ভরা চৈত্রেও অরুণিমায় লাখো পাখির মেলা
সাধারণত শীতকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিথি পাখির দেখা মেলে। বছরের অন্য সময় খুব একটা তা চোখে পড়ে না। তবে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পানিপাড়া গ্রামে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চিত্র যেন একেবারেই ভিন্ন। শীত মৌসুম শেষে এখন চৈত্র মাস চললেও বক, সারসসহ দেশি-বিদেশি লাখো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত অরুণিমা। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লিতে ৫০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ রিসোর্টটি যেন পাখিদের আপন রাজ্য। বছরের বারো মাসই থাকে দেশি পাখি আর নয় মাস থাকে বিদেশি পাখি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চৈত্রের সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া পাখিরা বিকেল হতেই রিসোর্টে ফিরতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা এসব পাখিরা বসছে রিসোর্টের বৃহৎ পুকুর পাড়ে অবস্থিত সবুজ গাছপালার ডালে ডালে। ছুটে আসা পাখিদের ডালে বসার অপরূপ দৃশ্য, ডানা ঝাপটানি ও কিচির মিচির শব্দ মোহিত করছে দর্শনার্থীদের। রিসোর্টের পুকুরের জলে হেলে পড়া সূর্যের লাল আভা আর মিরাকেল গার্ডেন দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই। এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। খাবারের তালিকায় থাকা সবজি, ফল, মাছ, মাংসসহ সবকিছুই অর্গানিকভাবে উৎপাদন করা হয় রিসোর্টেই। তাই তো নিভৃত পল্লিতে গড়ে ওঠা অরুণিমার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা।
এসময় কথা হয় ঢাকা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে আসা মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবে এসে প্রকৃতির সঙ্গে গলফ খেলা, লেকে নৌকা চড়া ও মাছ ধরা সবকিছু মিলিয়ে একটু ভিন্ন ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। এখানে প্রকৃতির সঙ্গে যেন নিজেকে বিলীন করে দেওয়া যাচ্ছে। ফুলে-ফলে ভরা অরুণিমায় যা খাচ্ছি তার সবই অর্গানিক। যা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভালো। আর বুক ভরে ফ্রেশ অক্সিজেন নিতে পারছি।
মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদের স্ত্রী বলেন, এখানে এসে কিছু দৃশ্য দেখে আমরা খুবই আনন্দিত। এই মৌসুমে এত পাখি সাধারণত কোথাও দেখা যায় না। গাছে পাখিরা এমনভাবে বসে আছে যেন মনে হচ্ছে ফুল ফুটে আছে। অপূর্ব একটা দৃশ্য। পরিবেশ এতো সুন্দর যে এখানে এলে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে ফেলা যাবে।
আফসানা আরবি নামে আরেকজন পর্যটক বলেন, এখানে ঘুরতে এসে অনেক পাখি দেখেছি। খুব ভালো লাগছে। সাধারণত শীতকালে পাখি থাকে। কিন্তু অরুণিমায় একটু ব্যতিক্রম দেখলাম। চৈত্র মাসেও এখানে পাখি দেখা যাচ্ছে।
এদিকে অরুণিমা রিসোর্ট গ্রাম বাংলাকে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরছে বলে দাবি করে অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদসহ রিসোর্টে দায়িত্বরতরা বলেন, আয়োতনে বাংলাদেশের বড় একটি রিসোর্ট এটি। এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রাইভেট গলফ ক্লাব। আর রিসোর্টের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে দেশি-বিদেশি লাখ লাখ পাখি আসে। ভবিষ্যতে পর্যটকদের সুবিধার্থে আরও নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য যোগ করার পরিকল্পনা চলছে।
রিসোর্টের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, অরুণিমা রিসোর্টে বারো মাস দেশি পাখি এবং নয় মাস বিদেশি পাখি অবস্থান করে। পর্যটকদের আপ্যায়নের জন্য ন্যাচারালি সবজি, ফল, মাছসহ সবকিছু এখানে উৎপন্ন করা হয়। পর্যটনের জন্য এমন পরিবেশ অত্যন্ত প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশ গড়তে ট্যুরিজমের কোনো বিকল্প নেই। সরকার আরেকটু নজর দিলে বাংলাদেশের পর্যটন খাত আরও বেশি এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এসএন