এই মানুষদের গল্পগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি : ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তরুণ মজুমদার সত্যজিৎ রায়কে অনুসরণ করতেন এভাবে-‘সবসময় সবার ওপরে গল্প বলাকে গুরুত্ব দিয়ে’।
তিনি তার সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘দাদার কীর্তি’, ‘বালিকা বধু’, ‘ফুলেশ্বরী’, ‘আলো’র জন্যও বিখ্যাত।
তিনি হাল আমলের ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর সঙ্গেও কাজ করেছেন ‘ভালোবাসার বাড়ি’ নিয়ে। এই ছবি নিয়ে আলাপের সময় ওপরের কথাগুলো বলেছিলেন তিনি। এখানে মৃণাল সেনের প্রিয় অভিনেত্রী শ্রীলা মজুমদার ও মঞ্চ ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী কাজ করেছেন। ছবিটি লেখক-সাংবাদিক প্রচেত গুপ্তর একটি ছোটগল্প নিয়ে।
“রায়ের এই উক্তিটি বিখ্যাত, ‘যদি আমার ছবিটি কোনো গল্প না বলে সেটি কোনো কথাই বলে না”, বলেছেন আরেক কিংবদন্তী চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার।
তরুণ মজুমদার খ্যাতি লাভ করেছেন তার ট্রেডমার্ক স্টাইল একটি সুখী মধ্যবিত্ত পরিবারের গল্প বুনে দেওয়ার জন্য। তাদের ছোট, ছোট আনন্দ, সুখ, কান্না, ব্যাথা ও একত্রে বসবাসের পুরো কাহিনীকে নিয়ে এসে।
তিনি বলেছেন, ‘আপনি যদি আমার কোনো একটি সিনেমাও দেখেন, আমি কখনো আমার স্টাইল থেকে পথচ্যুত হইনি। আমার আলাদা বর্ণনারীতি থেকে সরে আসিনি। আমার সঙ্গীতের ধারা আছে। সেটি এখনো বদলানোর কোনো কারণ আমি দেখি না।’
তরুণ মজুমদার বীরভূম জেলার লাল মাটি অঞ্চলে আউটডোর শুটিং করতে ভালোবাসতেন। তিনি বলেছেন, ‘কিছু গ্রামীণ চিত্রকল্প থাকে, যেগুলো আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করে।’ সেগুলোর মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘ছোট ছোট সবুজ খন্ড, তালগাছের সারি, দিগন্ত ইত্যাদি। আমার ভালো লাগে বীরভূম ও বর্ধমান জেলা।’
‘এই এলাকাগুলোর গন্ধ ও প্রসারিত সবুজ এলাকাগুলো, বৈচিত্র্যগুলোর বারবার ধরে রাখতে আমি উন্মৃখ হয়ে থাকি।’
‘এই এলাকাগুলোতে এতবার গিয়েছি যে, মানুষগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে।’
তরুণ মজুমদারের বিখ্যাত সিনেমা আলো ও চাঁন্দের বাড়িতে অভিনয় করেছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
‘আলো’ বিভূতিভূষণের একটি গল্প থেকে বানানো।
তার বিষয়ে এই বিখ্যাত অভিনেত্রী বলেছেন, ‘তার ছবি সাধারণ, পুরোনো বিশ্বের মানুষের প্রতি নষ্টালজিয়ায় ভুগে আহবান জানায়। এগুলো বাংলার গৃহস্থালি গল্প, ঘরের কাহিনী। এই মানুষদের গল্পগুলো আমরা ভুলে যাচ্ছি। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কগুলো মুছে যাচ্ছে। আজকের সম্পর্কগুলোর আরো স্তরপূর্ণ ও জটিল এবং কুটিল হয়ে যাচ্ছে। তার ছবিগুলোতে কাজ করা মানে হলো কিভাবে আমরা অবিরত পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চলেছি।’
ঋতুপূর্ণাকে পর, পর সিনেমাতে নেওয়ার প্রশ্নের জবাবে তরুণ মজুমদার বলেছিলেন, ‘এটি আনুষ্ঠানিকভাবে করা হয়নি। আমার অবচেতন মন চাইছিল এমন একজনকে নিতে, যে তার চরিত্রটি নিজেই করতে পারবে। আমিই চরিত্রগুলো ও চিত্রায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ওএস।