জমা দিতে আরও সময় চাইলেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার কেস ডকেট জমা দিতে আদালতের কাছে আরও সময় চাইলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জাকির হোসেনের আদালতে সময় চেয়ে এই আবেদন করেন তিনি। আদালতে উপস্থিত হয়ে বুধবার (২০ জুলাই) এই আবেদন করেন পুলিশ কর্মকর্তা।
কেস ডকেট হলো মানচিত্র, সূচিপত্র, রাষ্ট্রপক্ষের ১৬১ ধারায় জবানবন্দির নথিসহ মামলার অন্যান্য কাগজপত্র। ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অফিস থেকে ২০০৫ সালের ২ জুন এ মামলার কেস ডকেট নিয়ে যান ফরিদ উদ্দিন। পরে কেস ডকেট জমা না দেওয়ায় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি।
ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউর (পিপি) সামছুল হক বাদল জানিয়েছেন, আদালত আগামী ১, ২ ও ৩ আগস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছে।
এর আগে ৩ জুলাই পিপি আব্দুল্লাহ আবু, ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউর সামছুল হক বাদল ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পীর সমন্বয়ে ২০ জুলাই আদালতে কেস ডকেট উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিল একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক জাকির হোসেন।
এদিন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরকে কেস ডকেটে যা আছে, তা লিখিতভাবে দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন তারা তা দাখিল করেনি। এজন্য বিচারক তাদের কেস ডকেট সমন্বয় করে ২০ জুলাই উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
গত ৩০ মে ফরিদ উদ্দিনকে কেস ডকেট দাখিলের জন্য শেষবারের মতো সময় দিয়েছিলেন আদালত। তখন তাকে ১৫ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এদিন কেস ডকেট দাখিল না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। কিন্তু তিনি এদিন কেস ডকেট দাখিল করেননি। আদালতেও উপস্থিত হননি।
প্রসঙ্গত ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।
মামলাসূত্রে জানা যায়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান। আসামিদের মধ্যে আদনান খুনের পরপরই ধরা পড়েছিলেন।
পরের বছর ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
ওই বছরই আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সাল থেকে দীর্ঘ ১৯ বছর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটি স্থগিত ছিল। সবশেষ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে ফের মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন আদনান সিদ্দিকী, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, তারেক সাঈদ মামুন, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, ফারুক আব্বাসী, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী।
প্রসঙ্গত গত ৫ এপ্রিল রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে আশিষ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তখন তার বাসা থেকে ২২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪ বোতল সোডা ওয়াটার, একটি আইপ্যাড, ১৬টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, দুটি আইফোন ও নগদ দুই লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ৬ এপ্রিল রাতে আশিষ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন র্যাব-১০ এর ডিএডি জাহাঙ্গীর আলম।
এমএ/