অ্যাম্বার হার্ড ১৫ ও জনি ডেপের দুই মিলিয়ন ডলার জরিমানা
একে, অন্যের প্রতি বিশ্বস্ততায়-অ্যাম্বার হার্ড ও জনি ডেপ দুজনেরই বাধ্য থাকার মামলায় তারা বিপক্ষকে অপবাদ দিয়েছেন। ফলে ডেপের নির্দিষ্টভাবে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে রায় দিয়ে মার্কিন আদালত তাকে পুরস্কৃত করেছেন। ফলে একটি আইনগত জয় ঘটেছে অভিনেতার।
এই মামলাটি দায়ের করেছিলেন তিনিই। সাবেক স্ত্রীর বিপক্ষে দায়ের করা মামলায় বলেছেন, ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্ট নামের একটি বিখ্যাত মাকিন দৈনিকের বিশেষ আয়োজনে অভিনেত্রী অ্যাম্বার হার্ড নিজের লেখায় একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে তিনি তার মাধ্যমে ঘরে নির্যাতনের শিকার হিসেবে তুলে ধরেছেন। যদিও এই লেখায় তিনি জনি ডেপের নাম উল্লেখ করেননি, তারপরও ডেপ দাবী করেছেন, লেখাটির মাধ্যমে তার অভিনয় জীবনের ক্ষতি হয়েছে।
এরপর সাবেক স্বামীর বিপক্ষে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন অ্যাম্বার। এটিও মানহানির। সেখানে তিনি ডেপের আইনজীবী তার বিপক্ষে যে বিবৃতিগুলো দিয়েছেন, তাতে তার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তারপর আদালতে শুনানি ঘটে তাদের আলাদা দুটি মামলার।
এখানে আদালতের বিচারক খুঁজে পেলেন যে, অ্যাম্বার হার্ড ওয়াশিংটন পোস্টে যে বিবৃতিগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর তিনটির জন্য ডেপকে মূল্য দিতে হয়েছে। সেভাবে ডেপের আইনজীবির একটি বিবৃতিতে অ্যাম্বার হার্ডকে মূল্য দিতে হয়েছে।
অবশেষে তার রায়ে তিনি জনি ডেপকে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য হার্টকে নিদেশ দিয়েছেন। তিনি আরো পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ডেপকে প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হার্ডকে শাস্তি হিসেবে।
আদালত হার্ডকে ২ মিলিয়ন মাকিন ডলার দিতে নিদেশ দিয়েছেন ডেপকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে। তাকে কোনো শাস্তি প্রদান করেননি তিনি।
আদালতে এই মামলা দায়েরের সময় জনি ডেপ ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দাবী করেছিলেন তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে। আর অ্যাম্বার হার্ট ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেছিলেন।
তাদের এই মামলা দায়েরের ফলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য মোট ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছে।
আদালতে যখন এই রায় ঘোষণা করা হচ্ছিল, তখন অ্যাম্বার হার্ড তার চোখ দুটি নীচের দিকে নামিয়ে রেখেছিলেন। আর তার সাবেক স্বামী জনি ডেপ তখন আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তার হয়ে আইনজীবি প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
তবে এরপর তিনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন, ‘আদালত আমার জীবন আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
আদালতের রায়ের পর জনি ডেপের আইনজীবী বেনজামিন চু ও অ্যাম্বার হার্ডের কামিল ভাসকোয়েজ গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।
জনি ডেপ বিবৃতিতে বলেছেন, ‘একেবারে শুরু থেকে এই মামলাটির লক্ষ্য ছিল, সত্যকে প্রকাশিত করা। ফলাফলের দিকে আমি অমনোযোগী ছিলাম। সত্য বলা এমন কিছু, যেটি আমার মেয়ে ও ছেলে এবং যারা আমাকে পুরোপুরি সমর্থন করেছেন, তাদেরকে আমি ধারণ করি। চূড়ান্তভাবে সেটি করতে পেরেছি জেনে শান্তি অনুভব করছি।’
তার আইনজীবি গতকাল বৃহস্পতিবার ১ জুন বিচারককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ও বলেছেন, ‘এখন পৃষ্ঠা ওল্টানো ও সামনের দিকে তাকানোর সময়।’
‘আমরা খুবই গর্বিত যে, আদালত তাদের সাবধানী আলোচনা প্রদান করেছেন। বিচারক ও আদালকের কর্মীরা বিপুল সময় এবং অনেক সম্পদ এই মামলার জন্য প্রদান করেছেন বলে তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ’, আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের বলেছেন অ্যাম্বার হার্ডের আইনজীবি কামিল ভাসকোয়েজ।
অ্যাম্বার হার্ড তার আইজীবির মাধ্যমে তার ‘হৃদয় ভেঙেছে ’বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি আজ যে হতাশা অনুভব করছি, সেটি বলার মতো ভাষা আমার নেই। আমার হৃদয় এই জন্য ভেঙেছে, যে পাহাড় সমান প্রমাণাদি এখনো আমার সাবেক স্বামীর অনুপাতহীন শক্তি, প্রভাব ও শাসনের বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট নয়।’
২০০৯ সালে ‘দি রাম ডায়রি’ নামের ছবি করতে গিয়ে তাদের দুজনের ঘনিষ্টতার শুরু।
২০১৫ সালে জনি ডেপ ও অ্যাম্বার হার্ড বিয়ে করেছেন। তাদের সংসার মোটে একটি বছর টিকেছে। এরপর বিচ্ছেদ।
আদালতে বিচারের সময় অ্যাম্বার হার্ড জানিয়েছেন যে, তাদের সম্পর্কের ভেতরে মৌখিক ও শারীরিকভাবে তাকে নির্যাতন করেছেন জনি ডেপ। তাকে যৌন নিযাতনের অভিযোগও করেছেন।
একাধিকবার জনি ডেপ জানিয়েছেন, তিনি তার জীবনে কোনোদিন কখনো কোনো মহিলাকে মারেননি। তিনি হার্টের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি তাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগও অস্বীকার করেছেন। উল্টো গৃহস্থালি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অ্যাম্বার হার্ডের কাছে-আদালতে অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, তিনি তা অস্বীকার করছেন।
এই মামলাগুলো চলার সময় হার্ড ও ডেপের আইনজীবিরা তাদের প্রমাণ হিসেবে অনেক ছবি ও অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড দাখিল করেছেন। ডেপ ও হার্ড ২০১৫ সালে বিয়ের পর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট লরেল অ্যান্ডারসন বিয়ের পরামর্শক হিসেবে চাকরি করেছেন। তিনি ১৪ এপ্রিল স্বাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ‘হার্ড ডেপকে গালাগাল করতেন এবং সেটি মানসিক নির্যাতন।’
এই মামলার সময় ডেপের দল স্বাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন যাদের, তাদের মধ্যে মডেল কেট মসও ছিলেন। তার সঙ্গে তার আগে সম্পর্ক ছিল। তারা ওয়াল্টার হার্মাডাকে এনেছেন। তিনি ওয়ার্নার ব্রস ডিসকভারি, যারা সিএনএন ও ডিসি ফিল্মসের মালিক, এই ডিসি ফিল্মসের প্রধান। অভিনেত্রী এলেন ব্রার্কিন এবং ডেপের সহযোগীদের একজন হার্টকে পরীক্ষাও করেছেন। তবে হার্ড তুলনামূলকভাবে অনেক কম সমর্থক আনতে পেরেছেন। তিনি ডেপের বিনোদন ব্যবসা জগতের কাছে হেরেছেন ও কোর্টের ভেতরে তার তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন।
এখন অ্যাম্বার হার্ডের বয়স ৩৫ বছর। আর ডেপের ৫৮।
ওএস।