যে কারণে বিয়ের ৫০ বছর পর স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করলেন দম্পতি
জ্যান ও ইলস। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ৫০ বছর পর্যন্ত ছিলেন একে অপরের সঙ্গী। অবশেষে জীবনের মায়া ত্যাগ করে স্বেচ্ছায় একসঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন তাঁরা। ওই ডাচ দম্পতির নাম জ্যান (৭০) ও ইলস (৭১)। জুনের শুরুর দিকে দুই চিকিৎসকের সহযোগিতায় তাঁরা স্বেচ্ছায় মারা যান।
শনিবার (২৯ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, জুনের শুরুতে একসঙ্গে এই বৃদ্ধ দম্পতি মৃত্যুবরণ করেন। আর এই স্বেচ্ছা মৃত্যুতে তাদের সহযোগিতা করেন দুজন চিকিৎসক। মৃত্যুর জন্য তাদের দুজনকে দেওয়া হয় প্রাণনাশী ওষুধ।
নেদারল্যান্ডসে স্বেচ্ছায় মৃত্যু একটি বৈধ পন্থা। ২০২৩ সালে নেদারল্যান্ডসে ৯ হাজার ৬৮ জন মানুষ স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেন যা সারা বছরে মোট মৃত্যুর প্রায় ৫ শতাংশ। তাদের মতোই এই দম্পতিও বেছে নেন স্বেচ্ছায় মৃত্যুর পথ। কিন্তু কেন তারা মৃত্যুকে বেছে নেন, জীবনের শেষ বেলায় গণমাধ্যমকে জানিয়ে গেছেন এই দম্পতি। মৃত্যুর তিনদিন আগে তারা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির লিন্ডা প্রেসলির সঙ্গে কথা বলেছেন।
তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ পাঁচ দশক দুজন একসঙ্গে ছিলেন। তবে তারা এমন এক দম্পতি যারা এক জায়গায় সবসময় থাকতে পছন্দ করতেন না। এ কারণে তারা তাদের সংসার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন নৌকায়। আর জীবনের শেষ ভাগে এসে একটি ভ্যানে থাকতেন। যেহেতু নৌকায় থাকতেন তাই নৌকা দিয়ে পরিবহণের ব্যবসায়ও নেমেছিলেন স্বামী জ্যান।
কিন্তু ভারী কাজ করতে করতে জ্যানের একটা সময় পিঠের ব্যথার সৃষ্টি হয়, যা তাকে পুরো জীবনজুড়ে কষ্ট দিয়েছে। ২০০৩ সালে এই ব্যথার জন্য একটি অস্ত্রোপচারও করেছিলেন তিনি। কিন্তু এতে কাজ হয়নি। এদিকে তার স্ত্রী তার শিক্ষকতা পেশা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু জ্যান যখন বুঝতে পারলেন যে, ওষুধ খেয়ে তার খুব একটা কাজ হচ্ছে না; তখন তিনি তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেন।
জ্যান জানিয়েছেন, এর মধ্যেই ২০১৮ সালে তার স্ত্রী ইলস শিক্ষকতা পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তার অসুস্থতার মধ্যেই ২০২২ সালে তার স্ত্রীর মস্তিস্কের কঠিন অসুখ ‘স্মৃতিভ্রমের’ সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে তার সেরে উঠার কোনো সম্ভাবনা ছিল না। আর তার স্ত্রী ইলসের স্মৃতিভ্রমের সমস্যা দেখা দেওয়ার পর তারা একসঙ্গে দুজন মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত নেন। এ ব্যাপারে নিজেদের একমাত্র ছেলের সঙ্গেও কথা বলেন তারা।
তাদের ছেলে জানান, জুনের ৩ তারিখ ছিল তাদের মৃত্যুর দিন। মৃত্যুর আগে ওই দম্পতি ২ ঘণ্টা একসাথে একান্ত সময় কাটিয়েছেন। তারা তাদের জীবনের নানা স্মৃতি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় তারা গানও শুনেন। তিনি আরও জানান, তাদের জীবনের সর্বশেষ আধা ঘণ্টা অনেক কঠিন সময় ছিল। এরপর ডাক্তার এলেন এবং মাত্র এক মিনিটের মধ্যেই সবকিছু সম্পন্ন হয়ে গেল।