বায়ুদূষণে ভুগছে ইউরোপ, ঝুঁকিতে বাংলাদেশও: ইইএ
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বায়ু দূষণে ভুগছে ইউরোপও। প্রতি বছর বায়ু দূষণে ইউরোপে ১২০০ শিশু ও তরুণের মৃত্যু হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইউরোপীয় পরিবেশ সংস্থা (ইইএ) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিনিয়ত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসনালী সংক্রমণসহ বায়ু দূষণজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইইএ-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর শহরে বসবাসরত মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ বায়ুদূষণের ক্ষতিকর মাত্রার সংস্পর্শে এসেছে। এই সব এলাকায় বায়ুদূষণের জন্য দায়ী নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, ওজন এক্সপোজার এবং পিএম ২ দশমিক ৫ যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
মূলত শিল্প কারখানা এবং বসত বাড়িতে কয়লার মতো জ্বালানি পোড়ানোর কারণে এই সকল ক্ষতিকর গ্যাস ও বস্তুকণা সৃষ্টি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশেও বায়ুদূষণের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে গত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১০ জন।
গত ৫ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব অ্যাজমা দিবস’। দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘সবার জন্য অ্যাজমার যত্ন।’ চিকিৎসকরা বলছেন, দেশে গত পাঁচ বছরের চেয়ে এখন অ্যাজমা রোগীর সংখ্যা দুই থেকে তিন গুণ। শুষ্ক মৌসুমে রোগীর চাপ বাড়ে। এর একটি বড় কারণ বায়ুদূষণ। পরিবেশবিদরা বলছেন, দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর থাকছে রাজধানী ঢাকার বাতাস।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বায়ুমণ্ডলীয় অধ্যায়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এক প্রতিবেদনে বলেছে, এবারের ঈদুল ফিতরের আগে এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকায় যতটা বায়ুদূষণ হয়েছে তা গত আট বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। এমনকি গত ৩০ এপ্রিল ঢাকা দূষিত বায়ুর তালিকায় ১৫৩ স্কোর নিয়ে চতুর্থ অবস্থানে ছিল। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স এর মতে, এই মান খুবই অস্বাস্থ্যকর। এই অস্বাস্থ্যকর বায়ু শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এজন্য তাদের বাড়ির ভেতরে অবস্থান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মূলত ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য দায়ী বস্তুকণা (পিএম ১০ ও পিএম ২.৫), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনো-অক্সাইড এবং ওজোন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে ধুলা ও ধোঁয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের বায়ুমান গবেষণা কেন্দ্রের হিসেবে এই ধুলা ও ধোঁয়ার উপস্থিতি বায়ুতে ৫০ শতাংশ।
তাদের মতে, এই ধুলার বড় উৎস অব্যবস্থাপনার মধ্যে দিয়ে চলা নির্মাণকাজ এবং পুরানো যানবাহনের দূষিত বায়ু।
পাশাপাশি খড়, কাঠ ও তুষের মতো জৈব্য বস্তুর ধোঁয়া ও সুক্ষ্ম বস্তুকণা এই দূষণের জন্য দায়ী, বাতাসে যার উপস্থিতি প্রায় ৪০ শতাংশ। তবে ক্যাপসের মতে, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হলো ইটভাটা এবং শিল্পকারখানার থেকে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া।
চলমান এই বায়ুদূষণের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে গর্ভবতী মা এবং শিশুরা। এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সবুজ এলাকা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন ইইএ।
এনএইচবি/এমএমএ/