তেঁতুলিয়ায় বঙ্গবন্ধুর লেখা বই নিয়ে বইপড়া উৎসব
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই নিয়ে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় চলছে বইপড়া উৎসব। উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের ১২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী এই বইপড়া উৎসবে অংশ নিয়েছে। বই পড়ে তারা বঙ্গবন্ধুর জীবনী, রাজনৈতিক দর্শন, মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসসহ নানা অজানা বিষয় জানতে পারছে।
গত অক্টোবরে শুরু হওয়া এই বইপড়া উৎসব শেষ হবে আগামী বছরের জুনে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই তিনটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা। বঙ্গবন্ধুর রচিত এই বই তিনটি সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিতে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন বইপড়া উৎসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই কর্মসূচির নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধুকে পড়ো বাংলাদেশকে জানো’। পরে উৎসবের শেষে বইপড়া শিক্ষার্থীদের কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচিত করে তাদের উপহার হিসেবে বাইসাইকেল ও স্কুল ব্যাগসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বই পড়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল তারা। এই বইপড়া উৎসব তাদের নতুন করে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক অজানা বিষয় সহজেই জানতে পারছে তারা। তাই এই উৎসবে অংশ নিতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।
তেতুঁলিয়া উপজেলার কাজী শাহাবুদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান নদী বলেন, আমরা বইপড়া উৎসবের মাধ্যমে নিজের জ্ঞানের জগতকে আরও বিকশিত করতে পারছি। নিজেরা বই পড়ে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নানা অজানা ইতিহাস জানতে পারছি। এতে আমাদের খুব ভালো লাগছে।
একই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী মরিয়ম আক্তার বলেন, আগে আমরা টিভিতে কিংবা পত্রিকাতে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জেনেছি। এবার আমরা পড়ার মাধ্যেমে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারছি। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারছি। আমরা নিজেদের খুবই গর্বিত মনে করছি।
তেতুঁলিয়া উপজেলার কাজী শাহাবুদ্দীন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. ইমদাদুল হক বলেন, এই বইপড়া উৎসব শিক্ষার্থীদের বইমুখী করার পাশাপাশি ভার্চুয়াল জগতের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করবে। এতে করে তাদের জ্ঞান বিকাশের অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হবে। সবাই বইমুখী হবে।
তেতুঁলিয়া উপজেলার বীর প্রতীক আব্দুল মান্নান বলেন, এই বইপড়া উৎসবের মাধ্যেমে শিক্ষার্থীরা জাতির পিতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা ইতিহাস সম্পর্কে জানবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার পরামর্শ এই বীর প্রতীকের।
বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন থেকে শিক্ষা নিয়ে সোনার মানুষ তৈরি করাই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য বলে জানান তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান ডাবলু। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ছড়িয়ে পড়ুক। যাতে করে সেই ইতিহাস কেউ আর বিকৃত করতে না পারে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, বঙ্গবন্ধুর রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়া চীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই তিনটি সবাইকে পড়ার সুযোগ করে দিতে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন বইপড়া উৎসব কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বইপড়া উৎসব চালু রাখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য পুরস্কার হিসেবে নানা শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হবে। শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মাঝে এই উৎসব চালু করা হয়েছে যাতে করে সবাই মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস ও তথ্য জানতে পারে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন শিক্ষার্থীদের বাসায় বই পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে বইপড়া উৎসব চালু করেছিল উপজেলা প্রশাসন।
এসজি