স্বপ্ন পূরণে বার্লিনে যাচ্ছে বাক প্রতিবন্ধী রুপালী
অভাবের সংসারে জন্ম রুপালীর (১৬)। জন্ম থেকেই সে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী। ফলে লেখাপড়া আর হয়ে ওঠেনি তার। তবুও থেমে থাকেননি রুপালী। প্রতিবন্ধকতা আটকাতে পারেনি তাকে। সে কারণেই এখন ‘স্পেশাল অলিম্পিক সামার ওয়ার্ল্ড গেমস- ২০২৩' এর সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নড়াইলের এই কন্যা যাচ্ছে জার্মানির বার্লিনে।
জানা গেছে, রূপালী খাতুনের (১৬) বাড়ি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের তারাশি (দক্ষিণ পাড়া) গ্রামে। তার বাবা টুকু মিয়া শেখ। তিনি অন্যের জমিতে বর্গা চাষ করেন। তার বড় ভাইরাও কৃষি কাজে নিয়োজিত। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে রূপালী হচ্ছে ছোট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি ঝুপড়ি ভাঙ্গাচুরা ঘরে বসবাস ৬ সদস্যের এই পরবিারের। রূপালী যে ঘরটিতে থাকে সেখানে তার বোন সোনালীর পড়ার টেবিল, ১টি টেলিভিশন এবং ওই পড়ার টেবিলেই চলে তাদের সাজগোজের কাজ।
রূপালীর মা রিক্তা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল তার। এলাকায় খেলাধুলার আয়োজন হলেই ছুটে যেত অংশ নিতে। কিন্তু মেয়ে হওয়ায় স্থানীয় লোকজন আজেবাজে কথা বলত। ১৩ বছর বয়সে তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়ে রাজি না হওয়ায় বিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে প্রতিবন্ধীদের জন্য ভালো কোনো ফল না থাকায় মেয়েটি আমার পড়াশোনা করতে পারল না। খেলাধুলায় অংশ নেয় রূপালী। পুরস্কার নিয়ে বাড়িতে ফেরে। তখন আমাদের ভালো লাগে।
কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, প্রতিদিনের চাওয়া পাওয়ার কাজ চলে ইশারায়। রূপালী কবুতরকে খুব ভালোবাসে। এ জন্য ঝুপড়ি ঘরের পাশে বাবা-মা প্রতিবন্ধী মেয়ের শখ পূরণের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন কবুতরের একটি ঘর। প্রতিদিন সকাল-বিকালে সে ইশারায় খাবার ছড়িয়ে কবুতরকে ডাক দেয় আর মিটমিট করে হাসে।
রূপালীর বাবা টুকু মিয়া জানান,নড়াইল শহরে শিকদার ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিওর পরিচালক পান্নু তাদের গ্রামে আসেন। তিনি রূপালীর সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তাকে সাঁতার শেখাতে চান। এরপর মরাচিত্রা নদীতে শুরু হয় রূপালীর সাঁতার প্রশিক্ষণ। এক পর্যাযয়ে পান্নু সাহেব রূপালীকে খুলনায় এবং পরে ঢাকায় সাতার প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন। গত কয়েক বছরে দেশের ভেতর ৭টি সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় রূপালী। তার মধ্যে ৬টিতেই সে প্রথম হয়েছে।
এ কারণে শিকদার ফাউন্ডেশনের পরিচালক মনজুরুর রহমান পান্নু বলেন, তার ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টাই তাকে আজ স্পেশাল অলিম্পিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু বলেন, বাংলাদেশ থেকে মোট ৬ জন প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে নড়াইলের রূপালী খাতুন একজন। নিশ্চয় সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে তবেই ঘরে ফিরবে।
এদিকে স্পেশাল অলিম্পিক সামার ওয়ার্ল্ড গেমসে রূপালীর অংশগ্রহণে খুশি মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম মোল্যা। তিনি বলেন, রূপালী তার ইউনিয়নের তারাশি গ্রামের মেয়ে। সে বাক প্রতিবন্ধী। রূপালী সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে জার্মানির বার্লিনে যাচ্ছে এ জন্য তারা গর্বিত। দোয়া করি সে যেনো সুস্থ ও সুন্দরভাবে যেতে পারে এবং সাঁতারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ তথা নড়াইলের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, রুপালীর পরিবারের যদি আর্থিকভাবে কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তার কাছে আসলে তিনি সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করবেন।
উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতা জার্মানির বার্লিন শহরে আগামী ১২ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর আগে বাংলাদেশে দেড় মাসের মতো প্রশিক্ষণ করবে প্রতিযোগিরা। তারপর বিভিন্ন ইভেন্টসের সমন্বয় একটি টিম স্পেশাল অলিম্পিক সামার ওয়ার্ল্ড গেমসে অংশ নিতে জার্মানির বার্লিনের উদ্দেশে রওনা দিবে।
এসআইএইচ