ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের ৩ শর্ত
ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে তিনটি শর্ত দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি।
স্থানীয় সময় সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে এক ফোনালাপে এসব শর্ত তুলে ধরেন তিনি। এ নিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ক্রেমলিন। বিবৃতি অনুসারে, ফোনালাপে মাখোঁকে পুতিন বলেন, ‘যদি রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট স্বার্থগুলো কোনও শর্ত ছাড়াই মেনে নেওয়া হয়, তাহলেই ইউক্রেন নিয়ে সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব।’
ফরাসি প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মাখোঁ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করে ইউক্রেনে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেন।’ তিনি ইউক্রেনে সব হামলা, বিশেষ করে বেসামরিক লোকজন, সড়ক ও অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি সম্মান জানাতে পুতিনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। মাখোঁর অনুরোধ রাখতে তার সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।
ওই টেলিফোন আলাপের পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে যে বিবৃতি প্রকাশ করা হয় তাতে স্পষ্ট যে যেসব যুক্তি ও দাবিতে ইউক্রেনের হামলার নির্দেশ পুতিন দিয়েছিলেন তা থেকে তার একচুল নড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
পশ্চিমাদের কাছ থেকে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞায় তিনি যে কোনও চাপ বোধ করছেন তার কোনো লক্ষণ অন্তত ওই বিবৃতিতে পাওয়া যায়নি।
ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়, পুতিন ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বলেছেন বোঝাপড়া একমাত্র সম্ভব যদি নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়ার বৈধ উদ্বেগ বিবেচনায় নেওয়া হয়।
রুশ বিবৃতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্ত্ব মেনে নিতে হবে, ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্তকরণের সমাধান মেনে নিতে হবে এবং ইউক্রেন যেন একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র থাকে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
ফরাসিদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সংঘাত যাতে আয়ত্তের বাইরে না চলে যায় তার জন্য প্রেসিডেন্ট মাখোঁ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেছেন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
এদিকে আজ ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভের ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসিলকিভে একটি তেলের ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে কিয়েভবাসীকে বিশেষ সতর্ক থাকার বথা বলেছে ইউক্রেন সরকার।
রাজধানী কর্তৃপক্ষ রাজধানীবাসীকে বিষাক্ত ধোঁয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে। কিয়েভের বাসিন্দাদের ঘরের জানালা ভালো করে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রুশ হামলার তৃতীয় রাতে কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠে। মধ্যরাতের আগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
পাঁচ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ যুদ্ধের ষষ্ঠ দিন। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/