কে হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী?
বৃটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। মূলত প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পর শুরু হয় আলোচনা।
ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির পরবর্তী নেতা এবং সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক, প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান।
লিস ট্রাস মাত্র মাস দেড়েক আগে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন। লিস ট্রাস সরকারি ব্যয় হ্রাস না করে ট্যাক্স হ্রাস ও প্রবিধান সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলীয় এমপিদের ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সে সময় সুনাক (৪২) সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অতিরিক্ত ঋণের মাধ্যমে প্রস্তাব গুলোতে অর্থায়ন করার জন্য তার পরিকল্পনা বেপরোয়া এবং কয়েক দশকের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির পাশাপাশি যুক্তরাজ্যে বাজারের আস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে।
এখন যেহেতু সুনাকের বক্তব্য সঠিক প্রমাণ হয়েছে, ট্রাসের নাটকীয় ঘোষণার পর সেই হিসেবে সুনাক এখন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ে এগিয়ে থাকবেন বলে অনেকের মত।
অন্যদিকে পার্টির অনেক সদস্য, যারা সাধারণত বলে থাকেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে (৫৮) ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার জন্য তাকে ক্ষমা করতে তারা রাজি নন।
কয়েক মাস বিতর্কের পর জনসনের দুর্বল সরকার থেকে সুনাক এবং অন্যদের পদত্যাগের কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জনসন সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে তার মন্ত্রিসভা এবং এমপিদের মধ্যে বিদ্রোহের পর প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করেন।
তবে, জনসন ব্রেক্সিটের জন্য কনজারভেটিভ এমপি এবং দলের একটি অংশের কাছে এখনো জনপ্রিয়।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে সুনাম অর্জন করা বেন ওয়ালেসও থাকছেন। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
সাম্প্রতিক কনজারভেটিভ পার্টির সম্মেলনে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে ভোটে দাঁড়ানোর কথা বিবেচনা করবেন কিনা? ৫২ বছর বয়সী বেন ওয়ালেস বলেছিলেন, ‘আমি এটিকে অস্বীকার করি না।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী পেনি মর্ডান্ট প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে নাম লেখাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিবিসি বলছে, ব্রিটেনের পার্লামেন্টে একটি জরুরি প্রশ্নের সময় লিজ ট্রাসের পক্ষে দাঁড়িয়ে এই সপ্তাহের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বাদ পেয়েছিলেন পেনি মর্ডান্ট। বরিসের পদত্যাগের পরও নেতৃত্ব নির্বাচনের সর্বশেষ প্রতিযোগিতায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং নিজের সহকর্মী এমপিদের কাছ থেকে জোরালো সমর্থনও অর্জন করেছিলেন। কিন্তু শেষের দিকে সমর্থনের অভাবে সেসময় চূড়ান্ত দু’জন প্রার্থীর একজনে পরিণত হতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে লিজ ট্রাসকে সমর্থন করার পর তিনি হাউস অব কমন্সের নেত্রী এবং প্রিভি কাউন্সিলের লর্ড প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হন। এর ফলে তিনি নতুন রাজার অ্যাকসেসন কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করেন।
সদ্য সাবেক হওয়া যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। গত বুধবার লিজ ট্রাসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে ব্র্যাভারম্যানের প্রস্থানের দৃশ্যত কারণ ছিল সরকারি নিয়মের ‘প্রযুক্তিগত লঙ্ঘন।
উল্লেখ্য, চার দফা অনুসরণ করে নির্বাচিত হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী। প্রথমত, প্রার্থীদের কমপক্ষে ১০০ এমপির সমর্থন পেতে হবে। যদি কেউ এই সমর্থন আদায় করতে পারেন তাহলে দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে তিনি যোগ্য হবেন। দ্বিতীয়ত, ২৪ অক্টোবর এমপিদের প্রথম ভোট হবে। এতে যদি তিনজন প্রার্থী হন, তাহলে সবচেয়ে কম ভোট পাবেন যে প্রার্থী, তিনি এই প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়বেন। তৃতীয়ত, ২৪ অক্টোবর রাতে বাকি দুই প্রার্থীর ওপর ভোট দেবেন এমপিরা। চতুর্থ বা সর্বশেষ ধাপে দু’জন প্রার্থীই লড়াইয়ে থেকে যাবেন। এরপর তাদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিতে অনলাইনে ভোট নেওয়া হবে। ভোট দেবেন কনজার্ভেটিভ পার্টির সদস্যরা। বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে ২৮ অক্টোবর শুক্রবার।
আরএ/