চুয়াডাঙ্গায় আলোচিত টিকটকার খালেদা আক্তার মুন্নি হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। মুন্নিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম জানান, গত ৯ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়ীয়া গ্রামের খোয়াজ আলী শেখের মেয়ে খালেদা আক্তার মুন্নি (১৮) হাটবোয়ালিয়া বাজারে কেনাকাটার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি মায়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানান, কেনাকাটা করতে দেরি হওয়ায় তিনি আলমডাঙ্গায় খালার বাসায় থাকবেন।
পরবর্তীতে, ১৪ নভেম্বর সকালে বোয়ালমারি এলাকায় একটি জঙ্গলের ভেতর থেকে অর্ধগলিত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের সদস্যরা শরীরে থাকা ট্যাটুর মাধ্যমে মরদেহটি মুন্নির বলে শনাক্ত করেন।
মুন্নির মা বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করলে জেলা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম, দ্রুত ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম ও আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে নামে।
ডিবি পুলিশ ১৫ নভেম্বর রাত আড়াইটায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুই আসামিকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চুয়াডাঙ্গার হাজরা হাটি গ্রামের শেখ পাড়ার টোকন আলীর ছেলে মানিক আলী ওরফে মানিক মুন্সি (২২) এবং একই গ্রামের মইদুল ইসলামের ছেলে পারভেজ মুন্সি ওরফে স্বপন (১৯)।
আসামি মানিক মুন্সি পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন যে, ৬ নভেম্বর মুন্নিকে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর জন্য তার সঙ্গে দেখা করে এবং স্থানীয়দের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মানিক প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
৯ নভেম্বর মানিক মুন্সি মুন্নিকে ফোন করে তাকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে সারারাত থাকার প্রস্তাব দেন। মুন্নি রাজি হলে সন্ধ্যায় তাকে বোয়ালমারি শ্মশান এলাকার জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মানিক ও তার সহযোগী পারভেজ মুন্সি পালাক্রমে মুন্নির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। পারভেজ সেখান থেকে চলে গেলে মানিক একাধিকবার মুন্নিকে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে মুন্নি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে এবং চিৎকার করলে মানিক তার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।
পরে মানিক মুন্নির হাত ও মুখ বাঁধা অবস্থায় মরদেহ জঙ্গলে ফেলে দেন এবং তার শপিং ব্যাগ ও জুতা নদীতে ফেলে দেন।
গ্রেপ্তার দুই আসামি বিজ্ঞ আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা বলেন, "এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে।"
এ ঘটনাটি চুয়াডাঙ্গা জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় জনগণ দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।