বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি অধিগ্রহণ: রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনবে আদালত
এক বীর মুক্তিযোদ্ধার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে আপিলের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ রবিবার (১০ এপ্রিল) এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু আহমেদ আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আর রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান বুলু।
রাজধানীর মগবাজারে আদ-দ্বীন হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার এই জমিসংক্রান্ত মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৫ সালে ওই জমির মালিক বীরেন্দ্রনাথ রায় তার সাড়ে ১৯ কাঠা জমির আম মোক্তার (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দিয়ে যান স্থানীয় সিরাজুল হককে। এর ২০ বছর পর ১৯৬৫-৬৬ সালে এ জমির খাজনা দিয়ে নিজের নামে নামজারি (মিউটেশন) করান সিরাজুল হক।
পরবর্তীতে খাজনা না দেওয়ায় ১৯৯৯ সালে সরকার এ জমির খাজনা দাবি করে মামলা করে। এ মামলার পর ওই বছরের ২৫ জুলাই সিরাজুল হক ২ হাজার ৭৯২ টাকা খাজনা পরিশোধ করে জমির ভোগ-দখল করতে থাকেন। পরে ২০০৮ সালে মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক।
পরে এ জমির খতিয়ান সংশোধন চেয়ে মামলা করে রাষ্ট্রপক্ষ। ২০০৯ সালের ২৩ জুন রমনা ভূমি অফিস এই জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ পাঠায়। ওই বছরেরই ১৫ নভেম্বর রমনা ভূমি অফিস থেকে আরেকটি নোটিশ পাঠানো হয় জমির মালিক বীরেন্দ্রনাথ রায়কে। এতে বলা হয়, বিসিএস (প্রশাসন) কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনুকূলে জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম ও সদস্যদের আবাসন সুবিধার জন্য স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশে এবং জনস্বার্থে জমিটি প্রয়োজন।
ওই নোটিশে জমির দাম উল্লেখ করা হয় ২ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৫২৯ টাকা। নোটিশের পরপরই জমি অধগ্রহণের গেজেটও জারি করা হয়। গেজেট জারির কিছুদিন পর জমির ভোগ-দখলকারী সিরাজুল হকের পরিবারকে উচ্ছেদ করে প্রশাসন। গেজেটটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে সিরাজুল হকের স্ত্রী মালেকা সিরাজ ও তার পাঁচ সন্তান রিট আবেদন করেন। রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১১ সালে গেজেট বাতিল ও জমি অধিগ্রহণ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি (লিভ টু আপিল) চেয়ে ওই বছরই আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। পরে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশের ওপর স্থিতাবস্থা দেয়। পরে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে ২০১২ সালে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এমএ/আরএ/