হাইতিতে ১১ পুলিশ হত্যা, দেশজুড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাস
হাইতির রাজধানী পোর্ট-আউ-প্রিন্সে ব্যাপকভাবে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) অর্ধশতাধিক পুলিশ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের সহকর্মী অফিসারদের মেরে ফেলার প্রতিশোধ নিতে রাস্তায়, রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে ও পথগুলোর দখল নিয়েছে। প্রতিবাদকারীরা কালো টি-শার্ট পরে বেরিয়েছেন। তাদের জামাগুলোতে সাদা কালিতে পুলিশ শব্দটি লেখা। তারা দিনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরির বাসভবন আক্রমণ করেছেন। তবে গেটগুলোর ভেতরে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে জানা যায়নি। বাড়ির ভেতরে কয়েকটি গুলির শব্দও হয়েছে। তবে কেউ মারা গিয়েছেন বা আহত হয়েছেন নাকি তা জানা সম্ভব হয়নি।
এরপর আক্রমণকারী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকে এগিয়েছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী লাতিন আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর একটি সম্মেলন থেকে ফিরেছিলেন। তিনি আর্জেন্টিনা গিয়েছিলেন। এই ট্রাউসেইন্ট লুভেরট্রু বিমান বন্দরে টায়ার জ্বালিয়ে তারা ভেতরে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ভেতরে প্রধানমন্ত্রী হেনরি বিমান থেকে অবতরণ করে কূটনৈতিক লাউঞ্জে অবস্থান করছিলেন। তার রুমের ভেতরে ঝড়ের মতো প্রবেশ করা থেকে আক্রমণকারীদের পুলিশ ঠেকিয়ে দেওয়ার সময় তিনি একটি বক্তৃতা দেবার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষীরা পুরোপুরি ছড়িয়ে গিয়ে তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। বিকেলে তিনি তার সরকারী সেই বাসভবনে প্রবেশ করেছেন। তবে সেখানে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
পুলিশকে প্রতিরোধ করা আক্রমণকারীরা পুলিশের দ্য ন্যাশনাল পুলিশ সেন্ট্রাল কমান্ড অফিসের গেটেও টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিরোধ করেছেন। তারা তাদের নিহত সহকর্মীদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে উত্তোলন করেছেন।
গেল সপ্তাহে দ্যা ভিনটেল হোমে চক্রটি রাজধানীর পাশের শহরতলী পেটিয়েন ভিলে চারজন পুলিশ অফিসারকে হত্যা করেছে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) সাভিয়েন চক্রটি লিয়ানকোট শহরে আরো সাতজন পুলিশ অফিসারকে মেরে ফেলেছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এই পরিস্থিতিতে একজন ইউনিফর্ম পরা পুলিশ অফিসার সাংবাদিকদের তাদের নেতৃত্ব বদলের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা আন্দোলনকারীদের প্রতি যেমন সহানুভূতিশীল তেমনি মৃত পুলিশ অফিসারদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর দু:খ প্রকাশ করছি। আমরা হতাশ ও হতভম্ব হয়ে গিয়েছি এই কারণে যে চক্রগুলোর সঙ্গে অনেক পুলিশ অফিসারের যোগাযোগ এবং সংযোগ রয়েছে। ফলে ওরা দাঁড়িয়ে আছে এবং তাদের তারা কিছু বলছেন না। প্রায়ই পুলিশ অফিসাররা দায়িত্ব নিচ্ছেন না এবং আমরা মনে করি এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন।’
গতকাল ‘পরিস্থিতির চূড়ান্ত পরিণতির কারণ হলো, কয়েক বছরের হতাশা’ বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন পুলিশ অফিসার। তবে তিনি বলেছেন, ‘এই জন্য আমরা যেসব পুলিশ অফিসার প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরিকে নিরাপত্তা প্রদান করছেন, তাদের সবাইকে আমাদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসতে আমরা আহ্বান করছি। এই নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের একবারই সবার জন্য অবশ্যই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।’
তবে প্রধানমন্ত্রীর পাশে থাকা পুলিশ অফিসাররা জানিয়েছেন, তাদের আরও সাহায্য প্রয়োজন ও হাইতির গুন্ডাদের দলগুলোকে পাল্টা আক্রমণ করতে আরও সহযোগিতা দরকার।
হাইতির সাবেক সিনেটর মোয়িস জিন চার্লস দেশের উত্তরের কেপ-হাইতিয়েন থেকে টেলিফোনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি বৃহস্পতিবারের ঘটনাবলীর জন্য হেনরিকে দোষারোপ করছেন। চার্লস আরও বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অ্যারিয়েল হেনরি আগুন নিয়ে খেলছেন। আজ তার সরকারের অযোগ্যতা ও অদক্ষতার ফলাফল এলো।’
জাতিসংঘের মহাসচিবের হাইতিতে বিশেষ দূত হেলেন মাহা লা লিমে জানিয়েছেন যে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গতকাল বৃহস্পতিবার একটি জরুরী বৈঠকে বসেছে একটি পাল্টা তদন্ত দল হাইতিতে পাঠানোর জন্য, যারা গুন্ডাদের সশস্ত্র আক্রমণের বিপরীতে হাইতির পুলিশকে সাহায্য করতে পারবেন।
তিনি জানিয়েছেন, ‘এছাড়া দেশের জাতীয় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা গুন্ডাদের পরিকল্পিত ও সশস্ত্র হামলাগুলো বন্ধ করতে অযোগ্য ও অক্ষম হয়ে পড়বে।’ তবে কোনো দেশকে এই ধরনের বাহিনী পাঠানোর জন্য আগ্রহ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। জাতিসংঘে মার্কিন উপ-প্রতিনিধি রবার্ট উড গতকাল জানিয়েছেন, হাইতিতে সশন্ত্র হামলাগুলোতে জড়িতদের বিপক্ষে অনেকগুলো নতুন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তার দেশ কাজ করছে।
তিনি আরওঃ জানিয়েছেন, ‘মাকিন যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত লক্ষ্যবস্তুগুলোতে লক্ষ্য স্থির করছে। জাতিসংঘের মাধ্যমে হাইতিকে অশান্ত করে দেওয়ার বিপক্ষে যেগুলো কাজ করবে।’
জাতিসংঘে চীনের প্রতিনিধি জং জান দেশগুলোর প্রতি আবেদন করেছেন হাততিতে সন্ত্রাসকে দমানোর জন্য ও তাদের অনুৎসাহিত করতে ধাপে ধাপে যেন অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হয়।
ওএফএস/এএস