‘যুবক ফারুক থেকে বৃদ্ধ ফারুককে দেখেছি, চিনেছি’
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় মৃত্যুবরণ করেছেন। খ্যাতিমান এই নায়কের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ফারুকের মৃত্যুর খবরে শোকাহত তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী অনেক সফল ও জনপ্রিয় সিনেমার নায়িকা ববিতা। বর্তমানে তিনি তার ছেলের সঙ্গে কানাডায় আছেন। সেখান থেকে ফারুকের মৃত্যুর খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন এই নায়িকা।
ববিতা বলেন, ‘আমি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে উঠেছি, এমন সময় খবরটি পেলাম। বুকটা হুহু করে উঠল। রাজ্জাক ভাই, ফারুক ভাই; সবাই চলে যাচ্ছেন। এটিএম চাচা, কবরী, হুমায়ূন ফরীদিসহ অনেকেই তো না ফেরার দেশে চলে গেছেন। আমরা সব হারানোর স্রোতে পড়ে গেছি। মনটা খুব খারাপ হলো।’
‘অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। কষ্ট করেছেন। আজ চিরদিনের মতো সব কষ্টের অবসান হলো। আমি দোয়া করি ফারুক ভাইয়ের জন্য। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। পরোপকারী ছিলেন।
ভালোবাসার কাঙাল ছিলেন তিনি। খোদা যেন তার এই গুণগুলো বিবেচনা করে তাকে ভালোবাসা দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেউ চলে গেছে শুনলে মনটা ভেঙে যায়। বুকের মধ্যে হাহাকার হয়। মনে হয় সময় কতো দ্রুত চলে গেল। সেই সময়ের সঙ্গে হয়ে আমাদেরও একদিন চলে যেতে হবে। ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। সেসব স্মৃতি নিয়ে কথা বলার পরিস্থিতিতে আমি নেই। চোখের সামনে মানুষটাকে ভাসছে। সেই যুবক ফারুক থেকে বৃদ্ধ ফারুককে দেখেছি, চিনেছি। কত কাজ করেছি একসঙ্গে। রাত-বিরাতে শুটিং করেছি। হাসি, আনন্দ, বেদনা, কত মান-অভিমান। কত সিনেমা হিট হয়েছে আমাদের। লোকে ফারুক-ববিতা জুটিকে আজও ভালোবাসেন। যারা আমাদের জুটির ভক্ত ছিলেন, দর্শক ছিলেন তারাও আজ হয়তো তাদের প্রিয় নায়ককে হারিয়ে কাঁদছেন, কষ্ট পাচ্ছেন। নায়ক হিসেবে, মানুষ হিসেবে ফারুক ভাই অনেক কারণেই অনন্য। তার শূন্যস্থান পূরণ হবার স্বপ্ন দেখাটাও বোকামি।
ফারুক-ববিতা একসঙ্গে জুটি বেঁধে ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘নয়নমণি’, ‘আলোর মিছিল’, ‘লাঠিয়াল’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘মিয়া ভাই’সহ ৩০টিরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। সেসবের মধ্যে প্রায় অনেক সিনেমাই সুপার হিট ছিল।
ফারুকের সঙ্গে ববিতার শেষ দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬’র মঞ্চে। ওই আসরে যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন তারা দুজন।
এ সম্পর্কে ববিতা বলেন, ‘আমরা যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে একসঙ্গে আজীবন সম্মাননা নিয়েছি, সেদিনই শেষ দেখা হয়েছিল। ওই সময় তার সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল।’
এএম/এমএমএ/