তরুণ মজুমদার একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন : ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত এখন আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এবারের উত্তর আমেরিকান বাঙালি কনফারেন্সে অংশ নিতে। তারপরও নিজের তরুণ মজুমদারের মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন। তিনি তার তিনটি ছবিতে নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছেন-‘আলো’, ‘চাঁদের বাড়ি’ ও ‘ভালোবাসার বাড়ি’। এই প্রখ্যাত পরিচালকের ‘আলো’ ছবিটি তাকে বিভিন্ন ভাগের মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা এনে দিয়েছে। ছবিটি তরুণ মজুমদারের অন্যতম কীর্তি বা সেরা ছবি হিসেবে স্বীকৃত।
বিখ্যাত এই চলচ্চিত্র পরিচালককে এভাবে মনে করেছেন ঋতুপর্ণা, ‘তিনি নেই ভাবতেও আমার খারাপ লাগে। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান ছিলেন। তিনি তার শিল্পের একটি বিরাট অংশ বৈশ্বিকভাবে আমাদের দিয়ে গিয়েছেন। আমরা তার নির্মাণ ও দর্শনের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছি। তিনি ভারতীয় সিনেমাকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছেন। সিনেমার একটি নতুন ভাষার জন্য তার ধ্রুব সাধনা আমাদের কয়েকটি মেধাবী চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে। তিনি প্রায়ই মোকাবেলা করতেন বা কাজ করতেন পুণ:আবিস্কার অথবা পুণ:নিমাণ-পুরোনো সম্পর্কগুলোর। এই বিষয়ের একটি অংশ হিসেবে তিনি ভালোবাসা নিয়ে কাজ করতেন। আমি মনে করি না, এখানে তার মতো মেধা নিয়ে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি বেশি মানুষের আছে।’
তিনি তার সঙ্গে নিজের কাজের অভিজ্ঞতাও ভাগ করে নিয়েছেন। আরো বলেছেন, ‘এই প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালকের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি তাকে ঘনিষ্টভাবে দেখেছি। মনে করি, তার কাছ থেকে বিশেষ অধিকার লাভ করেছি ও আশীর্বাদ কুড়িয়েছি। এই কারণে আমি ধন্য যে, তার তিনটি ছবিতে অভিনয় করেছি। প্রতিটি ছবিই দর্শকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে। আলো বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে একটি উদাহরণ তৈরি করেছে। ছবিটি বাংলা সিনেমার একটি নতুন ভোর। একটি মাইলফলক। আজকেও আলোর মতো আরেকটি ছবি বানানো যেত কী না ভক্ত ও দর্শকরা আমাকে প্রশ্ন করেন। তিনি ২০০৭ সালে চাঁদের বাড়ি বানিয়েছেন আমাকে নিয়ে। সেখানে সোহাম চক্রবর্তী, কোয়েল ও রঞ্জিত মল্লিক অভিনয় করেছেন। আমি সেই ছবির একটি অংশ ছিলাম। তার সঙ্গে আমার শেষ ছবি ভালোবাসার বাড়ি। একটি ভালোবাসার ঘরের, গৃহস্থালি জীবনের গল্প। গল্পটিকে পুরোপুরি ভালোবেসেছি।’
ঋতুপর্ণা আরো গুরুত্ব দিয়েছেন, কীভাবে সঙ্গীতকে তার ছবিগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করতেন। তিনি বলেছেন, ‘একটি পরিবারের ভেতরে ভালোবাসাকে কীভাবে মূল্যায়ন করতে হয় তার চেয়ে বেশি কেউ জানতেন না। তার এর মধ্যে সঙ্গীতকে কীভাবে, কোথায় যুক্ত করতে হবে সেই বোধ সবচেয়ে ভালো তার ছিল। অদ্বিতীয় হিসেবে তার সিনেমাগুলোতে রবীন্দ্রঙ্গীতকে ব্যবহার করেছেন। এই গানগুলো ছবিগুলোকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে।’
তার প্রিয় ছবির কথা বলতে গিয়ে ভারতের টালিগঞ্জের প্রধান এই নায়িকা বলেছেন, ‘দাদার কীর্তি ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’, ‘পলাতক’ ও ‘গণদেবতা’র কথা।
বাংলা সিনেমার সবচেয়ে সফল একজন অভিনেত্রী তিনি। একটি সর্বভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দুটি ফিল্মফেয়ার, চারটি বিএফজেএ ও চারটি আনন্দলোক জয় করা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘তরুণ মজুমদার একজন ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা ছিলেন। তিনি বিশাল বৈচিত্র্যপূর্ণ সিনেমাগুলো আমাদের দিয়েছেন। তার মৃত্যুর খবরটি পেয়ে বেদনায় ভেঙে পড়েছি। আমি অনেক দূরে আছি এবং তার পরিবারের পাশে থাকতে পারছি না।’
‘আমি বলতে চাই, তরুণদা আপনি আমাদের গর্ব। আপনি মাস্টার। আমার নমস্কার গ্রহণ করুন।’
ওএস।