হলদে-কালো ডানার ফড়িংয়ের প্রাতঃভ্রমণ
বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, শৈশব কৈশর কাটিয়েছেন তারা স্মৃতি হাতড়ালে অনেকের হয়তো মনে পরে যাবে ছোট বেলার ফড়িং ধরার কথা। মাঠ-প্রান্তরে নানা প্রজাতির ফড়িংয়ের দেখা মেলে। দৃষ্টিনন্দন হলদে-কালো ডানার ফড়িং এখন আর তেমন দেখা যায় না। দেখা দুর্লভ-ই বলা চলে! কালো দেহের হলদে-কালো ডানার ফড়িংটি প্রকৃতির মধ্যে খুব সহজেই দৃষ্টি কাড়ে। অন্য প্রজাতির ফড়িং যত ছটফটে, এটি তেমন নয়। এই ফড়িং সব সময়ই শান্ত ও ধীরগতিতে উড়ে।
রবিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে নওগাঁ শহরের ছোট বাইপাস ব্রিজ এলাকার যমুনা নদীর তীরে দেখা মেলে হলদে-কালো ডানার ফড়িং।
উইকিপিডিয়ায় তথ্য মতে, হলদে কালো ডানার ফড়িং (Rhyothemis variegata) Libellulidae পরিবারের ড্রাগনফ্লাইয়ের একটি প্রজাতি। মাঝারি আকারের গাঢ় দেহের ড্রাগনফ্লাই যার রঙিন ডানা ফ্যাকাশে হলুদ রঙের। সামনের পাখার এপিস এবং নোডগুলিতে কয়েকটি কালো দাগ রয়েছে। পেছনের ডানার গোড়ায় একটি বড় প্যাচ রয়েছে, কালো ও সোনালি হলুদ দিয়ে চিহ্নিত। নারীদের ক্ষেত্রে, সামনের ডানার অর্ধেক অংশ স্বচ্ছ হয়; বেসাল অর্ধেক কালো দাগসহ সোনালি-হলুদ দিয়ে রঙ করা। পশ্চাৎ-পাখার এপিকাল প্রান্তগুলো স্বচ্ছ; বাকি ডানা সোনালি-হলুদ ও কালো দিয়ে চিহ্নিত। জলাভূমি, পুকুর ও ধান ক্ষেতে বংশবৃদ্ধি করে।
ফড়িং নামের ছোট পতঙ্গটির রয়েছে অতি প্রাচীন ইতিহাস। পৃথিবীর বুকে ডাইনোসরদের পদচারণার অনেক আগে থেকেই আকাশে উড়ে বেড়িয়েছে ফড়িং। পতঙ্গ ফড়িং আজকে পরিণত হয়েছে ছোট পতঙ্গে। কার্বনিফেরাস যুগে ফিরে গেলে দেখা যাবে, ফড়িংদের পূর্বপুরুষরা ছিল পতঙ্গদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতঙ্গ। এই যুগে পাওয়া যেত পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতঙ্গগুলো। সুপ্রাচীন গ্রিফেনফ্লাই হলো পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পতঙ্গ। যাদের বিবেচনা করা হয় ফড়িংয়ের পূর্বপুরুষ হিসেবে।
একটি ফড়িংয়ের জীবনকাল হয়ে থাকে ৬ মাস। একটি ফড়িং একই সময়ে সামনে এবং পেছনে দেখতে পারে। যা অন্যান্য প্রাণী সহজে পারে না। সব অঞ্চলেই ফড়িং দেখা যায়, তবে পাহাড় ও জলাশয়ের আশপাশে ফড়িং বেশি দেখা যায়। প্রায় ৩০০ মিলিয়নের বেশি বছর ধরে পৃথিবীতে ফড়িংদের বসবাস।
গবেষকদের মতে, পিকচার উইং, পাইড প্যাডি স্কিমার, কোরাল টেইল্ড ক্লাউডউইং, ডিচ জুয়েল, গ্রেটার ক্রিমসন গ্লাইডার, রুফাস মার্শ গ্লাইডার, গ্রিন মার্শ হাউক, কমন ক্লাব টেইলসহ প্রায় ১৫০ প্রজাতির ফড়িং দেশে দেখা যায়। বর্তমানে দেশের প্রাণ-বৈচিত্র্য থেকে অনেক প্রজাতির ফড়িং নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে। জলাশয় কমে যাওয়া, কলকারখানার ক্ষতিকর বর্জ্য, ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এর জন্য দায়ী। জীব-বৈচিত্র্যে নানা কীটপতঙ্গ বিরাজমান। কিছু পতঙ্গ ক্ষতিকর, কিছু পরিবেশবান্ধব। ফড়িং বরাবরই পরিবেশবান্ধব একটি পতঙ্গ। পরিবেশ ও জীবনের জন্য এদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
এসএন