সমাজের বাধায় পিছিয়ে না পড়া এক যোদ্ধার গল্প
সমাজের নানা বাধা ও প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পিছিয়ে না পড়া এক যোদ্ধার নাম আশিকুর রহমান তূর্য। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রতিদিন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে পায়ে হেঁটে ক্লাসে আসছেন তখন তূর্যের ক্লাসে আসার জন্য একমাত্র অবলম্বন তার হুইল চেয়ার। সহপাঠী মেহেদী, সুমন ও অনিকের উপর ভর করেই প্রতিদিন চারতলার ক্লাসে যান তিনি।
জানা গেছে, তূর্যের জন্ম ও বেড়ে উঠা খুলনা জেলার ফুলতলা এলাকায়। বাবা শাহিন খান ও মা লিপি বেগম। জন্মের পর থেকেই তার দুই পা সম্পূর্ণ অচল। অনেক চিকিৎসা করেও ঠিক হয়নি। এদিকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মানোর পর বাবা-মাও হতাশায় ভেঙে পড়েন। কিছুদিন পর তারা আলাদা হয়ে গেলে দাদীর স্নেহে বড় হতে থাকেন তূর্য। দাদী তাকে বড় হওয়ার সাহস জোগাতে থাকেন। তাকে প্রতিবন্ধী স্কুলে ভর্তি না করে সাধারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করেন। বিধবা দরিদ্র দাদী স্কুল থেকে দেওয়া সামান্য উপবৃত্তি দিয়ে চালাতে থাকেন তূর্যের পড়াশোনার খরচ। এভাবেই তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর সময় আসে আরও একটি বাঁধা। অনুপ্রেরণা দেওয়ার মানুষটি (দাদী) মারা যান। পরে কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় তার দায়িত্ব নেন ফুফু। এরপর মাধ্যমিকেও কৃতিত্বের সঙ্গে ‘এ’ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এবার উচ্চ শিক্ষার পালা। উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে নেমে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে। নিজের জমানো ১৯ হাজার টাকা দিয়ে একে একে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম সংগ্রহ করেন। একাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেন। ভর্তির সুযোগ পান বশেমুরবিপ্রবিতে। নিজ পছন্দে শুরু করেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা।
নিজের ব্যাপারে জানাতে গিয়ে তূর্য বলেন, প্রতিকূল অবস্থায় নিজেকে ঠেলে দিয়ে টিকে থাকার আনন্দের অনুভূতি সত্যিই কথায় বোঝানো সম্ভব নয়। সব সময় নিজের স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছি।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মানা শিক্ষার্থীদের জন্য তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। এ কথা আমাদের সবার মাথায় রাখতে হবে। স্রষ্টার সব সৃষ্টিই সুন্দর। এই সুন্দরকে পূঁজি করে সামনের দিকে অগ্রসর হলে আমরা সবাই দেশের সম্পদে পরিণত হব।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষষে তূর্য বলেন, ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। তবে সর্বোপরি নিজ দেশের জন্য একজন দক্ষ কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ার হয়ে জনগণের জন্য কাজ করাটাই মূল লক্ষ্যবস্তু।
তার ব্যাপারে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সভাপতি ড. সালেহ আহমেদ বলেন, তূর্য এক অনুপ্রেরণার নাম। আমরা ওর প্রচেষ্টা দেখে সত্যিই অবাক হই।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্থিক সহায়তার বিষয়ে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মো. শরাফত আলী বলেন, তূর্যের বিষয়ে জানতে পেরেছি। ওর সংগ্রামী জীবন আমাদের ভাবনার উদ্রেক তৈরি করে। ওর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের লিখিত আবেদন পেলে আমরা অবশ্যই ওর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
এসআইএইচ