ভোলারোড সমৃদ্ধ করছে ববির সৌন্দর্য
পিচঢালা মসৃণ পথ। মাথার উপর কানাকানি করছে দুপাশের গাছগুলো। সবুজের মহাসম্মেলনে প্রকৃতির এমন উচ্ছ্বাস দেখা যায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দক্ষিণ দিকের ফটক পার হলেই ভোলা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় ১১ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে। এটিই 'ভোলা রোড' নামে পরিচিত। সড়কটি গিয়ে মিশেছে ভেদুরিয়া ফেরিঘাটে, সমগ্র রাস্তাজুড়ে এক সবুজের হাতছানি।
সড়কজুড়ে রয়েছে শত শত গাছের সারি। সবুজে ঘেরা এ মহাসড়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়েছে। পাশেই রয়েছে নদী। তার তীর ঘেঁষে একেঁবেকেঁ চলে গেছে এ ভোলা বরিশাল মহাসড়কটি।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন নৈস্বর্গিক পটুয়াখালী-ভোলা-বরিশাল মহাসড়ক নিয়ে রোমাঞ্চকর অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী নাহার। তিনি বলেন, 'আমার কাছে ভোলা রোড বৃষ্টির দিনে স্বর্গের মতো লাগে। শুধু অপূর্ণ ইচ্ছে রয়ে গেছে, হালকা বৃষ্টি বা ঝুম বৃষ্টির পরে ওই রাস্তায় সাইকেল চালানো। সাইকেল পাই তো মানুষ পাই না। আবার যখন কেউ বলে আসো তখন আবার বৃষ্টি হয় না।'
মহাসড়কটিতে হাঁটতে হাঁটতে কানে ভেসে আসবে পাখির কিচির-মিচির শব্দ। মনে হবে গ্রাম বাংলার কোনো এক মেঠোপথ দিয়ে হাঁটছি। দুপাশে সবুজের সমারোহ সৌন্দর্যের এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যানজট কোলাহলমুক্ত এ সড়কে শিক্ষার্থীরা মাঝে মাঝেই তাদের অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করতে আসেন। কেউ কেউ আবার বিকালে হাঁটেন মহাসড়কের সবুজবৃক্ষের পাতার ছায়ায়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বরিশাল-ভোলা সড়কের হিরণ পয়েন্ট থেকে চরকাউয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তিন ধরনের ফুলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হয়। ফুলের সরণি বিনির্মাণের লক্ষ্যে বরিশাল-ভোলা সড়কে প্রায় তিন হাজার ফুলের গাছ রোপন করা হয় ২০১৭ সালে।
তিন ধরনের বৃক্ষরোপণের মধ্যে দিয়ে সড়কটিকে রঙিন ফুলে আচ্ছাদিত করার লক্ষ্যে বরিশালের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মো. গাজী সাইফুজ্জামানের উদ্যোগে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল বৃক্ষরোপণ করা হয়।
সেসময় বরিশাল জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ফুল সরণি বিনির্মাণে ফুলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে অংশ নেয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। পাশাপাশি অংশ নেয় ৯৬টি এনজিও সংস্থা, সিটি করপোরেশন ও বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জারিন আনিকা বলেন, 'বিকেলে বন্ধুদের আড্ডার একটি অন্যতম পছন্দের জায়গা ভোলা রোড। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মনকে সতেজ ও জ্ঞানকে সুশৃঙ্খল করে।’
মহাসড়কটি কাজ করছে শ্রমজীবী মানুষের আয়ের উৎস হিসেবেও, এখানে রয়েছে অসংখ্য টংয়ের চায়ের দোকান। বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলেও ভোলা রোডের সৌন্দর্য কোনো অংশে কমে না। সন্ধ্যা নামলে পরে অন্য রকম বিচিত্র সৌন্দর্য! ভোলারোডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে উপভোগ করতে করতে দর্শনার্থী ও পথযাত্রীরা কখনো বা পিচঢালা রাস্তার পাশে আবার কখনো নিজেদের ক্লান্তি দূর করতে বসে যান টংয়ের দোকানে চায়ের আড্ডায়।
এসএন