ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়াসহ দেশটিকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য করার পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে শুক্রবার (১০ মে)। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ঝাড়লেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান। ভোটাভুটির পরপর সাধারণ সভাতেই জাতিসংঘ সনদ ছিঁড়ে ফেলেন তিনি।
সাধারণ সভায় ভোটাভুটিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয় ১৪৩টি দেশ। যার মধ্যে ছিল ইসরায়েলের ‘বন্ধু’ ভারতও। অন্যদিকে ২৫টি দেশ এই ভোটদান থেকে বিরত থাকে। আমেরিকা ও ইসরাইলসহ ৯টি দেশ বিপক্ষে ভোট দেয়। কিন্তু অধিকাংশ ভোট নিয়ে প্রস্তাবটি পাস হয়ে যায়।
যার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, আজকের এই দিনটা অন্যতম কালো দিন হিসাবে লেখা থাকবে। ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত এরদান এই প্রস্তাবটিকে জাতিসংঘ সনদের একটি ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, এটি গত মাসে নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন ভেটোকে নস্যাৎ করেছে। এখানেই থেমে থাকেননি ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত। আমি একটা আয়না দেখাতে চাই আপনাদের।
জাতিসংঘে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অনেক বড় বড় কথা বলা হয়। আজ এমন একটা দেশকে সদস্যপদের জন্য সমর্থন জানানো হল যারা সন্ত্রাসবাদকে মদত দেয়। জঙ্গিদের আশ্রয় দেয়। সন্ত্রাসবাদ নিয়ে যে সনদ তা আপনারাই আজকে ছিড়ে ফেললেন। আমি তারই প্রতিচ্ছবি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও রেজ্যুলেশন পাসের নিন্দা করেছেন। একে একটি ‘অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত’ বলে বর্ণনা করেছেন, যা ‘জাতিসংঘের পক্ষপাতের দিকটি তুলে ধরেছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনিদের মর্যাদা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হামাস সন্ত্রাসীদের জন্য একটি পুরষ্কার। কারণ তারা হলোকাস্টের পর থেকে ইহুদিদের ওপর সবচেয়ে বড় গণহত্যা চালিয়েছে।
WATCH | The Israeli ambassador to the UN tears up the United Nations Charter from the General Assembly podium.
— Al Mayadeen English (MayadeenEnglish) May 10, 2024
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর বলেছেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এখন নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণ সদস্যপদ পাওয়ার জন্য অনুরোধ করবে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে, তারা সম্ভবত নিরাপত্তা পরিষদে এই ধরনের একটি অনুরোধে ভেটো দেবে। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবকে বাধা দিতে তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে।
জাতিসংঘের নথি অনুযায়ী, একটি খসড়া রেজ্যুলুশন পাস করার জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের পক্ষে কমপক্ষে নয়জন সদস্য থাকতে হবে এবং ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে এর স্থায়ী সদস্যদের মধ্যে কেউ নেই। তারা হল চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং আমেরিকা। সূত্র: এনডিটিভি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ৪২ ফিলিস্তিনির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার ৫০০ জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর চলতি মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপর থেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। আর এতে করে বেড়েই চলেছে প্রাণহানির সংখ্যা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে আরও ৪২ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৪৬০ জনে পৌঁছেছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও ৯ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এতে করে ইসরায়েলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে।
সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রকল্প করে সেই অর্থ আত্মসাৎ-এর অভিযোগ উঠেছে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল আজম জুয়েলের বিরুদ্ধে। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাতের বরাদ্দের (সরকারি) টাকা সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রকল্প করে সেই অর্থ আত্মসাৎ-এর অভিযোগ উঠেছে একই ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল আজম জুয়েলের বিরুদ্ধে।
ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য সূত্রে জানা গেছে, রাস্তা মেরামত বাবদ ৮টি প্রকল্প ধরে প্রায় ১৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা সমন্বয়ক পরিচয়ে বরাদ্দ নেয় ছাত্রদলের ওই নেতা। কিন্তু মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে ঘুরে এবং স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে ওই সব রাস্তায় নামমাত্র কাজ করা হয়েছে। কোনো কোনো রাস্তায় ২-৩ গাড়ি মাটি ফেলা হলেও অনেক রাস্তায় ফেলা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে এসব সরকারি টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন ছাত্রদলের সাবেক ওই সাংগঠনিক সম্পাদক।
স্থানীয় বাসিন্দা কলিম উদ্দিন, কবির হোসেন ও আজিজুল হক বলেন, "এক গাড়ি মাটি এনে যেসব জায়গায় ভাঙা গর্ত সেখানে একটু একটু করে মাটি দিয়ে চলে গেছে। আমরা চলাচল করতে পারি না। রোগী হাসপাতালে নিতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। গাড়ি চলে না। বৃষ্টি হলে কাঁদার জন্য হাঁটা যায় না। কয়দিন আগে দুই-তিন গাড়ি মাটি ফেলছে। কিন্তু এটা মাটি ফেলা বলে না।"
জুলাই-আগস্টের রাজিবপুর উপজেলার অন্যতম আন্দোলনকারী রঞ্জু চৌধুরী বলেন, "রাজিবপুরে আমরা আন্দোলন করি এবং আমরাই নেতৃত্ব দেই। হুট করে শুনতেছি মোহনগঞ্জে নতুন একজন সমন্বয়ক বের হয়েছে। যে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাতের ১৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। এটা শুনে আমরা মোহনগঞ্জ গিয়ে ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বরাদ্দের টাকা কোথায় কোথায় খরচ করেছে। কোন রাস্তায় কতটুকু মাটি ভরাট করেছে এসব হিসেব জানতে চাই। প্রথম দিন নানা টালবাহানা করে আমাদেরকে হিসেব দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং নাফিউল আজম জুয়েল জানায় পরবর্তীতে তারিখ ঠিক করে সবার সামনে হিসেব দিবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) আবারও ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের সাথে নিয়ে সবাই বৈঠকে বসে, সেদিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমানও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। হিসেব চাইলে সব মিলিয়ে ৬ লাখ টাকার হিসেব দেয় জুয়েল। পরে বাকি টাকার হিসেব চাইলে উপস্থিত সকলের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি (জুয়েল)। সেদিন ওই ঘটনায় বৈঠক পণ্ড হয়।"
এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, "সমন্বয়করা দুই-তিন মাস আগে কাজগুলো করে৷ তো এর আগে একদিন বসা হয়েছিল সেদিন অনেকেই ছিল, আবার অনেকেই ছিল না। পরে আজকে হিসেব দেওয়ার মতো সবাই উপস্থিত ছিল। সবাই বসছিল আমিও ছিলাম৷ তো হিসেবের মাঝখানে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে আর আমরা পুরো হিসেবটা পাই নাই।"
পুরো হিসেবটা নিতে পারেন নি নাকি জুয়েল দিতে পারেন নি কোনটা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "না মানে হিসেবের মাঝখানে গিয়ে গণ্ডগোলটা লাগে। পরে আর হিসেবটা নেওয়া হয় নাই।"
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এই প্রশ্নটা করা লাগছিল ইউএনওকে। কাকে বরাদ্দ দিলো কি দিলো না সেটা তারাই ভালো বলতে পারে। চাপ প্রয়োগ করে নিলে এটা আসলে হয় না। এটা তো চেয়ারম্যান-মেম্বাররা করবে৷ তারা জনপ্রতিনিধি। এটা তো কোনো ব্যক্তি করতে পারে না।"
মোহনগঞ্জ ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি গোলাম হোসেন জানান, "আমাকে একটি প্রকল্পের সভাপতি করা হয়েছিল। আমার প্রকল্পটি ছিল নয়ার চর বাজার থেকে পূর্ব দিকে বাছেদ ডাক্তারের মোড় পাকা রাস্তার সংযোগ পর্যন্ত গর্ত ভরাট। মোট প্রকল্পের বরাদ্দ ছিলো ১৩ লাখ ৭১ হাজার টাকা।"
গোলাম হোসেন আরও বলেন, "আমার প্রকল্পের বাজেট ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৪৮ টাকা। তবে এ প্রকল্পের কোনো কাজই করা হয় নাই।" তিনি আরও জানান, "মাস্টার রোল থেকে শুরু করে জুয়েলই সব কিছু করেছে। এবং বিল তুলতে আমাদের যে সাক্ষর লাগে সেটিও আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে নিয়েছে।"
অন্য আরেকটি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "পরিষদে উন্নয়ন খাতের বরাদ্দকৃত অর্থটা ছিল। আমরা এস্টিমেট করে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য সেলাই মেশিন, নলকূপ ও স্প্রে মেশিন বিতরণ করতে চেয়েছিলাম। এর আগে আমরাও ওই খাতের টাকা দিয়ে রাস্তা মেরামত কাজ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু ইউএনও বলেছিলো ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাতের টাকা দিয়ে রাস্তা মেরামতের কাজ করা যাবে না। পরে ইউএনওকে বলে উন্নয়ন খাতের টাকা তারা রাস্তার কাজ করার জন্য নেয়।"
মোহনগঞ্জ ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান মাসুদ বলেন, "আজকে রাজিবপুরের সমন্বয়করা হিসেব নিতে আসছিল। তাদের কাছে সঠিক হিসেব দিতে পারে নাই। অমুকের কাছে ১০ হাজার, কুড়িগ্রাম গিয়েছি ১৫ হাজার এ-ই সেই আবোলতাবোল করে ৬ লাখ টাকার মতো হিসেব দিতে পারছে।"
ওই ইউপি সদস্য আরও বলেন, "ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন খাতের টাকা আমরা মেম্বাররা ভাগাভাগি করে সেলাই মেশিন, নলকূপ স্থাপন ও স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করছিলাম। ইউএনও বলল পাকা রাস্তার কাজ ছাড়া কাঁচা রাস্তার কাজ করা যাবে না। পরে তো এটা ছাড়া আর কাজ নাই পরে আমরা সেলাই মেশিন, নলকূপ আর স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করি। হঠাৎ করে সরকার যখন পতন হলো তখন জুয়েল সমন্বয়ক সেজে এসে আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করলো। আর হুমকি দিলো, সরকার হটাতে লাগছে ১৪ দিন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের হটাতে লাগবে না ১৪ সেকেন্ড। জুয়েল পরিষদে এসে এই বক্তব্য দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করলো।"
তবে আসাদুজ্জামান মাসুদের দাবি, "নাফিউল আজম জুয়েলকে উন্নয়ন খাতের টাকা দিতে মেম্বারদেরকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদও।" তিনি বলেন, "আমরা যখন প্রকল্প নিবো রাস্তার কাজই করবো। রাস্তার কাজ করলে একটু লাভ বেশি হয়, এজন্য আমরা রাস্তার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ইউএনও বলল কাঁচা রাস্তার কাজ করতে পারবেন না, এটা নিয়মে নাই৷ করলে পাকা করতে হবে। পরে আমরা বাধ্য হয়ে সেলাই মেশিন, নলকূপ আর স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করি।"
এই কাজ ইউএনও সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া জুয়েলকে কিভাবে দেওয়া হলো জানতে চাইলে তিনি (মাসুদ) বলেন, "কি জানি, সেটা তো জানি না। ওই যে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ১৪ সেকেন্ডও লাগবে না সরাতে এসব কথাবার্তা বলে আমাদের থেকে প্রকল্প নিল৷ পরে আমরা বলেছি যে, রাস্তার কাজ করা যাবে না। পাকা কাজ করতে হবে। পরে ওরা ইউএনওর কাছে গিয়েছিল ইউএনও বলছে যে করা যাবে৷ এরপর তো আর ৭ লাখ টাকার কোনো হিসেব নাই।"
প্রকল্প কিভাবে নিলেন? কি পরিচয়ে নিলেন এবং কোন ক্ষমতাবলে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাফিউল আজম জুয়েল বলেন, "এখানে ক্ষমতার কিছু নাই। আমি ইউনিয়নের বাসিন্দা, আমি ছাত্র, আমি জুলাই আন্দোলনের একমাত্র নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি। ছাত্র আন্দোলন করার পর যখন দেখলাম আমার ইউনিয়নের অবস্থা এই রকম। তখন বন্যা পরবর্তী সময়ে রাস্তা ঘাটে চলার অবস্থা থাকে না। প্রতিদিন ভ্যান গাড়ি উল্টে যায়। পরে ইউএনওর কাছে যাই যাওয়ার পরে বলি যে কোনো প্রকল্প বা কোনো ভাবে যদি মাটি ফেলানো যায়। তো তখন ইউএনও বলে যে এরকম তো প্রকল্প নাই। একটা বরাদ্দ আছে যেটা আমি দিতে পারি। এই বিষয়ে পরে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সাথে কথা হয়। কথা হওয়ার পরে আর কি এটা হয় আর কি। এর পর ইউএনও দিয়ে দিল। মেম্বাররাও বলল হ্যাঁ এটা করা যেতে পারে। এখানে ক্ষমতার কিছু নেই। আমি একজন ছাত্র, আমি একজন জনতা।"
অভিযোগ রয়েছে আপনি ইউপি সদস্যদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে বরাদ্দ নিয়েছেন এবং বরাদ্দ না দিলে ইউপি সদস্যদের অপসারণের কথা বলেছেন এ বিষয়ে আপনার মতামত কি? অভিযোগটা আসলে কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল জানান, "আমি অপসারণ করতে চাইলে কি আর চাইলে কি অপসারণ হবে নাকি! আমি কে? এখানে চাপের কি আছে। এখানে ইউএনও নিজে সরাসরি হ্যান্ডেল করছে। কিছু একটা করা দরকার। তিনি (ইউএনও) নিজে এসে সরেজমিন পরিদর্শন করে গেছে।"
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে তেমন একটা কাজ করেন নাই এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, "এখানে কিছু বিষয় আছে, ইন্টারনাল কিছু বিষয় আছে আরকি। কাজটা হয়েছে তিনভাগে। প্রথম মেম্বাররা করে গেছে এর পরে আমি ১ লাখ ৯৪ হাজার টাকার কাজ আমি করছি। বাদবাকি কাজ করছে আরেকজন। ওই পাশে চর নেওয়াজী রোডটা ওইটা কন্ট্রাক্টে দেওয়া ছিল। যে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বাজেট ওইটা তোমরা করে নিও। ওইখানে যাওয়া হয় নাই আমাদের। তো কিছু ১ লাখ ২৬ হাজার টাকার মতো আমার কাছে আছে।"
এই কাজগুলো করার জন্য জনপ্রতিনিধিরা, সে কাজগুলো করার জন্য আপনাদের কেন দায়িত্ব নিতে হলো? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "তারা ১৪ বছরে কি করছে! ১৪ বছরে তারা একটা মাটিও ফেলায় নাই। কাবিখার নামে ২ ইয়া মাটি ফেলে কাজ শেষ এগুলো খাওয়ার ধান্দা ছাড়া কিছুই না। আমরা শুধু একটা ফেয়ার একটা কাজ চাচ্ছিলাম। এর মধ্যে আমাকে রাজনৈতিক ভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা। এটা একটা প্রোপাগান্ডা।"
এসব বিষয়ে মোহনগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, "ইউএনও জুয়েলকে বরাদ্দ দিতে বলে৷ আমরা দরিদ্র মানুষের জন্য সেলাই মেশিন, নলকূপ ও স্প্রে মেশিনের প্রকল্প দাখিল করছিলাম। ইউএনও সমন্বয়কদের বরাদ্দ দিতে বলায় সেগুলো বাতিল করে তাকে (জুয়েল) দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদেরকে বরাদ্দ দিতে প্রথমে রাজি ছিলাম না পরে ইউএনও বলার পর তাদেরকে বরাদ্দটা দিয়ে দিয়েছি।"
চেয়ারম্যান-মেম্বারদের চাপ প্রয়োগ করে নাফিউল আজম জুয়েলকে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর আহমেদ বলেন, "আমি চাপ প্রয়োগ করবো কেন? এটা বললে তো হবে না। আমি তাদের বলতে যাবো কেন? এটা তো তাদের বিষয়। এরকম অভিযোগ করলে তো সমস্যা। আন্দাজে বললে তো হবে না। ওদেরকে আমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন কোথায় সমস্যা। এরকম যদি অভিযোগ আসে আমরা ব্যবস্থা নিবো। সমন্বয়কদের কিভাবে দেওয়া হবে এটা তো ইউনিয়ন পরিষদের কাজ। এসব উল্টাপাল্টা অভিযোগ করলে তো সমস্যা। এমন করলে তো তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিবো৷ রেকর্ড দিন এসব উল্টাপাল্টা বললে তাদের বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিবো। সে (জুয়েল) উল্টাপাল্টা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর এখানে ইউএনওকে জড়ানোর কোনো দরকার নাই, কোনো প্রয়োজন নাই৷ আইন আইনের মতো করে চলবে। একজন বলল আর তাই হয়ে গেলো নাকি!"
এর আগে সরকার পতনের পর ১০, ১১ ও ১২ আগস্ট নাফিউল আজম জুয়েল মোহনগঞ্জের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। এবং এর পরেই বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে সরকারি নানা দপ্তর থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে আসছেন তিনি। যা নিশ্চিত করেছেন সেই সময় তার সঙ্গে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগঠক ও রাজিবপুর উপজেলা ছাত্র প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, "নাফিউল আজম জুয়েল নামের আমাদের কোনো সমন্বয়ক নেই। যিনি সমন্বয়ক পরিচয়ে প্রকল্প নিয়ে তার সাথে আমাদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।"
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখা। মুখপাত্র জান্নাতুল তহুরা তন্বীর সাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "নাফিউল আজম জুয়েল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেউ নন। তার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। কমিটির বাইরে কেউ যদি সমন্বয়ক পরিচয় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও কোনো অপরাধ করলে তার দায়ভার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বহন করবে না।" সরকারি অর্থ আত্মসাতের সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
নাফিউল আজম জুয়েল ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের ব্যানারে নিজেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে দাবি করেন।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাপ্রকাশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির আন্দোলনকারী ছাত্র ও সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জুলাই ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত দুই শিক্ষার্থী, সাকেব হাসান ও তালহা রায়েন জানান, "নাফিউল আজম জুয়েল নামে আমরা কাউকে চিনি না। আমাদের আন্দোলনে এ নামে কোনো সমন্বয়কও ছিলেন না।"
তারা আরও জানান, "ওয়াসিফ তাজওয়ার ও ফয়সাল আশিক-ই জুলাই ছাত্র আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির নেতৃত্ব দিয়েছেন।"
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির সমন্বয়ক ওয়াসিফ তাজওয়ার ও ফয়সাল আশিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফয়সাল আশিক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, "নাফিউল আজম জুয়েল নামে কাউকে আমরা চিনি না। আমাদের আন্দোলনে এ নামে কোনো সমন্বয়কও ছিলেন না।"
ওয়াজ ও দোয়া মাহফিলের ব্যানারে নাম কেন? এছাড়াও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করেছেন এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নাফিউল আজম জুয়েল বলেন, "ভাই পাশেই মাহফিল। ভাইব্রাদার দিয়েছে। আমার বাড়ির পাশেই মাহফিল। এখানে নাম দিতে পারে না? ওটা যে নাম দিছে আমি জানি-ই না। আন্দোলন তো আমরা ভার্সিটি কেন্দ্রিক-ই করছি। তো ওখানে লিখছে যে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সমন্বয়ক)। ভার্সিটির ট্যাগ লাগাইছে ওইটা।"
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রদলের এক সদস্য জানান, "জুয়েলকে খুব কাছ থেকেই আমি দেখেছি। হঠাৎ তার আর্থিক ও সামাজিক পরিবর্তনে হতবাক হয়েছি। কয়েকজন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন সময় উপহার ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করার কথাও শুনেছি।"
রাজনীতির সাথে কত বছর ধরে জড়িত আছেন? এবং জানতে পেরেছি বিভিন্ন সময় আপনি দলীয় নেতাদেরকে উপহার দেন এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? জবাবে জুয়েল জানান, "আমার ব্যবসা ছিল ফোনের। আমার বিজনেস ফোনের। উপহার দেই বলতে যে রেটে কিনি সেই রেটেই দেই।"
তিনি (জুয়েল) প্রায় ১০ বছর থেকেই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পূর্বেই অবগত করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলছেন স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার পতনের পর এলাকায় আপনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? জবাবে তিনি (জুয়েল) বলেন, "আমি নিজেও এগুলোর পক্ষপাতী না। স্বৈরাচারীকে পতন করে যদি আমি নিজেই স্বৈরাচারের মতো আচরণ করি। বিষয়টা কেমন না। আমি অত্যন্ত মানবিক নিজে না খেয়ে মানুষকে খাওয়ানোর চেষ্টা করি। আর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যারা তাদের নাম প্রকাশ করা প্রয়োজন। আর কারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেটা আমি জানি।"
সবশেষ জানতে চাই, দলীয় এবং সমন্বয়ক এক সাথে দুইটা পরিচয় বহন করা যায় কিনা? জবাবে তিনি (জুয়েল) আরও বলেন, "শোনেন আপনাদের না ডিপ নলেজটা অনেকটা কম। রাজিবপুরে যারা সমন্বয়ক পরিচয় দেয় তাদের ভূমিকা আর আমার ভূমিকার মধ্যে পার্থক্য কি? বলতে পারবেন? তারা যা করছে আমিও করছি। তারাও ছাত্র আমিও ছাত্র। তাদেরও কমিটি নাই আমারও কমিটি নাই। সবাই কি সমন্বয়ক? আমি সমন্বয়ক পদধারী কেউ না৷ কোথাও আপনি যদি দেখেন লাস্ট ইউনিয়নে একটা কমিটি হয়েছে। সেদিন আমাকে সরিয়ে দেওয়ার পর কোথাও আমি বলি নাই আমি সমন্বয়ক। আমি রাজনীতি করি ক্লাস ৯ম ১০ম শ্রেণী থেকে। ২০১৪ সালে মামলায় ১৪ বার হাজিরা দিছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে। আমি কোনো সমন্বয়ক না আমি একজন ছাত্র। আর আমার পদ হচ্ছে আমি জাতীয়তাবাদের সৈনিক। আমি মোহনগঞ্জের মানুষের কাছে হিসেব দিতে রাজি আছি। এখানে অনেক পরিশ্রম করছি। নিজের পকেটের টাকাও তো খরচ হয়েছে।"
ছাত্রদল নেতা নাফিউল আজম জুয়েলের বিষয়ে রাজিবপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান ও সদস্য সচিব নাজমুল মাহমুদ এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের প্রতিবাদের মুখে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের হাতে হাতকড়া পরানো হয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা থেকে তাকে বের করার সময় হাতকড়া না থাকায় আন্দোলনকারী ছাত্ররা গাড়ি আটকে দেয়। পরে ছাত্রদের চাপের মুখে পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাহমুদুল হাসান মুন্নার হত্যার অভিযোগও রয়েছে। তার গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং সাবেক মন্ত্রীকে হাতকড়া পরানোর দাবি জানান।
রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে, সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে তার ভাগ্নের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর, হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে কড়া নিরাপত্তায় তাকে বের করে আনা হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সাবেক মন্ত্রীকে লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপসহ নানা স্লোগান দেয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।
গত বছর রংপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় মাহমুদুল হাসান মুন্না নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।