ড. নেওমি ক্যাম্পবেল
৭ জুলাই, ২০২২ ব্রিটেনে ১৮৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কেন্ট ইনস্টিটিউট অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন’ থেকে জন্ম নেওয়া ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস, ইউকে’ মডেলিংয়ের কিংবদন্তী নেওমি ক্যাম্পবেলকে ফ্যাশন ইন্ড্রাস্ট্রিতে তার সেবাদানের জন্য একটি সম্মানসূচক ‘পিএইচডি’ প্রদান করেছে।
নেওমি এলেইন ক্যাম্পবেল নামের এই মেয়েটি জন্মেছেন উত্তর লন্ডনের লামবেথের স্ট্রেথামে। জামাইকা থেকে ব্রিটেনে অভিবাসী একটি পরিবারের সন্তান। জ্যামাইকান নৃত্যশিল্পী ভ্যালরি মরেসের গর্ভে তার জন্ম। মায়ের সাথে একমত পোষণ করে কোনোদিনও তার বাবার সঙ্গে দেখা করেননি। বাবা তার মাকে চার মাসে গর্ভে থাকা অবস্থায় ফেলে চলে গিয়েছেন। ফলে জন্ম নিবন্ধনে বাবার নামটি খালি রাখতে হয়েছে। মায়ের দ্বিতীয় বিয়ের পর ক্যাম্পবেল নামটি এই বাবার কাছ থেকে নিয়েছেন। আফ্রিকান-জ্যামাইকান নেওমি, চাইনিজ-জ্যামাইকানও। তার দাদী চীনের মানুষ, নাম মিং।
জীবনের শুরুর বছরগুলোর ইতালির রোমে কাটিয়েছেন নেওমি। একজন আধুনিক নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করতেন তার মা। তারা পরে লন্ডনে ফিরে এলেন। তিনি আত্মীয়স্বজনের কাছে থাকতে শুরু করলেন। মা পুরো ইউরোপ জুড়ে নাচের দল ফ্যান্টাসটিকার হয়ে কাজ করলেন। তিন বছর বয়স থেকে বারবারা স্পিক স্টেজ স্কুলে যাওয়া শুরু করলেন নেওমি। ১০ বছর বয়সে ইতালিয়া কন্তি অ্যাকাডেমি ফর থিয়েটার আর্টসে ভর্তি হলেন। সেখানেই ব্যালে শেখার শুরু করলেন। তিনি ডানরেইভেন স্কুলেও পড়েছেন।
বিশ্বের ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে বিখ্যাত, পেশাদার, দামী এবং ধনী কালো মেয়ে সুপারমডেল হলেন নেওমি ক্যাম্পবেল। তিনি অভিনয়, গানও করেন। তিনি বিখ্যাত ব্যবসায়ী। মোটে ১৫ বছরে এই মেয়েটির ক্যারিয়ারের শুরু, ১৯৮৬ সালে। সে বছরই তিনি জ্যাসপার কনরানের পোষাক পরে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তিনি একজন ওবিই, ইংরেজ ডিজাইনার, বাড়ি, ব্যালে, মঞ্চের মেয়েদের পোষাক তৈরি করেন। এখন নেওমি ৫২। চার দশকের পেশাজীবনে নিজেকে সবচেয়ে স্বীকৃত ও আকাংখিত মডেলদের একজন হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ফ্যাশন শিল্প যে ছয়জনকে তার প্রজন্মের সুপারমডেল হিসেবে বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সুবাদে, তাদের একজন তিনি। তার একটি আর অ্যান্ড বি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। টিভিতেও কাজ করেছেন। নানা কারণে তিনি দাতব্য সেবা কাজ করেন।
ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস, ইউকে তাকে পিএইচডি প্রদানের সম্মাননাপত্রে উল্লেখ করেছে, এই মেয়েটিকে ১৫ বছর বয়সে একজন স্কাউট আবিস্কার করেন। তিনি বৈশ্বিক ফ্যাশন জগতের শেষ সীমায় পৌঁছেছেন তাকে অবমূল্যায়নের হাত থেকেও বাঁচাতে। সক্রিয়ভাবে ফ্যাশনে কাজ করার তার নিবেদন ও দাতব্য কাজগুলোর মাধ্যমে তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মডেল হিসেবে টাইম, ফ্রেঞ্চ ভোগ ও রাশিয়ান ভোগের কভার হয়েছেন। তিনি এভাবেই বিশ্বজুড়ে একটি ঘরে, ঘরে পরিচিত মডেল হয়েছেন। বিনয়ী রানী এই বিষয়ে তেমন কিছু তার স্বল্পকালের ভিডিওতে পোস্ট করেননি। পাফেক্ট এটি শেয়ার করেছে। সেখানে তারা দেখিয়েছেন, নেওমি ক্যাম্পবেল ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করছেন ও একটি আবেগপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ আর্টস, ইউকে’র অনার্স ও মাস্টার্স লেভেলের ছাত্র, ছাত্রীদের ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের সময় তিনি নিয়মানুসারে এই ভাষণটি দিয়েছেন লন্ডনে। তখন তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছিল। এর মধ্যে নেওমি ক্যাম্পবেল বলেছেন থেমে, থেমে, ‘আমি কেবল ভাবছি, গতকাল ছিলাম স্প্যানিশ মৃত ডিজাইনার ক্রিস্তোবাল বালেনসিগার পোশাক নিয়ে মঞ্চে। এখানে আজ আসতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। কখনো কাউকে যে অনুভূতির পথরেখা তুমি অনুভব করো, সেটি বদলাতে বা পরিবর্তন করতে দিও না। কোনোভাবেই বদলে দিও না তোমার নিজের ও স্বপ্নের এবং আপনার জন্য কাজ করা গতিপথ। আমি খুব শক্ত মানসসিকতার একদল নারীর মধ্যে বড় হয়েছি। তাদের মধ্যে আছেন আমার মা, নানী ও বোনেরা। আমার সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে নিজেকে সমর্পণ, উৎসর্গ, সংকল্প, দৃঢ়চরিত্র ও তাড়না। কখনো নিজের স্বপ্ন থেকে সরে যেও না।’ তাকে পিএইচডি দেওয়া হয়েছে লন্ডনের রয়্যাল ফেস্টিভাল হলে।
নেওমিকে বিবেচনা করা হয় ৯০ দশকের সত্যিকারের মডেলদের একজন। প্যারিস ফ্যাশন উইকের অন্যতম সেরা সৃষ্টি। হেভিওয়েট ডিজাইনার ও হাউজ শ্যানেল, ভেসাচি, ভিভিয়েন ওয়েস্টউড, ডিঅরের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। আরো কত ডিজাইনার ও ফ্যাশন হাউজের পোশাক পরেছেন নেওমি ক্যাম্পবেল তার ৩৭ বছরের সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে, নিজেও জানেন না। প্রচ্ছদ আলোকচিত্র হয়েছেন মারিও এদোয়ার্দো তেসতিনো সিলভা ওবিই, নারী আলোকচিত্রী ও মডেল এলেন ফন উনবিয়াট ও সাবেক হেলমেট নিউটনের ক্যামেরায়।
২০০৫ সালে নিজের স্বেচ্ছাসেবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘দি চ্যারিটি ফ্যাশন ফর রিলিফ’ প্রতিষ্ঠা করেন। সে বছরই তারা হারিকেন ক্যাটরিনা, ২০০৯ সালে ভারতে সন্ত্রাসীদের আক্রমণ, ২০১০ সালে হাইতি ভূমিকম্প ও পরের বছর জাপানের ভূমিকম্পে আক্রান্তদের বাঁচাতে সাহায্য তহবিল সংগ্রহ করেছেন ফ্যাশন শোতে।
নেওমি ক্যাম্পবেল দি ব্রিটিশ ফ্যাশন কাউন্সিলের ‘ফ্যাশন আইকন’ পদকে ভূষিত। ২০২১ সালে তার মেয়ে হয়েছে ও পরের বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ ভোগকে নিশ্চিত করেন, তারই গর্ভজাত। তাকে নিয়ে তিনি প্রচ্ছদ মডেলও হয়েছেন।
ফ্যাশন জগতে অনেকগুলো ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই পিএইচডি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তাদের অনার্স বা সম্মান শ্রেণীর স্মাতক পাশের সাটিফিকেট অনুষ্ঠানেরও সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হিসেবে গিয়েছেন তিনি। এই অনুষ্ঠানে নেওমির জীবনের প্রেরণা তার মা ভ্যালরি মরেসও অংশ নিয়েছেন। তিনিও মেয়ের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ব্রিটিশ বিলাসবহুল ফ্যাশন বার্বেরির পোশাক পরেছেন। নেওমি ক্যাম্পবেল একজন সমাজঅধিকার কর্মী হিসেবেও খ্যাতিমান।
১. উপস্থিত ও বক্তব্য রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
২. অধ্যাপক ড. সাইমন ম্যাকলিন ও ড. সারাহ ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে তার পিএইচডি উৎসবে অংশ নিচ্ছেন।
৩. ফ্যাশন আইকন নেওমি ক্যাম্পবেল।
ওএস।