সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল ‘আলোর দিশারী’
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে ব্যতিক্রমী স্কুল ‘আলোর দিশারী’। সন্ধ্যা ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুই ঘণ্টা ক্লাস চলে স্কুলটিতে। সপ্তাহে ছয় দিনের ক্লাসে এখানে প্রায় ৪০ জন শিশু রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘মানবিক বাংলাদেশ’ এর স্বেচ্ছাসেবকদের প্রচেষ্টায় বরগুনা পৌর শহরের ডিকেপি সড়কে চলছে এ স্কুলটি। শিক্ষা উপকরণ ছাড়াও প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের রান্না করা খাবার দেয় সংগঠনটি।
২০২২ সালে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবকদের পরিকল্পনা ও বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত সাইফুর রহমানের পরামর্শে গড়ে উঠে এই স্কুল। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, স্কুলশিক্ষক ও কলেজ শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন। শুরুটা মাত্র ৭ জন স্বেচ্ছাসেবকের হাত ধরে হলেও স্কুলটিতে এখন অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন।
ইমার্জিং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের একটি কক্ষে সন্ধ্যার পর স্কুলটির ক্লাস শুরু হয়। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, এখানে যারা কাজ করছে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে স্কুলটিতে সময় দিচ্ছেন এবং ফ্রি শেখাচ্ছেন। এতে করে এলাকার অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা অন্তত অক্ষরজ্ঞান পাচ্ছে। এ ধরনের কাজে স্থানীয়রাও পাশে থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করছেন।
আলোর দিশারী স্কুলের শিক্ষার্থী জুঁই। অভাবে জুঁইয়ের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়াই ছিল পরিবারের কাছে কষ্টসাধ্য ব্যাপার। লেখাপড়ার কথা চিন্তাও করেনি পরিবার।
কথা হলে জুঁই বলে, আমার বাবা সাইকেল মেরামতের কাজ করেন। মা ছোট একটি দোকান চালান। সকাল হলেই তারা কাজে চলে যায়। আমি বাসায় থাকি। সন্ধ্যায় দুই ঘণ্টা এই ফ্রি স্কুলে আসি।
আরেক শিক্ষার্থী সালমান বলে, আমার বাবা ভ্যানে করে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ফিল্টারের পানি দেয়। বাবাকে বলে এই স্কুলের স্যাররা আমাকে এখানে ভর্তি করেছেন।
স্কুলটির স্বেচ্ছাসেবক ফয়জুল মালেক সজিব বলেন, আমরা এলাকায় ঘুরে ঘুরে যারা সুবিধাবঞ্চিত রয়েছে তাদের খুঁজে বের করি এবং লেখাপড়ায় আগ্রহী করি। যাদের স্কুলে যাওয়ার মতো সুযোগ আছে কিন্তু স্কুলে যায় না তাদেরকে স্কুলে পাঠানোর চেষ্টা করি। এ ছাড়া যারা স্কুল ছেড়ে দিয়েছে কিংবা স্কুলে যাওয়ার বয়স নেই তাদের বুঝিয়ে আমাদের স্কুলে এনে ভর্তি করি।
স্কুলটির আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক নাজমুল কবির বলেন, আমি কলেজে শিক্ষকতার পাশাপশি এখানে সময় দেই। আমার মতো অনেকেই এখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা দিচ্ছেন। তারা সবাই স্বেচ্ছায় এ কাজ করছেন। সবাই নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেক মাসে নিজেদের চাঁদার টাকায় স্কুলটি চালাচ্ছি।
বাংলাদেশ বিমানে কর্মরত সাইফুর রহমান বলেন, আলোর দিশারী স্কুলের মাধ্যমে আমরা বরগুনার সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুদের প্রাক-প্রাইমারি স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করি। এখানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা পারিশ্রমিকে যে কেউ এসে শিক্ষকতা ও সহযোগিতা করতে পারবেন।
এসজি