ভূমির দণ্ডপ্রাপ্ত সেই কুতুবের ছয় মাসের জামিন
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) তার ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গুলশানে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্ধের মামলায় বিচারিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তিনি। বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী ছিলেন খুরশিদ আলম খান। আর কুতুব উদ্দিনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন।
এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনের আইনজীবী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কোন গ্রাউন্ডে আদালত তাকে জামিন দিয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ রায় না পেলে বলতে পারছি না। কোন গ্রাউন্ডে জামিন চেয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, তিনি অসুস্থতার কারণ উল্লেখ করে জামিন চেয়েছেন।
জানতে চাইলে ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, উনি অসুস্থ। তার চিকিৎসার প্রয়োজন। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র আমরা আদালতে দাখিল করেছি। তাছাড়া যে ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং তিনি দণ্ড পেয়েছেন, ওই ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য। এছাড়া তিনি মাত্র ৫ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। এসব বিষয় উল্লেখ করে আমরা তার জামিন চেয়েছি।
চিকিৎসার প্রয়োজন দেখিয়ে তিনি জামিন পেলেন। চিকিৎসার জন্যে কি তিনি বিদেশে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন? এই প্রশ্নের জবাবে আইনজীবী বলেন, এটি পূর্ণাঙ্গ রায় না পেলে বলতে পারছি না।
উল্লেখ্য ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে রাজধানীর গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দের মামলায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। গত ১৫ মার্চ নিম্ন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে কুতুবের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাইকোর্ট। এরপর কয়েকবার তিনি আদালতে জামিন আবেদন করে। আজ হাইকোর্ট তাকে ৬ মাসের জামিন দিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করে কমিশন। রাজধানীর সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেপ্তার করে কমিশনের উপপরিচালক মির্জা জাহিদুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল।
এর আগে রাজধানীর গুলশান থানায় কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন উপপরিচালক। কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট তার শ্বশুরসহ কয়েকজনের নামে বরাদ্দ করেন।
শ্বশুর ও স্বজনদের নামে অভিজাত এলাকা গুলশানে সরকারি ১০ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে নিজেই বসবাস করার অভিযোগে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল গুলশান থানায় কুতুবের বিরুদ্ধে মামলা করে কমিশন। ওই মামলায় কুতুবের সঙ্গে নাজমুল ইসলাম সাঈদকেও আসামি করা হয়। ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল কুতুবকে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়।
সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কুতুব গুলশানে রাজউকের অধিগ্রহণ করা সাড়ে ১৬ শতাংশ (১০ কাঠা) জমি শ্বশুর ও অন্যদের নামে ক্রয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করার বিষয়টি তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
প্রসঙ্গত ১৯৬৪ সালে গুলশান-বারিধারা আবাসিক মডেল টাউন সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ৩১ একর ১৪ শতাংশ জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে এই জমি নিচু জলাশয় হওয়ায় রাজউকের জন্য অলাভজনক হবে বলে ১৯৬৯ সালে এ কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
পরে রাজউক পুনরায় ওই ভূমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে এ নিয়ে দীর্ঘদিন মামলা চলে। এরপর ২০০৪ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে ওই ভূমির ওপর রাজউকের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
কমিশনের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, কুতুব ভূমি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থেকে প্রভাব বিস্তার করে কৌশলে এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে রাজউকের সম্পত্তি অবমুক্ত করে নাজমুল ইসলাম সাইদকে জমির ভুয়া আমমোক্তার সাজিয়ে এবং শ্বশুর আব্দুল জলিল মৃধাসহ আরও দুজনকে ক্রেতা সাজিয়ে নিজেই ১০ কাঠা জমি আত্মসাৎ করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কুতুবের শ্বশুর আব্দুল জলিল মৃধার নামে ওই জমি ক্রয় করা হলেও তিনি কখনই এই জমি ভোগদখল বা বসবাস করেননি। শুরু থেকেই কুতুব এই জমি ভোগদখল এবং সেখানে সপরিবারে বসবাস করছিলেন।
এমএ/এএস