বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

সহজিয়া সুরে মোড়া দক্ষিণা লোকসংস্কৃতি

একটি দেশ বা জাতির জীবনচর্চার সৃজনশীল শিল্পীসুলভ রূপকেই মানুষ আপন রূপের ধারক হিসেবে গ্রহণ করে। আর সেটিই হচ্ছে সংস্কৃতির উৎস বা লোকসংস্কৃতি। লোকসংস্কৃতির মাঝে থাকে সহজিয়া সুর। কৃত্রিমতাহীন, সহজাত এবং স্বাভাবিক স্রোতে বহমান নদীর মতো জীবনবোধ, মুক্তিযুদ্ধ আর প্রাত্যহিক জীবনাচরণের ধারাবাহিকতায় নিরন্তর প্রবহমান কৃষ্টিরূপ।

সমাজে সংস্কৃতি কোনো বাহ্যিক আড়ম্বর নয়, এটি নিতান্তই একটি সমাজের মানুষের জীবনচর্যার সৃজনশীল ঐতিহাসিক রূপ তথা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তন্মধ্যে আধুনিকতার ডামাডোলে অনেক কিছুর বিবর্তন-পরিবর্তন হলেও লোকসংস্কৃতিই হলো এখানকার নিজস্ব সংস্কৃতি ও মূল সংস্কৃতি।

মূলত ‘লোক’ নামে কথিত সাধারণ মানুষদের প্রতিদিনের জীবনাচরণ আর নৈমিত্তিক আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নিহিত আছে বাংলার লোকসংস্কৃতি। লোকসংস্কৃতি, লোকঐতিহ্য, লোকগীতি, লোককথা আর লোকশিল্পের মালায় গাঁথা বাংলার লোকসংস্কৃতি। শুধু তাই নয়, এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ।

প্রাচীনকালে বাইরে থেকে যারা এ দেশে এসেছে তাদের মধ্যে আর্য, শক, হুন, কোচ, মেচ, সেন, আরবীয়, ইরানি, তুর্কী, আফগান, মোগল, পাঠান, আফ্রিকান, ইউরোপীয়, উলন্দাজ, ইংরেজ, বিহারি, পাকিস্তানি, আরাকানি ইত্যাদি নানা স্রোতের সংস্কৃতি বিনির্মাণে উপাদান জুগিয়েছে। এখানকার মানুষ নানা ধর্ম পালন করলেও কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ার কারণে কৃষির নানা উপাচার তাদের জীবনবোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে। যে যে ধর্মেরই অনুসারী হোক না কেন, সেগুলোকে উৎরিয়ে কৃষির সেসব উপাচার এখানকার মানুষের সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

এখানকার লোক তথা জনবসতির আবহমানকালের ধারায় গড়ে উঠা সংস্কৃতিই হলো মূলত এখানকার লোকসংস্কৃতি। কালের প্রবাহে এবং বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শাসন-শোষণ, তোষণ, ইত্যাদি নানা ধারায় সংস্কৃতির রূপান্তর বা ক্রমবিবর্তন ঘটলেও লোকসংস্কৃতির মৌল ধারাটি কিন্তু এখনো অব্যাহত আছে। এভাবেই লোকসংস্কৃতি আবহমানকাল ধরে বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ইতিহাস ও বর্তমানের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে সেই জাতিকে আত্মবিস্মৃতির কবল থেকে উদ্ধার করে আসছে।

গ্রামীণ জীবনের আনন্দ-বেদনার কাব্য, জীবনবোধের প্রকাশ, তাদের পোশাক, খাবার, প্রার্থনা, পূজা-পার্বণ, ফসল, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বাসস্থান, বাহন, জীবন সংগ্রাম, দ্বন্দ্ব, বিরহ- এ সবই লোকসংস্কৃতিকে রূপ দেয়। লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে তার সামগ্রিক প্রকাশ ঘটে। লোকগানে, কবিতায়, সাহিত্যে, উৎসবে, খেলাধুলাতেও প্রকাশ পায় লোকসংস্কৃতি। আছে প্রবাদ-প্রবচন, খনার বচন, লোককথা। এর মধ্যে আছে প্রকৃতির কথা, ঋতুর কথা, ভালো-মন্দের কথা, জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় দিকের কথা। এসবের সঙ্গে আছে বিজ্ঞানের সম্পর্ক, আছে যুক্তির সম্পর্কও। লোকসংস্কৃতির অনেক উপাদানের রূপ-প্রকৃতির বিচার করে একে ৪টি প্রধান ধারায় ভাগ করা হয়- বস্তুগত, মানসজাত, অনুষ্ঠানমূলক ও প্রদর্শনমূলক।

কবি পূর্ণেন্দু পত্রী বলেছেন -

'লোকসংগীতে মেলে জীবনের ভাষা
মানুষের কথা শুনি লোকসংগীতে
নির্ভীক কোনো কবিকণ্ঠের গান
ম্রিয়মাণ মন জাগায় আচম্বিতে।'

লোকসংগীত বাংলার ঐতিহ্যের ধারক। বাঙালির লোকসংস্কৃতিতে যেমন স্থান পেয়েছে যাত্রাপালা, পিঠাউৎসব, নবান্ন, পুতুল নাচ তেমনই এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আধিপত্য বিস্তার করছে লোকসংগীত। তার মধ্যে জগেরগান, কবিগান, যোগীর গান, গোয়ালীর গান, ক্ষ্যাপাগান, জারিগান, মালশা গান, পালাগান বা কাহিনি গান, মুর্শিদি, মারফতি, ফকিরি ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, বাউল রয়ানী, হয়লা, গাজীর গান, ধানভানার গান, পালকীর গান উল্লেখযোগ্য। বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে একতারা, দোতরা, বাঁশি, ঢাক, ঢোল, খমক, খঞ্জনী বেশি ব্যবহৃত হতো।

তবে দেশের বেশিরভাগ লোকগীতি বা লোকনাট্য নির্মিত হয়েছে নদীকে কেন্দ্র করে। 'ধান-নদী-খাল' এর দেশে দক্ষিণাঞ্চলের সাংস্কৃতিক প্রভাবই প্রবল। এর যথোপযুক্ত কারণও রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং খাদ্যাভাসে বাঙালি ভাতের উপর পুরোদস্তর নির্ভরশীল হওয়ায় জীবিকার তাগিদে মানুষ ধানসহ অন্যান্য রবিশস্য বেশি চাষ করে। দক্ষিণাঞ্চলে দেশের অধিকাংশ নদীর অবস্থানের কারণে কৃষিজীবীদের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের নিবিড় সখ্যতা গড়ে উঠা। তাই 'লোক' অর্থাৎ সাধারণ মানষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-হতাশা, আমোদ-উৎসবে ধান এবং নদী একচ্ছত্র সিংহাসন দখল করে নিয়েছে। যেখানে উঠে এসেছে গ্রামীণ জনপদের জীবনধারণের ব্যবহার্য দ্রব্যসহ বস্তুগত সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান। যেমন বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, যানবাহন, সব পেশার যন্ত্রপাতি, কুটিরশিল্প, সৌখিন দ্রব্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যদ্রব্য, ঔষধপত্র ইত্যাদি।

নৌকার দাঁড় বাইতে বাইতে কখনো নায়ের মাঝি ভাটিয়ালি সুরে গেয়ে উঠতেন, 'মনমাঝি তোর বৈঠা নেরে, আমি আর তো বাইতে পারলাম না..'। জমির আলপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এখনো কানে ভেসে আসে 'হেই সামালো, হেই সামালো' এর মতো লোকজ গান। ধান ঘরে তোলার পর গ্রাম্য বধূরা ধান ভানার সময় সানন্দে গেয়ে উঠতেন,
'ও ধান ভানী রে, ঢেঁকিতে পার দিয়া,
ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া।'

নতুন ধান ভানার পর নতুন শস্যে গ্রামীণ পরিবারগুলো মেতে উঠত নবান্ন উৎসবে। এ ছাড়া নতুন বছর এলে প্রতিটি ঘরের গৃহিণীরা আমের পাতা ভিজিয়ে ভোরবেলা সমস্ত ঘরে ছিটিয়ে দিতেন। এই রীতিটি প্রচলিত ছিল পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে। ব্যবসায়ীরা পালন করতেন হালখাতা। এ ছাড়া বিস্তৃত মাঠ ছেয়ে বসত বৈশাখী মেলা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, মোরগের লড়াই।

যেকোনো উৎসবের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ ছিল মেলা। মেলায় আসত মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, মনোহরি মালামাল, টেপা পুতুল, বায়োস্কোপ, লাঠিখেলা, সার্কাস এবং যাত্রাপালা। যার মধ্যে বিখ্যাত একটি যাত্রাপালা ছিল 'দুনিয়া টাকার গোলাম'। বরিশালের হাটখোলায় বৃহৎ এলাকা নিয়ে বসত 'চৈত্র-সংক্রান্তির মেলা'। বানারীপাড়ার আহম্মদবাদ উপজেলার বেতালে গ্রামে বসত বিখ্যাত 'সূর্যমনির মেলা'।

শিল্পযুগের ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে নদীমাতৃক বাংলাদেশে আরেকটি অনন্য অনুষঙ্গ 'নৌকাবাইচ'। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আনন্দ আয়োজন, উৎসব ও খেলাধুলা সবকিছুতেই নদী ও নৌকার সরব আনাগোনা। মূলত ‘মেসোপটেমিয়ার’ মানুষদের শুরু করা খেলাটি কালের পরিক্রমায় আমাদের দেশেও চলে আসে। শুরু হয় নৌকাবাইচ। হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংস্করণ বাংলাদেশের নৌকাবাইচের সময় মাঝিরা একত্রে জয়ধ্বনি সহকারে নৌকা ছেড়ে দিয়েই একই লয়ে গান গাইতে আরম্ভ করেন এবং সেই গানের তালের ঝোঁকে ঝোঁকে বৈঠা টানে। কৃষকের নৌকায় যে মজুররা যায় তাদের ‘বাইচা’ বলে।

বাইচের দিন বাইচাদের খাবার আয়োজন হয় সকাল থেকেই। তারা খেয়ে কৃষকের দেওয়া একরঙা পোশাক পরে বাইচে যায়। টিকারা ও কাশির তালে চলে নৌকা। বাইচের স্বাভাবিক রীতিটি এমনি ছিল। কিন্তু ইংরেজ শাসনামলে সামন্ত জমিদাররা বাইচের সংস্কৃতিতে ঘুণ ধরায়। এরপর ক্রমেই কিছু নদীর নাব্যতা হারানো, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব এবং বাঙালিয়ানার মধ্যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একচ্ছত্র বিস্তারে নৌকাবাইচ এখন হয় না বললেই চলে।

একসময় বিয়ে বাড়িতে আনন্দের প্রধান উপাচার ছিল গানের পসরা যা পরিচিত ছিল 'বিয়ের গীত' বা 'হয়লা' হিসেবে। পালকিওয়ালারা পালকির গান গাইতে গাইতে নতুন বৌ নিয়ে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেত। এ ছাড়া বিয়েতে বহুল প্রচলিত ছিল নায়র আনার পর্ব। গ্রামীণ উৎসবে ধর্মীয় প্রভাবও কিছুটা লক্ষ্য করা যায়। হিন্দুসমাজে প্রচলিত ছিল রাধা-কৃষ্ণের কীর্তন, রয়ানী গান, চড়কপূজা, নীল নাচ ইত্যাদি। এ ছাড়াও প্রচলিত ছিল পুঁথিপাঠ। বিজয়গুপ্তের মনসা মঙ্গল পাঠ করা হতো পুরো অগ্রহায়ণ মাসজুড়ে, যা চলত শ্রাবণ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত এবং শেষ হতো মনসা পূজার মধ্য দিয়ে।

এ ছাড়া আঞ্চলিক যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রায়ই আয়োজন করা হতো লাঠিখেলা ও কুস্তি। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লাঠিয়ালরা মস্ত ট্রেনিং নিয়ে খেলতে আসতেন। গ্রামীণ এলাকা আরও প্রচলিত ছিল হা-ডু-ডু, দাঁড়িয়াবাধা, গোল্লাছুট, ডাংগুলি, মার্বেল খেলা, কানামাছি, বৌচির মতো আমোদপ্রদ সব খেলা।

মূলত মৌখিক ধারার লোকসাহিত্য মানসজাত লোকসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত৷ লোককাহিনি, লোকসংগীত, লোকগাথা, লোকনাট্য, ছড়া, ধাঁধা, মন্ত্র, প্রবাদ-প্রবচন প্রভৃতি গদ্যে-পদ্যে রচিত মৌখিক ধারার সাহিত্য। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাপুড়েরা সাপখেলা দেখাত। প্রচলিত ছিল বেদের নাচ। বিনের সঙ্গে সাপের নাচ দেখতে লোকেরা যেমন ভয় পেত, তেমন ভয়ের মধ্যেই খুঁজে নিত আনন্দের খোরাক।

লোকসংস্কৃতি আসলে কোনো জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধ অর্থনীতির দ্যোতক না হলেও সচেতন সমৃদ্ধ মানস অভিব্যক্তির পরিচায়ক। তবু সংস্কৃতি একটি দেশের ধারক ও বাহক হওয়া সত্ত্বেও লোকশিল্পীরা যথাযথ সাংস্কৃতিক এবং আর্থিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর সঙ্গে আকাশ সংস্কৃতি, শিল্পায়ন ও নগরায়নযুক্ত হয়ে গ্রামীণ লোকসংস্কৃতিকে ঠেলে দিয়েছে ধ্বংসের মুখে।

প্রযুক্তির নানা সুবিধার কারণে সংরক্ষণের অভাবে লোকসংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে। বাংলা লোকসংগীতের শক্তিশালী একটি ‘ঐতিহ্যবাহী ধারা’ ভাটিয়ালি গান, যার চর্চা এখন নেই বললেই চলে। ঐতিহ্যবাহী পুঁথিপাঠের সৃজনশীলতা, মানবভাবনা ও কাব্যত্ব না থাকার কারণে এ যুগের পাঠক তা পাঠ করেন না। গাড়িয়াল ভাইয়ের জন্য এখন আর কেউ পথ চেয়ে থাকে না। আশ্বিন মাস এলেই নদীতে নৌকাবাইচ হতো, নদীর ধারে বসত মেলা। এই মেলা থেকে কত রকম নকশা করা মাটির হাঁড়ি-পাতিল কেনা হতো, দেখতে পাওয়া যেত পুতুল নাচের মতো মনোরঞ্জনমূলক কত রকমের আয়োজন। এখন আর মেলা হয় না, নৌকাবাইচও হয় না, হয় না পুতুল নাচ।

গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি হলো দেশের প্রাণ। আর সেই প্রাণ যদি বিলুপ্তির পথে যায় তাহলে সে দেশ একদিন বসবাস অযোগ্য হয়ে যাবে। তাই দেশের ফুসফুসখ্যাত লোকসংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের তৎপর হতে হবে। নিজের দেশের সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব নিজেদের।

নিজ সংস্কৃতি রক্ষার্থে অগ্রণী ভূমিকা পালনের দায়িত্ব জাতির নিজেরই। গবেষক, শিল্পী, পৃষ্ঠপোষক এবং অবশ্যই শ্রোতামহল সবাকেই এক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা তো প্রয়োজনীয় বটেই, কিন্তু সবচেয়ে যে বিষয়টি এখানে প্রয়োজন তা হলো বর্তমানের শিল্পীদের শিল্পের প্রতি গভীর ভালোবাসা। কারণ হাজার প্রতিকূলতায়ও শিল্পকে তো বাঁচিয়ে রাখতে পারেন একমাত্র শিল্পী।

দেশের উন্নয়নে আধুনিকায়নের প্রয়োজন অবশ্যই আছে, কিন্তু সেই আধুনিকতার নামে নিজের সংস্কৃতিকে ভুলে যাওয়া কাম্য নয়। আমাদের ঐতিহ্য রক্ষায় সজাগ হতে হবে। বিশ্বায়নের স্রোতে গা ভাসিয়ে হারিয়ে ফেলা যাবে না আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই কেবল বাঁচতে পারে আমাদের চির পরিচিত লোকসংস্কৃতি। গ্রামের মানুষদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থা করতে হবে। লোকসংস্কৃতি রক্ষার্থে ব্যবস্থা করতে হবে দারিদ্র্য প্রণোদনার। মাসে মাসে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। শুধুমাত্র শখের বশে নয়, ব্যক্তিসত্তা এবং নাগরিকসত্তাকে একত্রিত করে লোকসংস্কৃতি রক্ষা করার দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে।

এসজি

Header Ad

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

ছবি: সংগৃহীত

দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা আশফাক নিপুন। কাজের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সরব তিনি। কথা বলেন নানা ইস্যু নিয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনেও বিভিন্ন সময় নিজের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন বার্তা দিয়েছেন। এবার এমনি একটি বার্তায় দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগনের আস্থার বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন এই নির্মাতা।

বুধবার (২০ নভেম্বর) আশফাক নিপুন তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে লেখেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সর্বস্তরের ছাত্র এবং সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, বাসায় বসে বসে দোয়া করেছিল, যার যা সামর্থ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল। কারণ, তারা দেখেছিল লড়াইটা আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসক বনাম সাধারণ ছাত্র-জনতার। এটাও অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে এই আন্দোলন বেগবান করতে বিরোধী সকল দলের কর্মীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের সংগ্রামও গত দেড় দশকের। কিন্তু এটা যদি শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার লড়াই হতো তাহলে সাধারণ মানুষ এই লড়াই থেকে দূরে থাকত। সেই প্রমাণ বিগত ১৫ বছরে আছে।

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ এখনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলকেই পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারে না। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা মেনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত কীভাবে সাধারণ জনগণের ভেতর নিজের দলের প্রতি আস্থা তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে নিরলস কাজ করা। এই আস্থা ক্ষমতায় গিয়ে অর্জন করা সম্ভব না। কারণ, সাধারণ মানুষ আজীবন এস্টাবলিশমেন্টের বিপক্ষে। এই আস্থা অর্জন করতে হয় ক্ষমতা বলয়ের বাইরে থেকেই।

নিপুন আরও লিখেন, অরাজনৈতিক সরকার দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যেমন কাজের কথা না ঠিক তেমনি রাজনৈতিক সরকার হতে চাওয়া সকল রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝা উচিত মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে সকল প্রকার পূর্বানুমান (যেমন- বর্ষাকালে আন্দোলন হয় না, নির্বাচনের আগেই কেবল জোরেশোরে আন্দোলন হয়, ঘোষণা দিয়ে বিরোধী সকল পক্ষ আন্দোলনে শামিল না হলে সফল হয় না) অগ্রাহ্য করেই। সেটা সম্ভব হয়েছে সাধারণ মানুষের ন্যায্যতার আকাঙ্ক্ষা থেকেই।

সবশেষ এই নির্মাতা লিখেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার দুই পয়সার দাম দেন নাই। সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা আর দেশপ্রেমকে পুঁজি করে অরাজনৈতিক এবং রাজনৈতিক যারাই রাজনীতি রাজনীতি খেলতে চাইবে, তাদের দশাও কোন একসময় যেন পলাতক শেখ হাসিনার মতো না হয়, সেই বিষয় নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকেই।

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘দেশের মানুষ এখনো কোনো রাজনৈতিক দলকেই বিশ্বাস করতে পারে না’
‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া