রাশিয়াতে যেসব ব্র্যান্ডের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা
তিরিশ বছর আগে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় তখন পশ্চিমা বড় বড় ব্র্যান্ড রাশিয়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। কোকা-কোলা ও ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ব্র্যান্ডের আগমনে একটি নতুন যুগের হয়েছিল রাশিয়ায়। রাশিয়ানরা লেভি জিন্স ও বিলাসবহুল পণ্যের আগ্রহী গ্রাহক হয়ে ওঠে।
এখন ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাপল, জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, এইচএন্ডএম এবং বারবেরিসহ কয়েকটি সংস্থার রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থপ্রদানের ধরন সীমিত হওয়া, দেশের বাইরে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাওয়ার উপর বিধিনিষেধ এবং ভবিষ্যতের দাম ব্যবসার পরিবেশকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে বলে জানিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
তেল এবং গ্যাস
ইউক্রেনে সংঘর্ষ শুরু হলে তাৎক্ষণিক চাপে পড়ে এনার্জি ফার্ম বিপি। কোম্পানিটি রাশিয়ান এনার্জি জায়ান্ট রোসনেফ্টের একটি বড় অংশের মালিক, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে এটি রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা করে। শেয়ারহোল্ডারদের পাশাপাশি সরকার ও জনসাধারণের চাপের কারণে শেল, এক্সনমোবিল এবং ইকুইনর তাদের রাশিয়ান বিনিয়োগ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেল রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাজপ্রম থেকে সরে আসার জন্য তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বলি দিতে হতে পারে। এজে বেলের পরিচালক রাস মোল্ড অবশ্য বলছেন, সংস্থাগুলো সঠিক কাজই করছে।
ইতিমধ্যে, টোটাল এনার্জি বলেছে যে তারা রাশিয়ায় নতুন বিনিয়োগ করবে না। তবে বর্তমান বিনিয়োগ বিক্রি করারও পরিকল্পনা নেই।
বিনোদন খাত
এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি ওয়ার্নার ব্রোস রাশিয়ায় নতুন চলচ্চিত্র মুক্তি দেওয়া স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মার্কিন মুভি নির্মাতা ডিজনি এবং সনিও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই পথে হেটেছে নেটফ্লিক্সও। কোম্পানিগুলো বলেছে, ইউক্রেনের মানবিক সঙ্কটের কারণে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রযুক্তি
অ্যাপল রাশিয়ায় সমস্ত পণ্য বিক্রি বন্ধ করেছে এবং অ্যাপল পে এবং অ্যাপল ম্যাপের মতো অন্যান্য পরিষেবা সীমিত করেছে। রাশিয়ায় অ্যাপলের আউটলেটগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কোম্পানিগুলো বলছে, তারা রাশিয়ার শাসন এবং ইউক্রেনে যা ঘটছে তার সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না। রাশিয়ায় ব্যবসা লাভজনক হতে পারে কিন্তু বাকি বিশ্ব আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া ফেসবুক-টুইটারের মতো কিছু প্রযুক্তি কোম্পানি রাশিয়ার মিডিয়া আউটলেটগুলোর প্লাটফর্ম থেকে পোস্ট করা সীমাবদ্ধ রেখেছে।
রিটেইল কোম্পানি
সুইডিশ ফ্যাশন জায়ান্ট এইচঅ্যান্ডএম রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারে আরও অনেক ব্র্যান্ড। যুক্তরাজ্যের ফ্যাশন ফার্ম বুহুও রাশিয়ায় পণ্য বিক্রি স্থগিত করার পাশাপাশি দেশটিতে তাদের ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের নাইকিসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলি কেবল বলেছে যে তারা রাশিয়ার গ্রাহকদের কাছে পণ্য সরবরাহ করবে না। মস্কোর রেড স্কয়ারে একটি ফ্ল্যাগশিপ স্টোর রয়েছে বারবেরির। এই কোম্পানিটিও তাদের সরবরাহ স্থগিত রেখেছে রাশিয়ায়।
২০২১ সালে রাশিয়া ছিল পঞ্চম বৃহত্তম ইউরোপীয় খুচরা বাজার, যার মূল্য ৩২৭ বিলিয়ন ইউরো। অবশ্য অনেকগুলো ব্র্যান্ড পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে।
গাড়ি
জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (জেএলআর), জেনারেল মোটরস, অ্যাস্টন মার্টিন এবং রোলস-রয়েস গাড়ি নির্মাতাদের মধ্যে রয়েছে যারা সংঘর্ষের কারণে রাশিয়ায় যানবাহন সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। স্পেয়ার পার্টস প্রস্তুতকারক জেসিবিও দেশটিতে সমস্ত ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করে দিয়েছে।
বিশ্বের দুটি বৃহত্তম কার্গো শিপিং কোম্পানি এমএসসি এবং মায়েরস্ক, খাদ্য, চিকিৎসা এবং মানবিক সরবরাহ সরবরাহ ব্যতীত রাশিয়ায় যাওয়া এবং আসা স্থগিত রেখেছে।
কিছু গাড়ি নির্মাতা যেমন ভক্সওয়াগন এবং বিএমডব্লিউ ইউক্রেন থেকে যন্ত্রাংশের অভাবের কারণে কিছু ইউরোপীয় প্ল্যান্টে উৎপাদন স্থগিত রেখেছে।
কনাসালট্যান্সি ফার্ম
যুক্তরাজ্যের কেপিএমজি তার ক্লায়েন্টদের বিষয়গুলো ‘পর্যালোচনা’ করছে। ইওয়াই বলেছে যে তারা নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে। তবে ইওয়াই কোনও ক্লায়েন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় কিনা তা নিশ্চিত করেনি।
কিছু আইনি এবং পরামর্শক সংস্থাও বলেছে যে তারা পরিস্তিতি পর্যালোচনা করছে। ম্যাককিন্সির একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে লিখেছেন যে তারা রাশিয়াতে আর কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেবে না।
কিন্তু ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুসারে, ম্যাককিনসে সেই নিষেধাজ্ঞা রোজনেফ্টের মতো রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত সংস্থাগুলিতে প্রযোজ্য হবে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করেনি। ম্যাককিন্সির ওয়েবসাইট অনুসারে, এটি ৩০টি বৃহত্তম রাশিয়ান কোম্পানির মধ্যে ২১টিকেই পরিষেবা দেয়। সূত্র: বিবিসি
আরইউ/এমএমএ/