নার্স বদলি বাণিজ্যের তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট
সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের নার্সদের বদলি বাণিজ্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে। এতে বদলি বাণিজ্যে লেনদেন করা শতকোটি টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে।
দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ চেয়ে রবিবার (১০ এপ্রিল) ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী এই রিট আবেদন করেন। রিটকারীরা হলেন মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, মোহাম্মদ কাওছার ও মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের।
আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে পেশাগতভাবে বদলি চাকরির একটি স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু সেই পেশাগত বদলি হয়ে উঠেছে নার্স পেশার একটি আতঙ্কের নাম। প্রত্যেক নার্সকে প্রতিবার বদলির জন্য গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর এই বদলি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এমনকি জড়িত আছেন তাদের আত্মীয়-স্বজনও।
রিট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে প্রায় চার হাজার নার্সকে বদলি করা হয়েছে। বদলির মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে একটি সংবাদপত্রে গত ৭ ফেব্রুয়ারি একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, বিশেষ একটি সিন্ডিকেট বাংলাদেশের নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি পেশাকে ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। এই নার্স বদলি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান মো. জামাল উদ্দিন নামে কুষ্টিয়ার এক ব্যক্তি। যিনি ওই অধিদপ্তরের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার আত্মীয় পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন এই সিন্ডিকেট।
প্রতিবেদন অনুসারে, অধিদপ্তরে সবকিছুই যেন তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে। বদলি বাণিজ্যের কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন জেলা থেকে তার এবং তার আত্মীয়-স্বজনের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণি পাস একজন ভবঘুরে জামাল উদ্দিনের এখন কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স, রয়েছে আলিশান বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ। স্ত্রীর নামে রয়েছে কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। সব মিলিয়ে এ যেন নার্স পেশাকে ধ্বংসের এক পাঁয়তারা।
রিটকারীদের দাবি, নার্সরা চাকরির ভয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের বিষয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ তোলার সাহস পান না। অথচ বিষয়টি বিভিন্ন মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের পরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ফলে নার্স পেশা পড়ছে হুমকির মুখে। হাজার হাজার নার্সের কাছ থেকে অবৈধভাবে ঘুষ বাণিজ্য করে নার্সদের ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
রিটে অবৈধ বদলি বাণিজ্য তদন্তে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, নার্সদের বদলি বাণিজ্যে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া এবং বদলি বাণিজ্যে লেনদেন করা ১০০ কোটি টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, নার্সিং এবং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের অভিযুক্ত মো. জামাল উদ্দিনকে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
এমএ/এএস