ইউটিউবের মাধ্যমে লাখপতি ববি শিক্ষার্থী হামীম
ইউটিউব ও ফেইসবুকে নানা বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণমূলক ভিডিও তৈরি করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান হামীম হয়েছেন লাখপতি।
ইউটিউব থেকে গত পাঁচ বছরে ১৮ লাখ টাকা আয় করেছেন হামীম। বর্তমানে ফেসবুক ও ইউটিউবের ভিডিও কনটেন্ট থেকে তার মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকার বেশি। তার ইউটিউবে সাবসক্রাইবার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ। ভিডিও কনটেন্ট রয়েছে এক হাজার ৬০০। প্রতিদিনই একটা, দুটো ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করেন তিনি। এ বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকেও ভিডিও কনটেন্ট শেয়ার শুরু করেন। সেখান থেকে মাসিক আয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
বর্তমানে পরিবারের ত্রাণকর্তাও হামীম। কারণ পড়াশুনার পাশাপাশি নিজে সাবলম্বী হয়েছে, দাঁড়িয়েছেন পরিবারের পাশেও। একই কন্টেন্ট দিয়ে ফেসবুক ও ইউটিউবে ইনকামের সুযোগ রয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে পড়ালেখার পাশাপাশি ইউটিউবে কন্টেন্ট আপলোড করছেন তিনি। এখন পরিবারের শতভাগ খরচ ও নিজের খরচ বহন করছেন।
তিনি জানান, ২০১৭ সালের ১ আগস্ট। শেরে বাংলা হলের ডাইনিংয়ে দুপুরে খেতে বসে সহপাঠীর কাছ থেকে জানতে পারেন তাদের আরেক সহপাঠী ইউটিউব থেকে কিছু টাকা পেয়েছেন। এর আগেও শুনেছেন ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়। কিন্তু, বাস্তবে কোনো ধারণা ছিল না। নিজের রুমে এসে জানলেন, পাশের রুমের অন্য এক সহপাঠী শিমুলও ইউটিউবিং করে। তখনই তার কাছ থেকে সফটওয়ার নিয়ে কিছু কাজ শিখে নিলেন। ওই দিনই একটা ভিডিও বানিয়ে আপলোড করলেন। সেদিন থেকেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়ে গেল। টানা এক মাস ভিডিও বানালেন। প্রায় ৭০টি ভিডিও আপলোড করেও কোনো ভিউ নেই। বাড়ির সবাই বললেন, কী শুরু করেছিস, পড়ালেখা বাদ দিয়ে? মেহেদী তবুও কাজ চালিয়ে গেলেন।
হামীম জানান, ২ সেপ্টেম্বর কোরবানির ঈদের দিন নামাজ পড়ে এসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে ভিডিও বানালেন। আপলোড করার পরে ভালো ভিউ আসতে থাকল। এক দিনে এক লাখের বেশি ভিউ হলো। পরে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ভিডিও দিলে ভালো ভিউ আসত। ১০ হাজার ভিউ এর শর্ত পূর্ণ হলো (বর্তমানে চার হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম এবং এক হাজার সাবস্ক্রাইবার)। ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে মনিটাইজেশনের জন্য ইউটিউবের কাছে আবেদন করলেন। সন্ধ্যায় অনুমোদন পাওয়া গেল এবং আয় শুরু হয়ে গেল। ফ্রান্স থেকে বাড়িতে চিঠি এল ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। জীবনের প্রথম আয় ১৩ হাজার টাকা হাতে পেলেন ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে।
মেহেদী হাসান হামিম বলেন, 'ইউটিউব হলো ধৈর্যের পরীক্ষা। অন্যরা যেখানে বিকেলে সময় পেলে একটু ঘুরতে যায়, তখন আমি হলের বেলকনিতে বসে রেকর্ডিং করেছি, ভিডিও বানিয়েছি। আটজনের এক রুম যখন একটু ফাঁকা হবে, তখন আমি রেকর্ডিং করব, এ আশায় বসে থাকতাম। এভাবেই পথচলা শুরু। আমার ইউটিউব চ্যানেলে এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পূর্ণ হওয়ায় ২০১৮ সালের ৯ আগস্ট ইউটিউব থেকে সিলভার প্লে বাটন ক্রিয়েটর অ্যাওয়ার্ডটি হাতে পাই।'
তিনি আরও বলেন, ইউটিউবিং এ কেউ আসতে চাইলে তাকে চরম ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়। আর একবার সফলতা পেয়ে গেলে পরে একটু কম সময় দিলেও চলে।
মেহেদী হাসান নতুনদের উদ্দেশে বলেন, 'যারা ইউটিউবিং শুরু করতে চান তাদের বলব, আপনি যেটাতে দক্ষ, আপনার যেটা ভালো লাগে সারাদিন যেটা নিয়ে চিন্তা করতে পারবেন, বোরিং হবেন না সেটা নিয়েই কাজ করুন। কারণ নিজের উপযুক্ত জিনিস খুঁজে বের করা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ ফুটবল খেলে ভালো সফলতা পেয়েছে, তাই বলে আপনিও ফুটবল খেলতে নেমে যাবেন না। আপনি হয়তো ভালো ক্রিকেট খেলেন, ওটা দিয়েই শুরু করুন। কেউ কেউ সফলতা পায় মাত্র এক মাসে বা তারও কম সময়ে। আবার কেউ পায় ছয় মাসে বা বছরে। আমার সফলতা এসেছে এক মাসে। এটা নির্ভর করে কাজ কতটা অনন্য, মান, ধারাবাহিকতার ওপর। তবে ধারাবাহিকতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর শতভাগ কপি, পেস্ট, শর্টকাট চিন্তা থাকলে কখনোই সফলতা আসবে না। তাই নিজের দক্ষতা, সৃজনশীলতা রয়েছে সে বিষয়েই কাজ করুন। লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।'
এসএন