গ্রামীণ টেলিকম
১২ কোটি টাকা ফিস নেওয়া আইনজীবীর ব্যাংক হিসাব জব্দ
গ্রামীণ টেলিকম থেকে মামলার সমঝোতার জন্য ১২ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠা আইনজীবী ইউসুফ আলীর ছয়টি ব্যাংক হিসাব জব্দ (অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ) করা হয়েছে।
রবিবার (৩ জুলাই) আইনজীবী নিজে এ বিষয়টি জানিয়েছেন।
ইউসুফ আলী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে দেখেছি আমার ছয়টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে।
গত ৩০ জুন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় রিটকারীদের আইনজীবীকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সমঝোতার বিষয়ে কথা হয় সংশ্লিষ্ট হাইকোর্ট বেঞ্চে। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেছে, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদের মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।
আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান। আর শ্রমিকদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ইউসুফ আলী।
আদালত বলেন, আদালতকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয় তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাই না কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক।
হাইকোর্ট বলেন, বাংলাদেশ কেন, উপমহাদেশের এমন কোনো আইনজীবী জন্ম নেয়নি যার ফিস ১২ কোটি টাকা হতে পারে।
আদালত গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবীর কাছে জানতে চায়, আপনি কত টাকা ফিস নিয়েছেন? তখন আইনজীবী বলেন আমি ২০ লাখ টাকা নিয়েছি। আদালত বলেন, আপনি তো ২০ লাখ নিয়েছেন, কিন্তু চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের আইনজীবী কীভাবে ১২ কোটি টাকা নেন। এরপর আদালত শ্রমিকরা কে কত টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন তার তালিকা দাখিল করার নির্দেশ দেন।
আদেশে এ সংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে বলা হয়েছে। এসময় আইনজীবী আদালতকে বলেন, চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত ৩৮০ কোটি টাকা পেয়েছেন। বাকি আট শ্রমিকের মধ্যে চার জন দেশের বাইরে থাকায় তাদের টাকা পরিশোধ করা হয়নি। আর চার জন শ্রমিক মারা যাওয়ায় তাদের ওয়ারিশ জটিলতা নিরসন না হওয়ায় অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন করা হয়। আবেদনকারী সংগঠনের আইনজীবী ইউসুফ আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আইনজীবী বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াইশ কোটি টাকার বেশি। পাওনার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গ্রামীণ টেলিকমে ২০২০ সালের বিভিন্ন সময়ে ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলে আসছে। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ কর্মী।
ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। এরপর ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শ্রমিকদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
গত ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। বিবাদীদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমনও জারি করেন আদালত। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান।
মামলাসূত্রে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়।
এমএ/আরএ/