হিজবুল্লাহর পরবর্তী প্রধান: হাশেম সাফিদ্দিন না নাইম কাশেম?
হাশেম সাফিদ্দিন ও নাইম কাসেম। ছবি: সংগৃহীত
লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর সংগঠনটির ভবিষ্যত নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইসরাইলি বিমান হামলায় নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর আন্দোলনটিতে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। নাসরুল্লাহ শুধু একজন নেতা ছিলেন না, তিনি লেবাননের শিয়া সম্প্রদায় ও বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য এক প্রতীকী ব্যক্তিত্ব ছিলেন।
১৯৯২ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নাসরুল্লাহ। তার দীর্ঘ নেতৃত্বে সংগঠনের প্রায় পুরো অস্তিত্বকাল কেটেছে। তাই তার মতো একজন যোগ্য উত্তরসূরী পাওয়া সংগঠনের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এর মধ্যে ইসরাইলি হামলার অব্যাহত হুমকির কারণে, বিশেষ করে দক্ষিণ লেবাননে সম্ভাব্য স্থল হামলার আশঙ্কায়, নতুন নেতা নির্বাচন এবং নেতৃত্বের ভার নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এই মুহূর্তে হিজবুল্লাহর পরবর্তী প্রধান হিসেবে দুজনের নাম সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে- হাশেম সাফিদ্দিন ও নাইম কাশেম। তাদের পরিচয় ও সম্ভাব্য নেতৃত্বের গুণাবলি এখানে তুলে ধরা হলো:
হাশেম সাফিদ্দিন: হাশেম সাফিদ্দিন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান এবং নাসরুল্লাহর কাজিন। তিনিই পরবর্তী সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে সবচেয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত।
১৯৬৪ সালে লেবাননের টায়ারের কাছে দির কানুন আন-নহর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাফিদ্দিন। তিনি ইরাকের নাজাফ ও ইরানের কোমের শিয়া ধর্মতত্ত্বের প্রধান কেন্দ্রে নাসরুল্লাহর সাথেই ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন। হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে থেকেই তিনি এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত।
সাফিদ্দিনের পরিবার লেবাননের প্রখ্যাত শিয়া ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের পরিবার হিসেবে পরিচিত। তার ভাই আবদুল্লাহ ইরানে হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন এবং তার ছেলে রেধা ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানির মেয়েকে বিয়ে করেছেন। ইরানের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং নির্বাহী পরিষদে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা তাকে পরবর্তী নেতা হিসেবে শক্তিশালী প্রার্থী করেছে।
সাফিদ্দিন হিজবুল্লাহর শূরা কাউন্সিল এবং জিহাদি কাউন্সিলেরও প্রধান। তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
নাইম কাশেম: নাইম কাশেম হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে প্রায়ই সংগঠনের ‘২ নম্বর ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।
১৯৫৩ সালে দক্ষিণ লেবাননের নাবাতি এলাকার কফর কিলায় জন্মগ্রহণ করেন কাশেম। শিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে তিনি ইমাম মুসা আল-সদরের নেতৃত্বাধীন মুভমেন্ট অব ডিসপোসেসড-এ যোগ দেন, যা পরবর্তীতে আমল মুভমেন্টে পরিণত হয়।
তিনি ১৯৮০-এর দশকে আমল ত্যাগ করে হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। কাশেম শিয়া রাজনৈতিক চিন্তাবিদ আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ হোসাইন ফাদলাল্লাহর একজন শিষ্য ছিলেন এবং বৈরুতে ধর্মীয় শিক্ষাও দিয়েছেন।
কাশেম ১৯৯১ সালে হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল নির্বাচিত হন। তিনি সংগঠনের শিক্ষা নেটওয়ার্ক এবং পার্লামেন্টারি কার্যক্রমও তদারকি করতেন। তার লেখা বই “হিজবুল্লাহ: দি স্টোরি ফ্রম উইদিন” কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
এখন দেখা যাবে, হিজবুল্লাহর পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবেন এবং সংগঠনটি নতুন নেতৃত্বের অধীনে কোন পথে এগোবে। সূত্র : আল জাজিরা