ইউরিক এসিড কেন বাড়ে?
সকলের রক্তেই ইউরিক এসিডের মাত্রা খুব অল্প পরিমানে থাকে যা মূলত শরীরের মৃত কোষ এবং খাদ্য উপাদান পিউরিন থেকে উৎপন্ন হয়। তবে ইউরিক এসিড আসলে একটি বিষাক্ত উপাদান।
আমাদের শরীরের ইলেকট্রোলাইটস এর ব্যালেন্স রক্ষায় ইউরিক এসিড এর ভুমিকা আছে। আমাদের শরীরে দুই ধরনের এমাইনো এসিডের প্রয়োজন হয়। একটি আবশ্যক এমাইনো এসিড। আরেকটি অনাবশ্যক এমাইনো এসিড। এই অনাবশ্যক এমাইনো এসিডের মধ্যে একটি হলো পিউরিন। এই পিউরিন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পাওয়া যায়।
এ ছাড়া কিছু কিছু খাবার থেকেও আমরা পিউরিন নামক এমাইনো এসিড পেয়ে থাকি। কোষে থাকা এই পিউরিনের ভাঙনের ফলে ইউরিক এসিড তৈরি হয়ে রক্তে চলে যায়। শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় থাকা এই ইউরিক এসিড কিডনী যখন বের করে দিতে পারে না তখন এই অতিরিক্ত এসিড ক্রিস্টাল আকারে দেহের বিভিন্ন অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টে জমতে থাকে।
ইউরিক এসিডে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, লাল হওয়া এবং যন্ত্রণা অনুভব করে থাকেন। প্রথম অবস্থায় শুধু পায়ে ব্যথা হয়। আস্তে আস্তে এর তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পা ফোলা, হাঁটু ও হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হয়। ইউরিক এসিড আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁটতেও সমস্যা হয়। শরীরে ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে কিডনিতে পাথর, কিডনি অর্কাযকর হওয়া, উচ্চরক্তচাপসহ নানা ধরনের রোগ হতে পারে।
ইউরিক এসিড অনেক বেশি বেড়ে গেলে ওষুধেও অনেক সময় ব্যথা কমে না। এটা কমানোর জন্য ওষুধের পাশাপাশি সঠিক খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী। নারীর ক্ষেত্রে রক্তে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ২ দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৪ থেকে ৭ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল। পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
কারা ইউরিক এসিডে বেশি আক্রান্ত হন-
যাদের বংশগত বাতের সমস্যা আছে।
যিনি নিয়মিত এলকোহল গ্রহণ করেন।
প্রোটিন জাতীয় খাবার চাহিদার তুলনায় বেশি খেয়ে থাকেন এবং শাক সবজি কম খান।
কিছু কিছু ওষুধ রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যেমন- ডাই ইউরেটিক মেডিসিন।
উচ্চ রক্তচাপ ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, হৃদরোগের সমস্যা আছে তাদের ইউরিক এসিড বাড়ার সম্ভবনা থাকে।
ওজন বেশি হলে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
পানি কম পান করেন তাদের এই রোগ হওয়ার আশঙ্কা আছে।
ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে যেসব খাবার খেতে পারবেন না-
অধিক চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবে না। যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস, ভেড়ার মাংস, মহিষের মাংস ইত্যাদি।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন- কলিজা, মগজ, জিহ্বা ইত্যাদি।
খোসাযুক্ত প্রণিজ আমিষ পরিহার করতে হবে। যেমন- চিংড়ি মাছ, শামুক, কাকড়া। এ ছাড়া সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।
সব রকমের ডাল, বাদাম, মটরশুটি, সিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
কিছু কিছু শাকসবজি খাওয়া যাবে না। যেমন- পালং শাক,পুঁই শাক, ফুল কপি ব্রকোলি, মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়শ, পাকা টমেটো, কচুর মুখী ইত্যাদি। এছাড়া মাশরুমও খাওয়া যাবে না।
এলকোহোল, ক্যাফেন জাতীয় বেভারেজ খাওয়া যাবে না। যেমন- চা, কফি, কোমল পানীয়, রং দেওয়া জেলি, জ্যাম, সিরাপ, কৌটা বন্দি ফ্রুট জ্যুস খাওয়া চলবে না।
মিষ্টি ফল পরিহার করাই ভালো।
যেসব খাবার খেতে পারবেন-
চর্বিহীন মাছ, মরগির মাংস, কুসুম ছাড়া ডিম পরিমাণ মতো খাওয়া যাবে।
এন্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল পেয়ারা, আমলকি, কমলা, মাল্টা।
অধিক আঁশযুক্ত খাবার যেমন- সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল।
এছাড়া, ওটস, ইসুবগুলোর ভূসি, গ্রিন-টি খেতে পারবেন
এই সময় চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণ পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে।
কেএফ/