হলিউড ফর এভার সেমিট্রিতে জায়গা হলো অ্যান হ্যাশের
মোটে ৫৩ বছরে রূপালী জীবন ছেড়ে চলে গিয়েছেন অ্যান হ্যাশ। পুরো নাম ছিল তার অ্যান সিলেস্ট হ্যাশ। মারা গিয়েছেন এ বছরের ১১ আগষ্ট।
জন্মেছেন তার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইয়ো অঙ্গরাজ্যের অ্যারোরাতে ১৯৬৯ সালের ২৫ মে।
প্রথম স্বীকৃতি পেয়েছেন অভিনয় ও অনন্য সৌন্দর্যে টিভি ধারাবাহিক নাটক ‘অ্যানাদার ওয়ার্ল্ড’-এ। চলেছে ১৯৮৭ থেকে টানা চার বছর। যুবতী বয়সে দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়ের গুণে তিনি লাভ করেছেন ‘ডে টাইম অ্যামি অ্যাওয়ার্ড’ ও দুটি ‘সোপ অপেরা ডাইজেস্ট অ্যাওয়ার্ড’।
তার জীবনের সবচেয়ে প্রশংসিত সিনেমাগুলো হলো নব্বই দশকের শেষের দিকের। একটি বছর ১৯৯৭ সালে তিনি হয়ে গিয়েছেন সুপার-ডুপার হিট নায়িকা। সেগুলো অপরাধের কাহিনী নিয়ে বানানো ছবি ‘ডনি ব্রাস্ককো’, অগ্নুৎপাত ও মানুষের বাঁচার লড়াইয়ের গল্প ‘দি ভলকানো’, ভৌতিক অপরাধের কাহিনীনিভর ‘আই নো হোয়াট ইউ ডিড লাস্ট সামার’, রাজনৈতিক বিদ্রুপের কাহিনী ‘ওয়াগ দি ডগ’।
পরের বছর তাকে খ্যাতি এনে দিয়েছে মারামারি ও হাসির সিনেমা ‘সিক্স ডেইজ, সেভেন নাইটস’, থ্রিলার ‘রিটার্ন টু প্যারাডাইজ’। আলফ্রেড হিচককের বানানো, উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র ‘ম্যারিয়েন ক্রেইন’র চরিত্র করেছেন সে বছরের প্রবল আলোচিত সেই ছবি ‘সাইকো’তে। খুব ভালো হয়েছে তার অভিনয়। প্রথম বানিয়েছেন আলফ্রেড হিচচক। তার নামেই খ্যাত হয়েছে।
অনেকগুলো স্বাধীন ধারার ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন ও নাম করেছেন। তাদের এগিয়ে দিয়েছেন। আছে ২০০৪ সালের ‘বার্থ’, পাঁচ বছর পরের ‘স্প্রেড’, ২০১১ সালের ‘সিডার র্যাপিডস’ ও ‘র্যাম্পার্ট’, ব্ল্যাক কমেডি ২০১৬ সালে করেছেন ‘ক্যাটফাইট’।
টেলি ছবি করে প্রশংসিত হয়েছেন “গ্রেইসি’স চয়েজ”, প্রাইম টাইম অ্যামির জন্য মনোনয়নও এনে দিয়েছে তাকে।
মঞ্চ নাটক করেছেন ‘টুয়েনটিথ সেঞ্চুরি’। তার বারবার প্রদর্শিত চরিত্রটি টনি অ্যাওয়ার্ড মনোনয়ন এনে দিয়েছে।
এই দুখী মহিলাটির বড় তিন ভাই, বোনই নানা রোগে মারা গিয়েছেন। আর তিনি কার দুঘটনার সঙ্গে লড়ে অতি কষ্টে জীবন প্রদীপ ছেড়েছেন। তবে হলিউড তার মেধা, অজন ও জীবনকে সম্মানিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের ‘হলিউড ফর এভার সেমিট্রি’তে তার লাশ সমাহিত করা হয়েছে ধর্মীয় মর্যাদার সঙ্গে। তার পরিবার গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, “সেখানে শুয়ে আছেন হলিউডের ‘আলোর উৎস’রা।”
সেখানে তিনি চিরকালের জন্য ঘুমিয়ে রয়েছেন। তার দেহের অংশ প্রদান করা হয়েছে এই ‘হলিউড ফর এভার সেমিট্রি’তে। এই মহিয়সী নারী কারে আগুন ধরে যাওয়ার পর দুই সপ্তাহ আগে হাসপাতালে আহত অবস্থায় মারা গিয়েছেন। এরপর এভাবে তার শেষ কৃত্যাদি ও সম্মান সম্পন্ন করলো হলিউড।
তার ছেলে হোমার লাফুন এপিকে বলেছেন, তিনি ও তার ভাই অ্যাটলাস টাপার যে জায়গাগুলো মায়ের চিরকালের জন্য বেছে নিয়েছেন, ‘তিনি খুশি হতেন আগে জানলে। সেগুলো অসাধারণ সুন্দর জায়গা, অত্যন্ত বিখ্যাত ও সম্মানিত। তিনি সেখানে তার হলিউডের সহযাত্রীদের সঙ্গে রয়েছেন।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে করবস্থানটি সিনেমার দৃশ্য ধারণ, গানের অনুষ্ঠান পরিবেশন ও উৎসবগুলোর মাধ্যমে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
মাকে রেখে আসার পর সেখানে তার বড় ছেলে লাফুন ‘মাই মর্নিং জ্যাকেট’ নামের একটি ব্যান্ড দলের পারফরমেন্স দেখতে সেখানে গিয়েছেন। তবে এই টিকিটগুলো তার মা থাকতে তারা কিনেছিলেন। করবস্থানের নব ধরণ ও প্রাণবন্ততা ছেলেকে ছুঁয়ে গিয়েছে। ফলে তিনি বলেছেন, ‘আমার মায়ের কবর সেখানে থাকা প্রয়োজন।’ এরপর বলেছেন, “হলিউড ফর এভার’ একটি জীবিত বিশেষ স্থান।”
এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন একটি ছোট্ট প্রার্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মায়ের একটি পাথরে খোদাই নাম, পরিচয় ফলক সেখানে গেঁড়ে দেবার জন্য।
তিনি বলেছেন, “তিনি আমাদের মা। তবে তার প্রতি যে দয়া, ভালোবাসা গেল কদিনে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে আমরা মনে করি, তিনি তার ভক্তদেরও খুব কাছের মানুষ ছিলেন, ভালোবাসার পাত্রী ছিলেন। তিনি এই ভালোবাসা আরো পেয়েছেন বিনোদন শিল্প জগৎ, তার বয়সী মানুষদের কাছ থেকেও।”
বহু পুরোনো, শত বছরের আগের প্যারামাউন্ট পিকচার্সের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই কবরস্থান। সেখানে কবর, সমাধি ফলক আছে জুডি গারল্যান্ড, ডগলাস ফেয়ারব্যাংকসের মতো হলিউড সুপার স্টারের। আছেন সঙ্গীত তারকাদের মধ্যে ক্রিস কর্ণেল, জনি রুমোনের মতো মানুষ।
হ্যাশের এই জমকালো সমাধিস্তম্ভের বাগানে আরো পাশে আছেন কিংবদন্তী যেমন মিকি রুনি। পাশে হ্রদ আছে। তার ধারে আছেন হলিউড তারকা বার্ট রেনাল্ড। সম্প্রতি তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছে।
অ্যান হ্যাশের জীবনের গল্প বলে তিনি ১৯৯০ দশকের ১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্র তারকা ছিলেন। তার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তখন হ্যারিসন ফোর্ড, আজকের খ্যাতনামা জনি ডেপের মতো মানুষ। তিনি একাধারে সিনেমা ও টিভিতে কাজ করেছেন-এই তার আরেক বিশেষত্ব। তিনি টিভি, সিনেমার ভুবনে তিন দশকের বেশি নিয়মিত। তবে তার ব্যক্তিগত জীবন ছিল প্রচণ্ড অশান্তিতে ভরা। একটি আত্মজীবনীতে বলে গিয়েছেন তিনি। তাকে অনুসরণ করে লেখা সাক্ষাৎকারগুলোতেও জানিয়েছেন।
লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টির করোনার বা তাদের এই গোরস্থানের কর্মী জানিয়েছেন, অ্যান হ্যাশ তার জীবনের শেষ চিহ্ন রেখেছেন শরীরে অনেকগুলো দুর্ঘটনার আঘাত ও আগুনে পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে।
ওএফএস।