যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে, নির্ধারক ফ্যাক্টর ‘ইলেকটোরাল কলেজ’
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। এবারকার নির্বাচনে বড় প্রশ্ন হলো- যুক্তরাষ্ট্র কি প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট পাবে, নাকি দ্বিতীয় মেয়াদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্ব অব্যাহত থাকবে? জনমত জরিপে উঠে এসেছে, ট্রাম্পের সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
সম্প্রতি আইওয়া অঙ্গরাজ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে পেছনে ফেলে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস। ২০১৬ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনে আইওয়ায় সহজ জয় পান ট্রাম্প। কিন্তু এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর এই অপ্রত্যাশিত অগ্রগতি নিঃসন্দেহে কমলার জন্য একটি আনন্দের বার্তা। বিশ্লেষকদের মতে, নারী ভোটারদের ব্যাপক সমর্থন এই এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জনপ্রিয়তার চেয়ে ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ ভোট বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি সাধারণ ভোটে নির্ধারিত হয় না; বরং জনগণের ভোটে নির্বাচিত ‘ইলেকটোরাল কলেজ’ প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। সারা দেশ থেকে ৫৩৮ জন ইলেকটোরাল সদস্য রয়েছেন, যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট হতে হলে প্রয়োজন ২৭০ ভোটের। তাই জনপ্রিয় ভোট বেশি পেলেও ইলেকটোরাল ভোটের কারণে প্রার্থী পরাজিত হতে পারেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ইলেকটোরাল ভোটের ক্ষেত্রে ট্রাম্পই এগিয়ে। বিশেষ করে নেভাডা, অ্যারিজোনা, মিনেসোটা, পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, এবং উইসকনসিন-এই গুরুত্বপূর্ণ ‘সুইং স্টেট’গুলোই মূলত নির্ধারণ করবে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরতে পারবেন কিনা।
সাম্প্রতিক ইতিহাসে, ২০০০ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী যথাক্রমে অ্যাল গোর এবং হিলারি ক্লিন্টন জনপ্রিয় ভোটে এগিয়ে থেকেও ইলেকটোরাল কলেজ ভোটে পরাজিত হন। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিন্টন ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ জনপ্রিয় ভোট পেয়ে ট্রাম্পের চেয়ে ২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছিলেন। তবুও ইলেকটোরাল কলেজে ২২৭ ভোট পেয়ে পরাজিত হন, যেখানে ট্রাম্প পান ৩০৪ ভোট। রিপাবলিকানদের ঘাঁটি টেক্সাস ছাড়াও পেনসিলভেনিয়া এবং নর্থ ক্যারোলাইনার মতো সুইং স্টেটগুলো ট্রাম্পের পক্ষে যাওয়ায় জয় নিশ্চিত হয়।
এবারের নির্বাচনে আগাম ভোটে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ ভোটপর্বে ইতোমধ্যেই ৭ দশমিক ৫ কোটি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যা মোট ভোটারের প্রায় ৫০ শতাংশ। গত নির্বাচনে ৬৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল, যা ছিল গত শতকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবারও আগাম ভোটের হার দেখে উচ্ছ্বসিত রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট-দুই দলই। রিপাবলিকানরা তাদের আগাম ভোটের সংখ্যা বাড়ায় সন্তুষ্ট, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের চেয়ে কমলা হ্যারিসের বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকা নিয়ে আশাবাদী।
আগামী ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, তবে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট এবারকার নির্বাচনের ফলাফলকে আকর্ষণীয় এবং অনিশ্চিত করে তুলেছে।