রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ
গ্যাস পাইপলাইন মেরামতের কথা বলে রাশিয়া ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি কোম্পানি গ্যাযপ্রম বলেছে, নর্ড স্ট্রিম ওয়ান গ্যাস পাইপলাইন দিয়ে গ্যাসের সরবরাহ শনিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
রাশিয়া এর আগে থেকেই ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছিল। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানায়।
অবশ্য রাশিয়া এমন অভিযোগ অস্বীকার করছে যে তারা জ্বালানি সরবরাহকে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
নর্ড স্ট্রিম ওয়ান পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য বারোশো কিলোমিটার। এটি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছের উপকূল হতে বল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে উত্তর-পূর্ব জার্মানি পর্যন্ত গেছে।
২০১১ সালে নর্ড স্ট্রিম ওয়ান চালু করা হয়েছিল। এই পাইপলাইন দিয়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১৭০ মিলিয়ন ঘন মিটার গ্যাস রাশিয়া থেকে জার্মানিতে পাঠানো যায়।
গত জুলাই মাসেও এই পাইপলাইন মেরামতের কথা বলে দশদিন বন্ধ রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি এটি দিয়ে মোট ক্ষমতার মাত্র বিশ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। এর কারণ হিসেবে রাশিয়া কারিগরি ত্রুটির কথা বলেছিল।
জার্মানির গ্যাস নেটওয়ার্কের রেগুলেটরি সংস্থার প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, গ্যাসের সরবরাহ সাময়িকভাবে যে বন্ধ রাখা হচ্ছে, তারা সেটির মোকাবিলা করতে পারবে, যদি রাশিয়া সামনের দিনগুলোতে আবার সরবরাহ চালু করে।
ইউরোপীয় নেতারা আশংকা করছেন, রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখছে যাতে করে বাজারে গ্যাসের দাম আরও বাড়ানো যায়। গত এক বছরে এমনিতেই গ্যাসের দাম বহুগুণ বেড়েছে।
ইউরোপে আসন্ন শীত মওসুমে জ্বালানির বিরাট সংকট হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহু দেশেই সরকারকে শত শত কোটি ডলারের ভর্তুকি দিতে হবে যাতে করে মানুষ জ্বালানির বিল পরিশোধ করতে পারে।
ফ্রান্সের জ্বালানি বিষয়ক একজন মন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ের রুনাচের রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে, তারা জ্বালানিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
রাশিয়ার গ্যাযপ্রম ফ্রান্সের একটি জ্বালানি কোম্পানিকে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করে দেওয়ার পর তিনি এই অভিযোগ করেন।
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণেই গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে কারণ এর ফলে রুশ অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে।
গত মে মাসে বেলারুশ ও পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছিলো রাশিয়া। এর মাধ্যমে জার্মানিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে গ্যাস পাঠাতো রাশিয়া।
এরপর জুনের মাঝামাঝিতে নর্ড স্ট্রিম ওয়ান এর মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ তিন চতুর্থাংশ কমিয়ে দিলে দিনে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র ৪০ মিলিয়ন কিউবিক মিটারে।
জুলাইয়ের শুরুতে নর্ড স্ট্রিম ওয়ান দশ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয় রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য। এরপর আবার চালু করার পরপরই বলা হয়েছে যে গ্যাযপ্রম সরবরাহ আরও বিশ ভাগ কমিয়ে দেবে।
এ খবরে ইউরোপে এক দিনের মধ্যেই গ্যাসের পাইকারি দাম দশ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল।
এমএমএ/