হিরকজয়ন্তীতে সেরা অভিনেত্রী ইরানের জার আমির এবরাহিমি
সুইডেনের পরিচালক রুবেন ওসলোনের শ্রেণী সংগ্রামকে হাস্যরসাত্নক ও মিলনাত্নক ধারায় তুলে ধরার ছবি ‘ট্রায়াঙ্গেল অব স্যাডনেস’ কান চলচ্চিত্র উৎসবের হিরকজয়ন্তীতে সেরা পুরস্কার “পাম দ’র” জয় করেছে।
শনিবার রাতে, ২৮ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে জাঁকজমকপূণ শেষ পর্বে ‘পাম দ’র জয় করেছে ওসলোনের ছবি। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসের সবচেয়ে মযাদাপূর্ণ সিনেমা পুরস্কারের একটি দ্বিতীয়বারের মতো জয় করেন তিনি ।
২০১৭ সালে ‘দি স্কয়ার’ ছবিটির জন্য কানের সেরা পুরস্কারটি তিনি জিতে নিয়েছিলেন। একজন ভেঙে পড়তে থাকা জাদুঘর বা আর্ট গ্যালারির কিউরেটর বা তত্বাবধায়ক মুখোমুখি হতে থাকেন তার অস্তিত্বের সংকটগুলোতে, তার প্রিয়তম জাদুঘরেও সেসব সংকটের প্রবাহে পড়েন তিনি, এরপর যখন তার নামকরা সুইডিশ জাদুঘরের আবার সুনাম তৈরির জন্য একটি গণযোগাযোগ দলকে নিয়োগ করেন, সেখানেও রক্ষা পাননি। একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার জাদুঘরটি ধ্বংস হয়ে যায়-এই হলো দি স্কয়ারের গল্প।
‘ট্রায়াঙ্গেল অব স্যাডনেস’ ছবিতে একটি মার্কসবাদীদের ইয়ট বা পালতোলা হালকা নৌকা (প্রতিযোগিতার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়) ক্যাপ্টেনের ভূমিকার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন উডি হ্যারেলসন। তিনি একজন নামকরা মার্কিন অভিনেতা ও নাট্যকার। একটি ‘প্রাইম টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’ আছে, দুটি ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেছেন। তার বাদেও তিনবার অস্কার ও চারবার গোল্ডেন গ্লোবের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।
ভিনসেন্ট লিনডেনের নেতৃত্বে নামকরা নানা দেশের ৯ বিচারকদের বিচারে দ্বিতীয় সেরা পুরস্কার ‘ঘঁ পি’ জয় করেছে যৌথভাবে বেলজিয়ামের তরুণ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার লুকাস দন্তের শৈশবের অল্পবয়স নিয়ে নাটকীয় সিনেমা ‘ক্লোজ’ ও ফ্রান্সের প্রবীণ নারী পরিচালক ক্লেয়া দুনির ‘স্টারস অ্যাট দি মুন’।
দুনির ফিচার ছবি ‘বুথ হাভাই’কে ৯০ দশকে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসের সেরা ছবিগুলোর একটি হিসেবে মান্য করা হয়।
দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যন্ত জনপ্রিয় সিনেমা অভিনেতা সুং কাং হো জাপানের পরিচালক ‘হিরোকাজু কোরেএ-এদা’র ছবি ব্রোকার’-এ তার অভিনয়ের জন্য ‘সেরা অভিনেতা’ হয়েছেন। ছবিটির গল্প একটি কোরিয়ান পরিবারের, যারা একটি ফেলে যাওয়া শিশুর জন্য একটি বাড়ির খোঁজ করছেন। হিরোকাজু ২০১৩ সালে তার লাইক ফাদার, লাইক সনের জন্য জুরি পুরস্কার জয় করেছেন। তিন বছর আগে সুং কাং হো’ও প্যারাইট ছবির জন্য অত্যন্ত সুনাম অর্জন করেছেন এই কানে। ছবিটি বানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র পরিচালক পুং চুং হো ও। ২০১৯ সালের পাম দ’র করেছে।
ইরানের অভিনেত্রী জার আমির এবরাহিমি একজন নারী সাংবাদিক হিসেবে অসামান্য অভিনয়ের জন্য জয় করেছেন ‘সেরা অভিনেত্রী’র পুরস্কার। তৈরি করেছেন আলী আব্বাসি। নাম ‘হলি স্পাইডার’। ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদের যৌনকর্মীদের একে, একে হত্যা করে চলা একজন অপরাধীর পেছনে ছোটা সাংবাদিকের গল্প। প্রচণ্ড হিংস্রতা ও সুস্পষ্ট চিত্রনাট্যের জন্য তাদের দেশ ইরানে ছবিটির শুটিং করতে দেওয়া হয়নি। ফলে জর্দানে চিত্রায়ণ করেছেন পরিচালক। ৪১ বছরের যুবক পরিচালক জন্মেছেন তেহরানে। তেহরান পলিটেকনিক থেকে ২০০২ সালে পাশ। চলে গিয়েছেন সুইডেনের রাজধানী স্কটহোমের ‘কেটিএচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’তে স্থাপত্যবিদ্যায়। পাশ করে ‘ন্যাশনাল ফিল্ম স্কুল অব ডেনমার্ক-এ ইরানি হিসেবে ভর্তি হয়েছেন। ২০১১ সালে পাশ। তার তখনকার ছবিটির নাম হলো ‘এম ফর মারকুস’। রাজধানী কোপেনহেগেনে বাস করলেও ইরানি পাসপোর্ট বহন করেন তিনি। ২০০৬ সালের নার্গিস টিভি সিরিজের জন্য তার নায়িকা জার আমির দেশে খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয়।
‘দি জুরি প্রাইজ’ বা বিচারকদের পুরস্কারটি ৭৫তম কান চলচ্চিত্র উৎসব বা এই হিরকজয়ন্তীতে লাভ করেছে ‘দি এইট মাউনটেইনস’। এটি বন্ধুত্বের গল্প। শাহলট ভনদেহমেশ ও ফেলিক্স ভ্যান ঘোনিংগেনের বানানো। প্রথমজন বিখ্যাত অভিনেত্রী, পরেরজন নামকরা পরিচালক। স্বামী-স্ত্রী এই নামেই ইতালির একজন বিখ্যাত লেখক পাওলো কোনিয়েত্তির একটি বই আছে। ইতালি ও ফ্রান্সে কটি পুরস্কার জয়ের পর প্রথম বই হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও অনূদিত হয়েছে। তিন দশক আগের ছোটবেলার কাহিনী দুই বন্ধুর। এই শাখায় যৌথ পুরস্কারটি জিতেছে ইয়েজে স্কলিমভস্কির ‘এও’ ছবিটি। ছবিটি একটি গাধার আধুনিক ইউরোপ জুড়ে নির্মম যাত্রার গল্প। বানাতে গিয়ে ছয়টি গাধা ব্যবহার করেছেন পরিচালক ও তিনি তাদের পুরস্কার নিতে গিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
সেরা চিত্রনাট্য জয় করছে ‘বয় ফ্রম হ্যাভেন’। লিখেছেন তারিক সালেহ। মিশর-সুইডেনের দ্বৈত নাগরিক। একটি কাহিনী মিশরের আল আজহার মসজিদকে ঘিরে। একটি বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে একে ঘিরে।
‘প্রথম সেরা সিনেমা’র পুরস্কার জয় করেছে হিরকজয়ন্তীতে ‘ওয়ার পনি’ বা যুদ্ধের নারী ঘোড়া। পুরস্কারটির নাম হলো “ক্যামেরা দ’র”। পেয়েছেন দুইজন নারী প্রযোজক মার্কিন অভিনেত্রী রাইলি কিয়ো ও নরওয়েজিয়ান পরিচালক গিমা গামেল। রাইলির এই প্রথম পরিচালনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদিবাসী ইন্ডিয়ানদের একটি সংশোধনাগারের গল্প।
এবার কানে এসেছে বিশ্ববিখ্যাত ও হলিউডের সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবি ‘এলভিস’। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সেরা রক তারকা এলভিস প্রিসলির নাম কামানোর ৫০’র দশকের সময়গুলোতে তার ম্যানেজার কর্নেল টম পার্কারের সঙ্গে অম্ল, মধুর ও জটিল সম্পর্কের গল্প। এসেছে টম ক্রুজের ৩৬ বছরের পরের সিরিয়াল ‘টপ গান : মেভেরিক’ ও ইস্তানবুলে করা ‘থ্রি থাউজেন্ড ইয়ার্স অব লঙিং’। মোট ২১টি ছবি দেখেছেন এই পর্বে দশকরা।