বেকারদের এগিয়ে নিচ্ছেন অজপাড়াগাঁওয়ের সিরাজ
সিরাজুল ইসলাম সিরাজ একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে জেলায় সুনাম ছড়িয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া ইউনিয়নের অজপাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা সিরাজ ২০১৪ সালে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শুরু করেন।
সিরাজ ২০০৪ সালে এসএসসি ও ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। এর রাজশাহী কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স এবং ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তবে পড়াশোনায় তার কোনো ঘাটতি ছিল না। ফ্রিল্যান্সিং শেখার খুবই ইচ্ছা ছিল তার। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখতেন।
সিরাজ ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ২০১৪ সালে পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনের পথ খুঁজছিলেন তিনি। সহপাঠীদের কাছে থেকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন। এ পেশায় প্রথমত তার শুরু হয় ব্লগিং দিয়ে। তার একটা সফটওয়্যার রিলেটেড ব্লগ ছিল। অ্যাডসেন্স থেকে তিনি প্রথমে উপার্জন করেন ৮১ ডলার। এরপর সিরাজ ২০১৫ সালে Linkdin নামে একটি বায়ারের খোঁজ পান। দীর্ঘ চার বছর কাজ করার পর কানাডিয়ান একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।
দু'টি কোম্পানির সঙ্গে তিনি কাজ করছেন। বর্তমানে সিরাজের ২০ জনের একটি টিম আছে। যে টিম দিয়ে সকল কাজ সম্পন্ন করেন। তার টিমের মাসিক আয় চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয়, পাশাপাশি তারা নিজেদের অর্থায়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ এগিয়ে যায়।
তবে সিরাজের বলেন, এই আধুনিকতার যুগে কেউ ঘরে বেকার বসে থাকুক এটা আমি চাই না। পড়াশোনার পাশাপাশি সবাই যেন দেশের জিডিপি বাড়ানোর ভূমিকা রাখতে পারে এটিই আমার স্বপ্ন। আমি যদি সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাই তাহলে আমার এই টিমটিকে অনেক বড় পরিসরে করার আশা রয়েছে। যেখানে কাজ করবে ঠাকুরগাঁওয়ের শত শত বেকার যুবা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর এলাকার আরেক ফ্রিল্যান্সার রঘুনাথ সিংহ রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এটা একটা স্বাধীন পেশা। এখানে পরিশ্রম করলে অবশ্যই সফলতা আসবে। সিরাজ অনেক পরিশ্রম করেন। একজন দক্ষ উদ্যোক্তা। আমি নিজেই তার কাছ থেকে কাজ শিখেছি। এখন আমি বড় একটা কোম্পানিতে কাজ করছি।
রহিমানপুর এলাকার মিজান প্রধান বলেন, কোনো এক মাধ্যমে সিরাজের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি আমাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শেখান। আমি আগে যে চাকরি করতাম সে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে সিরাজের টিমে যুক্ত হই। বর্তমানে অনলাইন জগত থেকে ভালো আয় করি।
জেলার হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা পলাশ বলেন, আমি তিন-চার বছর থেকে এই পেশায় নিয়োজিত। এই পেশায় থেকে বর্তমানে আমি স্বাবলম্বী। ফ্রিল্যান্সিং'র ভালো দিক হচ্ছে যে এখানে সৎভাবে উপার্জন করা যায়। আমি এখানে উপার্জন করে সেই টাকা দিয়ে আমার পরিবারের খরচের পাশাপাশি ব্যবসা ও কৃষি কাজে ব্যয় করতে পারি।
উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং কাজে থেমে নেই নারীরাও। হরিপুর উপজেলার নারী ফ্রিল্যান্সার আসফিয়া সিদ্দিকী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি বর্তমানে অনলাইনে ল্যাপটপের মাধ্যমে আউটসোর্সিংয়ের কাজ করছি এবং নিজের পড়াশোনার খরচ করছি। আমি চাই আমার মত হরিপুর উপজেলাসহ গ্রামের অন্যান্য মেয়েরা আউটসোর্সিংয়ের কাজ করুক। কোনো মেয়েই যেন পিছিয়ে না থাকে এই আধুনিক যুগে।
শুধু আসফিয়া নয়, তার মতো পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি সমাজের প্রতিকূলতা পেরিয়ে আউটসোর্সিং এর কাজ করেন ইমন রেজা, আব্দুল্লাহ আল-আমিন, শেখ ফরিদ সুজন, রিয়াজুল ইসলাম রুবেল, নাঈম সিদ্দিকীসহ আরও অনেকেই। পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা সিরাজের টিমে থেকে কাজ করে তারা আজ সকলেই স্বাবলম্বী।
উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় চেয়ারম্যান শাহজাহান সরকারের সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সিরাজ দীর্ঘদিন ধরে আউটসোর্সিংয়ের কাজে জড়িত এবং ইউনিয়নের অন্যান্য ছেলে-মেয়েরাও তার সঙ্গে কাজ করছে। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তার এই কর্মকাণ্ড শুধু ভাতুরিয়া ইউনিয়ন নয়, হরিপুরের ছেলে-মেয়েরা যাতে কাজ করতে পারে তা ব্যবস্থা করে দেব।
ঠাকুরগাঁও বিসিকের উপব্যবস্থাপক নুরেল হক বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের একজন উদ্যোক্তা সিরাজুল ইসলাম সিরাজ তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করছেন। প্রতিনিয়ত সে তার কর্মীর সংখ্যা বাড়াচ্ছেন এবং তার মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার এই ফ্রিল্যান্সিং’র কাজকে আরও সম্প্রসারিত করতে তাকে সহযোগিতা করা হবে।
এসএন