শিল্পী কখনো ব্যবসায়ী হতে পারে না: ফাহমিদা নবী
খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। গানের ভুবনে অনন্য তিনি। আসছে ঈদে দুটি গান প্রকাশ করতে যাচ্ছেন নন্দিত এই গায়িকা। গান ও অন্যান্য প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ঢাকাপ্রকাশ: অনেকদিন দেশের বাইরে ছিলেন। দেশে ফিরলেন কবে?
ফাহমিদা নবী: চারদিন আগে দেশে ফিরেছি। ইংল্যান্ডের পাশাপাশি মেক্সিকো অ্যাম্বাসিতে অনুষ্ঠান করেছি। এ ছাড়া আমেরিকাতে ছিলাম ১২ দিন। সব মিলিয়ে ২ মাস ২৭ দিন পর ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছি।
ঢাকাপ্রকাশ: দেশে এসেই নতুন দুইটি গান প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে জানতে চাই...
ফাহমিদা নবী: দুইটি গানই ঈদে প্রকাশিত হবে। গানের প্রোমো প্রকাশিত হবার পর অনেক সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই ভাবে ঈদে একটু আলাদা রকমের গান প্রকাশ করেন সবাই। আমি কেন ব্যতিক্রম। আমার কাছে মনে হয়েছে ঈদ মানেই শুধু হৈচৈ নয়। আমার কাছে ঈদ মানে একটু রিলাক্স। তাই আমি একটু ব্যতিক্রমধর্মী গান করেছি। ‘আমি তোমার সমাধিতে এসেছি, শিরিরে ভেজা শিউলীগুলো, তোমার শিয়রে রেখে দিয়েছি’-এমন অসাধারণ কথায় গানটি লিখেছেন মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী। সংগীত করেছেন তানভীর দাউদ রনি ও শুভেন্দু দাস। আমি একবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম গানটা লেখা নিয়ে-মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী আমাকে উত্তর দিয়েছিলেন চমৎকার করে। তিনি বলেছিলেন, প্রত্যেকটা মানুষ যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে, ভালোবাসলেই কিন্তু দুঃখ আসে এক সময় সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় তখন সমাধী তৈরি হয়। মানুষ কিন্তু প্রিয় মানুষকে ভুলে যেতে পারে না। শুধু ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে। সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যখন একটা সম্পর্কের মৃত্যু হয় তখন সমাধি তৈরি হয়। তার উত্তর শুনে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ গীতিকবিকে এত সুন্দর কথার গান আমাকে দেওয়ার জন্য। এই গানটা আমি ৮বার সুর করেছি। অবশেষে অষ্টম সুরটি দিয়েই গানটি বেঁধেছি। সুর করেও অনেক আরাম পেয়েছি। লন্ডনে এই গানটি ভিডিও করেছি। এটি ভিডিও নির্দেশনা দিয়েছেন আমার মেয়ে আনমোল।
আরেকটি গান একটু স্মৃতিচারণমুলক। ‘এমন কেন হয়, যাকে নিয়ে তুমি আজও, চায়ের কাপে অতীত খুঁজো, সে তো তোমার নয়’-চমৎকার কথার এ গানটি লিখেছেন আতিউর রহমান। এটির একটি স্টুডিও ভার্সণ ভিডিও করা হয়েছে। এই গানটির ভিডিও পরিচালনা করেছেন তাহমিনা মুক্তা। দুটি গানের সুর আমার করা। আমার বিশ্বাস গানদুটি আমার শ্রোতা দর্শকদের একটু অন্যরকম ভালো লাগবে। দুটি গানই আগামী ২৭ এপ্রিল আমার ইউটিউব চ্যানেল ‘আনমোল প্রেজেন্টস’-থেকে ঈদ উপলক্ষে প্রকাশিত হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: হঠাৎ আপনার ইউটিউব চ্যানেল থেকে গান প্রকাশের চিন্তা করলেন কেন?
ফাহমিদা নবী: আমি আসলে কার পেছনে ঘুরব। আমি আমার মনের মতো গান করছি। আমি শ্রোতাদের গান শোনাতে চাই, আগেও শুনিয়েছি। তবে আমার কিছু দায়িত্ব আছে। আমি কোটি ভিউ করার জন্য ধুম-ধারাক্কা গান করতে পারব না। আমি আমার লিস্টে খারাপ গান রেখে যেতে চাই না। আর এখন সবকিছুতেই করপোরেট কালচার ঢুকে গেছে। সব কিছুতেই ব্যবসা দেখা যাচ্ছে। আমি মুলত শিল্পী আর শিল্পী কখনো ব্যবসায়ী হতে পারে না। আমি জিততে আসিনি। আমি ভালো সৃষ্টি রেখে যেতে এসেছি। শিল্পীর কাজ জেতা নয়, শিল্পীর কাজ সৃষ্টি করা। তাই নিজের মনের মতো গান করতেই নিজেই চ্যানেল থেকে গান প্রকাশের সিন্ধান্ত নিয়েছি।
ঢাকাপ্রকাশ: নতুন শিল্পীদের নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
ফাহমিদা নবী: এখন রিমেক বা কভার গানের আধিক্য বেশি দেখা যাচ্ছে। মৌলিক গানের প্রতি অনেকেরই ঝোঁক নেই। তাদের অনেকেই আইডিন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগছে। তবে কিছু নতুনরা বুঝতে পারছে। আসলে গান দিয়ে স্টেজ জয় নয়, গান দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয় জয় করতে হয়।
ঢাকাপ্রকাশ: সিনেমার গানে আপনাকে দেখাই যায় না?
ফাহমিদা নবী: আগে অভিযোগ ছিল সিনিয়ররা জুনিয়রদের ঢুঁকতে দিচ্ছে না। কিন্তু এখন জুনিয়রদের মাঝে করপোরেট কালচার বেশি দেখা যাচ্ছে। মানুষকে আটকে রাখার প্রবণতাও দেখা যায়। মাঝে আমার চার পাঁচটা সিনেমায় গান গাওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেগুলো থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। প্রকৃত শিল্পী সত্ত্বা যাদের আছে তারা কিন্তু কোনো গ্রুপে থাকে না। সুরকার যে গানের জন্য যাকে পারফেক্ট মনে করবে তাকে দিয়েই গান করাবে এ্টাই হওয়া উচিৎ।
ঢাকাপ্রকাশ: টেলিভিশনে ঈদের কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন কি?
ফাহমিদা নবী: সবাই অনেক দৌড়াচ্ছে কিন্তু নতুন কিছু সৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের যে গান বাজনার খাম্বা সেটা আগে ঠিক করতে হবে। টেলিভিশন অনুষ্ঠানগুলোরও মানের দিক দিয়ে দর্শক ধরে রাখতে পারছে না। অনুষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। আমি তো অনেকদিন দেশের বাইরে থেকে দেশে ফিরলাম। তাই এবার কোনো টেলিভিশন অনুষ্ঠান করতে পারিনি।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার নতুন একটি অ্যালবাম প্রকাশের কথা ছিল। সেটার কাজ কতদূর?
ফাহমিদা নবী: আমার লেখা ও সুর করা দশটি গান দিয়ে একটি অ্যালবামের কাজ করেছিলাম। দশটি গান আমার ভয়েস গ্রুমিং প্রতিষ্ঠান কারিগরী’র দশজন শিল্পী গেয়েছিল। এটি সংগীত পরিচালনা করেছিলেন বর্ণ চক্রবর্তী। কিন্তু অসময়ে বর্ণ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাই গানের প্রজেক্ট মিসিং হয়েছে। এ কারণে গানগুলো আবারও নতুনভাবে করতে হবে। ইচ্ছে আছে নতুন করে গানগুলো করে কোরবানির ঈদে অ্যালবামটি প্রকাশ করব।
এএম/এমএমএ/