এই সিনেমায় আমার প্রাপ্তির পাল্লাটা অনেক ভারী: সিয়াম
জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ। ‘শান’ সিনেমার মাধ্যমে তুমুল আলোচনায় এসেছেন তিনি। এবার দেশ এবং দেশের বাইরে মুক্তি পেয়েছে তার অভিনীত নতুন সিনেমা ‘পাপ পুণ্য’। সিনেমা ও অন্যান্য কাজ নিয়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ঢাকাপ্রকাশ: ‘পাপ পূণ্য’ সিনেমার জন্য দর্শকদের কাছে সাড়া কেমন পাচ্ছেন?
সিয়াম আহমেদ: খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি। যতো দর্শক দেখছেন তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ থেকে ৯৫ শতাংশ দর্শকই ইবিবাচক কথা বলছেন সিনেমাটি নিয়ে। আর বাকি ৫ শতাংশ দর্শকরা পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তাদের কাছে ভিন্নধর্মী প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। এখনো দর্শক খুব বেশি পরিমাণে হলে যাচ্ছেন এমন রিপোর্ট পাইনি। তবে যারা সিনেমাটি দেখছেন তাদের কাছে যে ধরনের সাড়া পাচ্ছি তাতে আমি ভীষণ খুশি।
আর একটা কথা, কোনো প্রজেক্ট যদি ক্রেডিবল প্রজেক্ট হয় এবং সেটা যদি মানুষের ভালো লাগে, সে ফিল্মটা কোনো না কোনো ভাবে কিছু না কিছু ফিরিয়ে দেবে এক সময়। সেটা আজ, কাল বা বছরখানেক পরে দিক। যতগুলো ফিল্ম আছে কোনোটা সমসাময়িক একটা টাইম ফ্রেমকে মাথায় রেখে বানানো হয় না। একটা ফিল্ম ফ্লো করে যখন দেশের বাইরে যায়, এর পরে ওটিটি প্লাটফর্মে রিলিজ পায়। তারপর হয়তো আরও বেশি দর্শক সিনেমাটি দেখে নতুন করে চর্চা শুরু করে। যেটা আমাদের কিছুদিন আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মৃধা বনাম মৃধা’ নিয়ে হয়েছে। এই সিনেমা ওটিটিতে রিলিজের পর এটা নিয়ে আরও বেশি চর্চার জায়গায় চলে এসেছে। কারণ মানুষ এখন দেখতে পেরেছে ছবিটি। এটা একটা জার্নি। আমি এই জার্নিটাকে কোনো ব্রাকেটবন্দি করতে চাই না। তবে আমার মনে হয় ধীরে ধীরে মানুষ সিনেমাটি আরও দেখবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশের পাশাপাশি কানাডা আমেরিকায়ও একশ সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এতোগুলো সিনেমা হলে মুক্তি পেল। কেমন লাগছে আপনার?
সিয়াম আহমেদ: খুবই ইতিবাচক লাগছে। আমাদের বাংলাদেশে যত কিছু বলিনা কেন আমাদের থিয়েটার থেকে টাকা উঠানো বা প্রডিউসারকে টাকা ব্যাক করার অপরচ্যুনিটি ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। আমি এসে কিন্তু ৮শ বা ১২শ সিনেমা হল পাইনি। আমি অনেক কম হল পেয়েছি। আমরা এমন জায়গায় কাজ করছি যা অসাধ্য একটা পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। তার ভেতর থেকে যদি প্রডিউসারদের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের ডিট্রিবিউটরদের জন্য আলাদা একটা জায়গা তৈরি হয়, যেখান থেকে রেভিনিউয়ের একটা অপশন থাকে। সেটা অনেক বেশি ইতিবাচক। আমাদের বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষ যারা বিদেশে রয়েছেন তারা যদি একইদিনে বাংলাদেশের রিলিজের সঙ্গে সঙ্গেই তাদের পাশের সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখতে পারেন এটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটা বড় প্রাপ্তি। আজকে ১শ সিনেমা হলে রিলিজ হয়েছে। আগামীতে আমরা সবাই যদি একসঙ্গে থেকে পজিটিভ থাকি তাহলে এক হাজার সিনেমা হলে রিলিজ হবে আমাদের সিনেমা ইনশাআল্লাহ। তখন আমাদের বাজার আরও বড় হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: নন্দিত পরিচালক গিয়াসউদ্দীন সেলিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
সিয়াম আহমেদ: যতদিন আমাদের সময় কেটেছে ততোদিন খুব ভালো কেটেছে। আমার মনে হচ্ছে বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করার সময় দেখা যায় আমরা যতোটুকু পারি প্রজেক্টে ততোটুকু দিয়ে চলে আসি। কিন্তু এখান থেকে ব্যাক করার সময় অনেক কিছু নিয়ে এসেছি। এর কারণ হচ্ছে ডিরেক্টর, কো-আর্টিস্ট যারা প্রতিনিয়ত আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। এটা এমন নয় যে, শেখানোর জন্য আলাদা কোনো প্রোগ্রাম করা ছিল। এটা কাজের প্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে শেখা হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় এই সিনেমায় আমার প্রাপ্তির পাল্লাটা অনেক ভারী। দর্শক সেই ফিডব্যাকগুলো আমাকে দিচ্ছে। কারণ এখানে আমাকে দিয়ে এমন একটা চরিত্র করানো হয়েছে। সিনেপ্লেক্স বা ব্লকবাস্টারগুলোতে পাশাপাশি হলে ‘শান’ ও ‘পাপ পুণ্য’ চলছে। দুই সিনেমায় আমার দুই ধরনের চরিত্র দেখে দর্শক যখন ভালো ফিডব্যাক দেয় তখন ভীষণ ভালো লাগে আমার ছোট এই ক্যারিয়ারে।
ঢাকাপ্রকাশ: ‘শান’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে আপনি সর্বোচ্চ সাফল্য পেয়েছেন। এটা আপনি কীভাবে দেখেন?
সিয়াম আহমেদ: আমি বিষয়টি এতো গভীরভাবে চিন্তা করিনি। আর এটাতো একশো মিটারের দৌড় নয় যে একজনকে প্রথম হতে হবে। এটা আমি এভাবে ভাবতে চাই না। কারণ দিনের শেষে জার্নি বা প্রতিযোগিতা কিন্তু নিজের সঙ্গে নিজের। আমি আমার আগের কাজগুলোকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও ভালো কাজ করব সেটাই ভাবছি। শান আমাকে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ দিয়েছে। এখন আমি যদি বাণিজ্যিক সিনেমায় এমনভাবে আসতে চাই, তাহলে আমাকে অবশ্যই শানকে ছাপিয়ে যেতে হবে। তবে আমি যদি এটা অতিক্রম করতে পারি তবে দর্শক আরও ভালো কিছু পাবে। ঈদের এবার তিনটা সিনেমা এটলিস্ট দর্শকদের হলমুখী করেছে এজন্য আমি তিন সিনেমার সবাইকে সাধুবাদ ও ধন্যবাদ দিতে চাই।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনি হিন্দি ভাষার সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন। এই সম্পর্কে জানতে চাই-
সিয়াম আহমেদ:এটা নিয়ে অনেকেই অনেকভাবে লিখেছে। কিন্তু সঠিক জায়গাটা অনেকেই মিস করে গেছেন। প্রথম কথা হচ্ছে এটা হিন্দি সিনেমা নয়, এটা হিন্দি ও উর্দু ভাষার সিনেমা। যেটার প্রডাকশন হচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে। এটি নির্মাণ করবেন আমেরিকার পরিচালক অলকা রাঘুরাম। এই সিনেমার এক্সিকিউটিভ প্রযোজকও আমেরিকার। আমার কাছে যখন প্রজেক্টটি এসেছে তখন একটি আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট হিসেবেই এসেছে। এটা কিন্তু বলিউডের প্রজেক্ট না। অনেকেই লিখছেন বলিউডে অভিষেকের কথা। এটা আসলে এমন নয়। এটা নেটফ্লিক্স এর প্রজেক্টও না। এটা নির্মিত হবার পর নেটফ্লিক্সেও যেতে পারে বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মেও মুক্তি পেতে পারে। তবে এটা প্রধানত সিনেমা হলের জন্যই বানানো হবে। বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবগুলোতে নিয়ে যাওয়ার কথা হয়েছে। এটা যদি আন্তর্জাতিক দরজা আমার খুলে দেয় আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমার দেশ থেকে ওখানে গিয়ে নামটা রক্ষা যেন রক্ষা করতে পারি।
ঢাকাপ্রকাশ: এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
সিয়াম আহমেদ: এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হবার গল্পটি একটু নাটকীয়। আগেই বলেছি কোনো সিনেমা আপনাকে কি ফিরিয়ে দেবে আপনি কিন্তু জানেন না। এটা কয়েকমাস আগের ঘটনা। আমার কাছে প্রথম ফোন আসে আমাদের ডিরেক্টর রায়হান খানের মাধ্যমে। যিনি আমাদের ‘মৃধা বনাম মৃধা’ সিনেমার রাইটার ও ডিওপি। তিনি জানান, আমার সঙ্গে একজন আন্তর্জাতিক প্রযোজক কথা বলতে চান। কেন কথা বলতে চান? এর কারণ হচ্ছে যখন ‘মৃধা বনাম মৃধা’র এডিটিংয়ের কাজ চলছিল ভারতে। তখন সেই এডিটিং প্যানেলে ওই প্রযোজক তাদের একটি কাজ করছিল। তখন তারা ‘ইন দ্য রিং’ সিনেমার জন্য অনেকগুলো কার্স্টি লক হয়ে করে ফেলেছিলেন। তারা একটা ছেলে খুঁজছিলেন যার চেহারা ইনোসেন্ট, চোখে সারল্য ও দুষ্টামী থাকতে হবে এবং প্রতিবাদ থাকতে হবে। তখন ওই এডিটিং প্যানেলে আমার কিছু হ্রাশ ফুটেজ দেখেন। দেখার পর উনারা আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। রায়হান খানের মাধ্যমে আমার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ শুরু হয়। এরপর তারা আমাকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি অডিশন দিতে বলা হয় অনলাইলে। ডিরেক্টরসহ তিনজন প্রডিউসারের উপস্থিতিতে আমি অডিশন দেই। পরবর্তীতে একমাস পর আমাকে জানানো হয়, তারা আমাকে স্ক্রিপ্ট পাঠাতে চায় যদি আমি সিডিউল দিতে পারি। তাদের মনে হয়েছে চরিত্রটির জন্য আমি মানানসই হব। তিনমাস হয়ে গেলো আমি আর ডিরেক্টর কথা বলছি নিয়মিত। ডিসেম্বরে ইন্ডিয়াতে এর শুটিং শুরু হবে।
ঢাকাপ্রকাশ:আপনার বিপরীতে এখানে মিথিলা পালাকার অভিনয় করবে। তার সঙ্গে কি আপনার কথা হয়েছে?
সিয়াম আহমেদ: এর আগে মিথিলার সঙ্গে আমাদের দুইটা মিটিং হবার কথা ছিল। কিন্তু ঈদের ঠিক আগের মুহুর্তে আমার সিনেমার প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় মিটিং হয়নি। রবিবার (২২ মে) সকালে মিথিলার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিথিলা ইনস্ট্রগ্রামে আমাদের একটা নিউজ শেয়ার করেছে ওখানে আমাকে ট্যাগ করেছে। তারপর হঠাৎ করে ইনবক্সে ওরসাথে আমার কথা শুরু হলো। আমি তাকে বললাম বাংলাদেশের অনেকেই ওর কাজ পছন্দ করে। ও জানতে পেরেছে কাজটা নিয়ে বাংলাদেশে অনেক আলোচনা হচ্ছে। এই কাজ নিয়ে মেসেজও পাচ্ছে।
ঢাকাপ্রকাশ: এ ছাড়া নতুন কোনো কাজ করছেন কী?
সিয়াম আহমেদ: জাজ মাল্টিমিডিয়ার নতুন একটি সিনেমায় কাজের কথা রয়েছে। এটি পরিচালনা করবেন রায়হান রাফি। এখানে আমার বিপরীতে কে কাজ করবেন এটা এখনও নির্ধারিত হয়নি।
এএম/এমএমএ/