আসামি ধরতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
দেশের সব থানা ও কারাগারে প্রকৃত আসামি শনাক্ত করতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু করার নির্দেশনা দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে তিনটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা তিনটি হলো-
১. বিদ্যমান ব্যবস্থার সঙ্গে সব থানায় আসামির হাতের আঙুল-তালুর ছাপ, চোখের আইরিশ স্ক্যানসহ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালুকরণ।
২. গ্রেপ্তারের পর আসামির সম্পূর্ণ মুখের ছবি (মাগশট ফটোগ্রাফস) ধারণ ও কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ।
৩. কারাগারে আঙুল-হাতের তালুর ছাপ, চোখের আইরিশ স্ক্যানের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালুকরণ।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারক) ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর এই রায় ঘোষণা করেন।
এ ছাড়া ওই দিন নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় করা মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর মোদাচ্ছের আনছারীর পরিবর্তে মো. জহির উদ্দিনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অবৈধ ঘোষণা করা হয় রায়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
মামলার শুনানিতে আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
রায় প্রকাশের তথ্য জানিয়ে শিশির মনির বলেন, আদালত পর্যবেক্ষণসহ রুলের চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছে। তাছাড়া আবেদনকারী জহির উদ্দীনের বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা অবৈধ ও আইন-বহির্ভূত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনজীবী শিশির মনির জানান, ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শাহজাদপুর গ্রামের আহসান উল্লাহর ছেলে মোদাচ্ছের আনছারীকে গ্রেপ্তার করে।
মোদাচ্ছের তার নাম-ঠিকানা গোপন করে নিজেকে নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার আজগর আলী মোল্লা বাড়ি মসজিদ সড়ক এলাকার মোহাম্মদ আব্দুল কাদেরের ছেলে মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নামে পরিচয় দেন। পরে ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর মোদাচ্ছের জামিনে মুক্তি পান এবং এরপর থেকেই পলাতক রয়েছেন। মোদাচ্ছের জহির উদ্দিন নামেই আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন।
এর আগে নাশকতার অভিযোগে ঢাকার খিলগাঁও থানায় করা মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর বসুরহাটের মোহাম্মদ জহির উদ্দিন নয় মর্মে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলার প্রকৃত আসামি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মোদাচ্ছের আনছারী ওরফে মোহাদ্দেস। প্রতিবেদনে বলা হয়, জহির উদ্দিনকে খিলগাঁও থানার মামলায় গ্রেপ্তারে পরোয়ানার আসামি হিসেবে চিহ্নিত করার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি প্রকৃতপক্ষে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামি নন, প্রকৃত আসামি মোদাচ্ছের আনছারী।
এই অবস্থায় করণীয় বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও রিট আবেদনকারী পক্ষের কাছে লিখিত ব্যাখ্যা জানতে চায় হাইকোর্ট। ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে উভয়পক্ষকে ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়। পরে ওই প্রতিবেদনের উপর শুনানি হয়।
২০২১ সালের ১০ মার্চ ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত করার আদেশ দেন।
২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল পুলিশ তদন্ত শেষে জহির উদ্দিনসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এরপর ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর জহিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
জহির উদ্দিন যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মূল আসামি মোদাচ্ছের আনছারীর ছবি ও শারীরিক বর্ণনাসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে জহির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট আবেদন করেন।
এমএ/এমএমএ/