কুড়িগ্রামে খেজুরের রস সংগ্রহে গাছিদের ব্যস্ততা
হেমন্তের দুই মাস পর শুরু হয়েছে শীতকাল। রৌদ্রজ্জ্বল দিনে এখনও প্রচণ্ড গরম অনুভূত হলেও শেষ বিকাল ও সকাল ৮টা পর্যন্ত শীত অনুভূত হচ্ছে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে। সীমান্তবর্তী এই জেলা ভারতের হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় শরত ও হেমন্তের শুরু থেকে আগাম শীতের আগমন ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে কুয়াশা আর ভোরে ঘাস ও আমন ধানের ডগায় শিশির বিন্দু জমে থাকাই সময় বলে দিচ্ছে গ্রামীণ এই জনপদে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। এদিকে পুরোপুরি শীত শুরু না হতেই গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের আগাম প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছে। গত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে গাছিরা রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, শীতের আমেজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে কোমরে দড়ি, ছেনি, দা বেঁধে নিপুণ হাতে খেজুর গাছগুলো প্রস্তুত করছেন চাষিরা। আবার অনেকেই রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করছেন। উপজেলার পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে খেজুর গাছ তেমন না থাকলেও ফসলি জমির আইল ও সড়কের দুই ধারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুরের গাছ লাগিয়েছেন কৃষকরা।
প্রতি বছরের মতো চলতি বছরেও রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা থেকে ফুলবাড়ীতে এসে বানিজ্যিকভাবে খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করছেন শুক্কুর আলী (৪৬)। গুড় বিক্রির আয় দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গাছি শুক্কুর আলী তার ভাইসহ এই অঞ্চলে ৪ থেকে ৫ মাস কাঁটাবেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে শুক্কুর আলী আরও জানান, ওই এলাকার বিভিন্ন কৃষকের ১৪০টি খেজুর গাছ কন্ট্রাক নিয়ে রস সংগ্রহ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বছরেই লাভবান হন তিনি।
উপজেলার নাওডাঙ্গা এলাকার গাছি আব্দুল রশিদ ও রেজাউল ইসলাম জানান, এখন আর আগের মতো খেজুর গাছ নেই। তারা দুজনেই বাড়ি থেকে ১ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করছেন। প্রতি বছরের মতো এ বছরও তারা প্রত্যেকে ৩০-৪০টি খেজুর গাছ কন্ট্রাক নিয়েছেন। গাছ প্রতি গাছের মালিককে আড়াই থেকে তিন কেজি গুড় দিতে হবে। অন্য বছরের চেয়ে এ বছর খরের দাম বেশি। তাই এ বছর ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দরে খেজুরের গুড় বিক্রি করছেন। সব খরচ মিটিয়ে এই চার থেকে পাঁচ মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে জানান তারা।
নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, আগে শীত মৌসুমে প্রতিটি গ্রামে সকাল হলেই খেজুর রস খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। সেই সঙ্গে গুড়-পাটালির ঘ্রাণে মৌ মৌ করত সকালটা। কিন্তু এখন আর সেই সব দিন নেই। আগের চেয়ে খেজুর গাছের সংস্যাও দিন দিন কমে যাচ্ছে। শীতের সময় শুধু গ্রামই নয় শহরেও খেজুরের রস-গুড় দিয়ে তৈরি করা হরেক রকমের পিঠা-পুলি, ক্ষির ও পায়েস খেতেন। ফলে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কম হওয়ায় গুড়ের দামও অনেক বেশি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে সাড়ে ৩ হাজার খেজুর গাছ আছে। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর গাছের বাগান গড়ে তোলা হলে কৃষকরা লাভবান হবেন। কারণ খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনও পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষকদের বাড়ির আশপাশে ও পুকুরপাড়ে এবং সড়কের দুই ধারে খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
এসআইএইচ