অর্থপাচার: ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে দুদকের আপিল

বিচারিক আদালতে পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান অর্থপাচারের অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছিলেন। ঘুষ লেনদেনের মামলায় তিন বছরের দণ্ড হলেও অর্থপাচার আইনের ৪ ধারায় খালাস পেয়েছেন তিনি।
খালাস দেওয়া এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এই তথ্য জানান।
আপিলের যৌক্তিকতা প্রশ্নে আইনজীবী জানান, অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের ৪ ধারায় খন্দকার এনামুল বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু মিজানুর রহমানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তাই এর বিরুদ্ধে দুদক আপিল করেছে।
উল্লেখ্য গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ মামলায় রায় দেন।
রায়ে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরকে আট বছর ও পুলিশের বরখাস্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া বাছিরকে ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
রায়ে এর মধ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মিজানকে দণ্ডবিধির ১৬১ ধারায় ও বাছিরকে দণ্ডবিধির ১৬৫(এ) ধারায় তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর মানি লন্ডারিং আইনের ৪ ধারায় বাছিরকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ৮০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাছিরের দুটি দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলে তাকে পাঁচ বছর দণ্ড ভোগ করতে হবে৷
পরে মিজানুর রহমান হাইকোর্টে ৩ বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। হাইকোর্ট তার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে। আর তার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ১৩ এপ্রিল বুধবার দিন ধার্য রেখেছে।
এদিকে খন্দকার এনামুল বাছির দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছে। তার বিষয়ে এখনো শুনানি হয়নি।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সালের ৯ জুন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে পরিচালিত দুর্নীতির অনুসন্ধান থেকে দায়মুক্তি পেতে দুদক পরিচালক বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন ডিআইজি মিজান। ঘুষ লেনদেন সংক্রান্ত কথোপকথন রেকর্ড করে ওই চ্যানেলকে দিয়েছিলেন মিজান। ডিআইজি মিজানও এ বিষয়ে নিজেই গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা থেকে বাঁচতে ওই অর্থ ঘুষ দেন বলে ডিআইজি মিজান দাবি করেন।
এ প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর দুদক সংস্থার সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখতকে প্রধান করে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ২০১৯ সালের ১০ জুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিচালক বাছিরকে দুদকের তথ্য অবৈধভাবে পাচার, চাকরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সর্বোপরি অসদাচরণের অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে কমিশন।
পরে ১৬ জুলাই দুদক পরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের দলনেতা শেখ মো. ফানাফিল্লাহ মানিলন্ডারিং আইনে সংস্থার ঢাকা-১ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই বছর ২২ জুলাই এনামুল বাছিরকে গ্রেফতার করে দুদকের একটি দল। সেই থেকে তিনি কারাগারে।
অন্যদিকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার ডিআইজি মিজানকে এ মামলায়ও গ্রেফতার করা হয়। এ মামলায় গত ২৩ ডিসেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের পক্ষে তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী শুনানি করেন। আর গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাছিরের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমানের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত ২৩ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করে।
এমএ/এমএমএ/
