মাধবী মুখার্জি এখন সুস্থ
পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তী বাঙালি অভিনেত্রী মাধবী মুখার্জিকে তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার উন্নতি হওয়ায় হাসপাতাল ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে ও তিনি দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারী হাসপাতাল উডল্যান্ডস হসপিটাল ছেড়ে বুধবার বাড়িতে ফিরে গিয়েছেন।
মাধবী রক্তস্বল্পতা ও রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রার দুটি রোগে দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত হয়ে আছেন। দুর্বল হয়ে চিকিৎসার জন্য ২৯ এপ্রিল হাসপাতালটিতে ভতি হয়েছিলেন।
‘তিনি তুলনামূলক ভালো স্বাস্থ্য ও মনোবল নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছেন। তার স্বাস্থ্য আগের চেয়ে অনেক ভালো। তাকে এজন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শগুলো দেওয়া হয়েছে। যখন মাধবী মুখার্জি হাসপাতালে ছিলেন, আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তার পিত্তথলীতে একটি পাথর পেয়েছি। এজন্য তাকে অপারেশন করতে হয়েছে’-একটি বিবৃতিতে তার বিষয়ে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বলেছেন, ‘৮০ বছরের এই অভিনেত্রী ও তার পরিবারকে তার গোলস্টোনের অপারেশনের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’
তারা আরো বলেছেন, ‘পরে তার পেট ও অন্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত (গ্যাস্ট্রোইনটেস্টটেনাল) এন্ডোসকপির মাধ্যমে জানা গিয়েছে, সে জায়গাগুলো ভালো আছে।’
‘আমাদের কাছে চিকিৎসায় অসুবিধা মনে হয়েছে, তার রক্তে শর্করার মাত্রা। সেটি চিকিৎসার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণে আনা হয়েছে ও পরে নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। এজন্য আমরা তাকে ওষুধ খাইয়েছি। এরপরও মাধবী মুখার্জিকে আমাদের চিকিৎসকরা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন’-জানিয়েছেন তারা।
মাধবী মুখার্জি শিশির ভাদুড়ি, অহিন্দ্র চৌধুরী, নির্মলেন্দু লাহিড়ী ও ছবি বিশ্বাসের অধীনে মঞ্চ মাতিয়েছেন। তাদের মঞ্চনাটকগুলোতে তিনি অভিনয় করেছেন।
মাধবী প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘দুই বিয়ে’ ছবিতে শিশু শিল্পী হিসেবে অভিনয় করে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন।
তিনি দুই বাংলার সবচেয়ে সেরা কটি ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করে চিরকালীনতা লাভ করেছেন।
মাধবী মুখার্জি একবারের ভারতের সেরা অভিনেত্রী হিসেবে ‘১৭তম ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন ‘দিবারাত্রির কাব্য’ ছবিতে অবিশ্বাস্য অভিনয়ের সুবাদে। চলচ্চিত্রটি সাদা-কালো। ১৯৭০ সালে মুক্তি পেয়েছে। বানিয়েছেন বিমল ভৌমিক ও নারায়ণ চক্রবর্তী।
এছাড়াও তিনি সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘মহানগর (১৯৬৩)’ ও ‘কালপুরুষ’, মৃণাল সেনের ‘বাইশে শ্রাবণ’ এবং ঋত্বিক ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য খুবই পরিচিত ও সম্মানিত। বাইশে শ্রাবণ দিয়েই তার সিনেমাতে ব্রেক থ্রু। ছবিটি ১৯৪৩ সালের মনন্তর নিয়ে তৈরি। সেবার ৫০ লাখ মানুষ বাংলার দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছেন। তার নায়িকা চরিত্রের প্রথম এই ছবিতে ১৬ বছরের মেয়ে তিনি, একজন মধ্যবয়সী পুরুষের সঙ্গে বিয়ে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অভিঘাত ও বাংলায় নারীবাদের জাগরণ তাকে আক্রান্ত করে।
মাধবী মুখার্জি ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘সুবর্ণরেখা’র পরের দুই ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ও ‘কোমল গান্ধার’-এও অভিনয় করেছেন।
তিনি কবিগুরুর ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে সত্যজিতের ‘চারুলতা’র ‘চারু’ হয়েছেন।
‘কালপুরুষ’-এ তার নায়ক ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
মৃণাল সেনের ‘কলকাতা ৭১’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তার ‘বিরাজ বৌ’তে ছিলেন। ১৯৭২ সালে পুর্ণেন্দু পত্রীর ‘স্মৃতির পাত্র’তে অভিনয় করেছেন।
তরুণ মজুমদারের ‘বাঞ্ছারামের বাগান’-এ ছিলেন।
তপন সিনহার ১৯৮০ সালের ছবি ‘চোখ’-এ অভিনয় করেছেন।
তিনি আরো অনেক ছবিতে অভিনয় করেছেন।
ভারতীয় বাংলা ও হিন্দি ছবির অভিনেতা নির্মল কুমার তার স্বামী। তাদের দুটি মেয়ে আছে। তবে ব্যক্তিগত জীবনে মাধবী-নির্মল আলাদা হয়ে গিয়েছেন।
ছবি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নষ্টনীড় অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের ছবি চারুলতায় নায়িকা চারুর চরিত্রে মাধবী মুখার্জি
ওএস।