আদালতে লড়ছেন রজনীকান্তের স্ত্রী লতা
আংশিক সাহায্য করা হয়েছে অভিনেতা রজনীকান্তের স্ত্রীকে, কর্নাটক হাই কোর্ট থেকে অপরাধের মামলাতে। তবে ভারতের দক্ষিণ পশ্চিমের রাজ্য কর্নাটক বা সাবেক মহিশূর রাজ্য’র হাই কোর্ট বাতিল করে দিয়েছেন প্রতারণা, মিথ্যা তথ্য দান ও ভুল হবে জেনেও তথ্য দানের অভিযোগগুলো। জালিয়াতির অভিযোগ বা মামলাটির এই অংশের আদালতে শুনানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনুমতি দিয়েছেন। এই অংশে আদালতে অভিযোগ আছে, একটি বিশেষ ও ব্যক্তিগত কারণজনিত ছবির দুই প্রযোজকের (চেন্নাইভিত্তিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা ব্যুরো অ্যাডভারটাইজিং প্রাইভেট লিমিটেড ও মিডিয়া ওয়ান গ্লোবাল এন্টারটেনমেন্ট লিমিটেড) নামে একটি ভুল (মিথ্যা) চিঠি দিয়েছেন তিনি। সেটি ইস্যু করেছেন ব্রডকাস্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া, ব্যাঙ্গালুরুর ঠিকানায়ও। সেটি আসলে নেই। আর তিনি কী ভেবে ২০১৪ সালে তার বিজ্ঞাপনী সংস্থাটির বিপক্ষের আবেদনেও এই চিঠিগুলোর কপি দিয়েছিলেন? মানুষটি আর কেউ নন, লতা রজনীকান্ত। ভারতের মেগা স্টার রজনীকান্তের স্ত্রী।
ভালো নাম তার কবেই হারিয়ে গিয়েছে। শিবাজি রাও গায়কোয়াদ। ৭১ বছরের এই মহান অভিনেতা একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার। তামিল সিনেমা ভুবনের রাজা। হিন্দি ছবিরও সুপারস্টার। তার নামেই ছবি চলে। তামিলনাড়ু রাজ্য তার সোনার সন্তানকে চারবার সেরা অভিনেতার পুরস্কার দিয়েছে। পেয়েছেন ফিল্মফেয়াররের তামিল সেরা অভিনেতার পুরস্কারও। তবে তিনি এখন পুরস্কারের উর্ধ্বে। ১৯৭৫ সালে নাটকের মাধ্যমে শুরু। পরস্পরের প্রতি ক্রীড়াশীল চরিত্রগুলোর জন্য তার রাজ্য ও সারা দেশের মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য ভালো অভিনেতার সম্মান লাভ করেছেন। ১৯৯৫ সালের ‘কৃষ্ণ’ তার অভিনয়ের একটি মাইলফলক। জীবনের প্রধান বাণিজ্যিক ছবিগুলোর অন্যতম। এই ছবিই তামিলনাড়ুতে তাকে ‘ঈশ্বর’র আসনে বসিয়ে দিয়েছে। ২০০৭ সালের ছবি তার ভালো নামের ও বিশ্বখ্যাত ভারতীয় রাজা শিবাজি’র জীবন অবলম্বনে বনানো ‘শিবাজি’ তৃতীয় ভারতীয় ছবি হিসেবে ১শ কোটি রূপী মুনাফা করেছে।
অথচ একটি কৃষক বংশের ছেলে তিনি। ১৯৯৬ সালে একা হাতে ডিএমকেকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন। এমন কত কীর্তি তার। জীবনে এক সময় বাসের কন্ট্রাক্টর ছিলেন। নির্মলা নামের একজন মেডিক্যালের ছাত্রীকে দেখে প্রেমে পড়ে যান ও ভালোবাসার শুরু হয় দুজনের। তিনিই তাকে এখনকার এম. জে. আর. গভর্নমেন্ট ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হতে বলেন। এরপরই অভিনয় জীবনের শিক্ষা ও ভিন্নভাবে চলা শুরু হয় রজনীকান্তের। তামিলনাড়ু রাজ্য সরকার রাজধানী চেন্নাইতে পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানটি।
তার সেই প্রেম টেকেনি। জীবনের ভাঙা গড়া এমন অনেক আছে মানুষটির। এরপর প্রকাশিত হলো লতা রাঙ্গাশাড়ির নেওয়া তরুণ ও মেধাবী অভিনেতা রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার তাদের কলেজ ম্যাগাজিনে। তিনি তখন ইতিরিজ কলেজ ফর উইম্যানের ছাত্রী। তবে অন্ধ্রপ্রদেশে। তখনই মেয়েদের মধ্যে ও অভিনয়ের আলো ছড়াতে শুরু করেছে তামিলদের প্রিয় অভিনেতার।
১৯৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করলেন। দুটি মেয়ে আছে তাদের। একটি বিদ্যালয় আছে তার স্ত্রীর-‘দি আশ্রম’। ধানুশকে বিয়ে করেছেন তাদের বড় মেয়ে ইয়েশ্বরিয়া। ছোট মেয়ে সুন্দরিয়া গ্রাফিক ডিজাইনার, পরিচালক, প্রযোজক তামিল ছবিতে। তবে তাদের বিচ্ছেদ ২০০৭ সালের জুলাইতে। এরপর ব্যবসায়ী ও অভিনেতাকে বিয়ে করেছেন রজনীকান্তের মেয়ে ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এহেন জীবনে তামিল ছবির সেরা অভিনেতা পড়েছেন নতুন বিপদে। সে কাহিনীই।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-প্রধান ও স্ত্রীকে যে মামলাটি এখন হাই কোর্টে দৌড়াতে হচ্ছে মুখে চুন, কালি মেখে-সেটি করেছে তাদের চেন্নাইয়ের ওই বিজ্ঞাপনী সংস্থা, ব্যুরো অ্যাডভারটাইজিং প্রাইভেট লিমিটেড ২০১৫ সালে। টানা সাত বছর ধরে চলছে। একটি অপরাধের মামলা। উচ্চ আদালত তার বিপক্ষে নকল প্রমাণটি দেওয়ার অভিযোগের নিস্পত্তি চলমান রাখতে নিদের্শ দিয়েছেন।
বিচারক এম. নেপ্রাসন্না তার ২ আগষ্ট দেওয়া আদেশে আংশিকভাবে মিসেস রজনীকান্তের পিটিশন গ্রহণ করেছেন। তিনি ২০২১ সালের ২৭ মর্টি মেজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন যে, অনেকগুলো অপরাধের বিপক্ষে তার নামে চার্জ শিট দায়ের করেছে বেঙ্গালুরু পুলিশ, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি, সেগুলো অবগত হয়ে আদেশ প্রদান করতে।
এরও আগে ২০১৫ সালে ব্যুরো অ্যাডভারটাইজিং প্রাইভেট লিমিটেড, ব্যাঙ্গালুরুর একটি মেজিস্ট্রেটের আদালতে একটি বেসরকারী অভিযোগ দায়ের করে। তারা অভিযুক্ত করেন, লতা রজনীকান্তকে যে, তিনি ২০১৪ সালে ব্যাঙ্গালুরুর একটি সিভিল কোর্টে একটি বানোয়াট বা মিখ্যা প্রমাণ দিয়ে একটি অস্থায়ী আদেশ লাভ করেছেন তাদের কম্পানি ও অনেকগুলো গণমাধ্যম হাউজের বিপক্ষে। তিনি এই কাজ করেছেন আর্থিক লেনদেনের বিতর্ক তৈরির পর।
তাদের দায়ের করা আদালতের মামলাটি ছিল ও মিসেস রজনীকান্তের অস্থায়ী আদেশটি লাভ করা ছিল ব্যুরো বিজ্ঞাপনী সংস্থা ও মিডিয়া ওয়ান গ্লোবাল এন্টারটেনমেন্ট লিমিটেডের। তারা তামিল ছবি ‘কোসাডিয়ান’ প্রযোজনা করেছেন। ছবিটি একটি তামিল থ্রিডি অ্যানিমেটেড, রজনীকান্তের ছোট মেয়েটি প্রযোজনা করেছেন। ভারতের প্রথম ফটোরিয়েলিসটিক মোশন ক্যাপচার ফরমেটে বানানো সিনেমা। তার বাবা চারটি চরিত্র করেছেন। ২৫ কোটি রূপীর সিনেমাটি এখন ৪২ কোটি রূপী আয় করেছে।
তবে তারা তখন অভিযোগ করেছিলেন যে, মিসেস রজনীকান্ত তার ব্যক্তিগত গ্যারান্টি, দিয়েছিলেন ব্যুরো ও মিডিয়া ওয়ানকে, সেটি রাখেননি। তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন। তখন ক্ষতি হলেও এখন লাভে সিনেমাটি। তবে এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমগুলো হামলে পড়েছিল। মামলাও হয়ে গেল।
ব্যাঙ্গালুরু সিভিল কোর্টের পর ২০১৫ সালে লতা রজনীকান্ত প্রাদেশিক বা রাজ্য আদালতে এখতিয়ারের আবেদন দায়ের করেন। এরপর অস্থায়ী আদেশও লাভ করেন। তারপর ব্যুরো একটি ব্যক্তিগত অভিযোগ দায়ের করে। এরপর মেজিস্ট্রেট কোর্টের মাধ্যমে আদেশ হলো, ২০১৫ সালের জুনে, তদন্ত পুলিশ করবে।
পরের বছরের জুনে কর্নাটক হাই কোর্ট তাদের সবার অভিযোগ বাতিল করে দিলেন এই রায়ে, এটি সুশীল সমাজের একটি বিশেষ বিতর্কের ফলাফল ও এখানে কোনো উপাদান ছিল না যেগুলো মিসেস রজনীকান্তের বিপক্ষে করা হয়েছে। তবে তারা থামলেন না। ফলে ২০১৮ সালে অ্যাপেক্স কোর্ট (সুপ্রীম কোর্ট) অপরাধ বিচারের ধারাবাহিকতা রাখতে আদেশ দিলেন। এরপর পুলিশ তার বিপক্ষে একটি চার্জ শিট দিলো।
তারপর কনাূটকের হাই কোর্ট জানিয়েছে, মাঝের ট্রায়াল কোর্টে অভিযোগগুলো ভারতীয় আইনের সেকশনস ১৯৬ ও ১৯৯ অনুসারে বিচারাধিকারের নিয়মে হয়নি। ১৯৬ ধারাতে আসে, ভুল হবে এমন উপাত্ত ব্যবহার ও ১৯৯ তে আসে, মিথ্যা ভাষ্য দেওয়ার ডিক্লারেশনটি, যেটি আইনে একটি উপাত্ত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য। ১৯৫ সেশনের অধীনে কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের এখানে একটি বাধা আছে, সেখানে বিনোদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনোদিত করার বিধান আছে। এই বিষয়টি মিসেস রজনীকান্তের পক্ষে গিয়েছে।
এরপর হাই কোর্ট আরো জানিয়েছে, এখানে এমন কোনো উপাদান নেই, অভিযোগের যে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তিনি জালিয়াতি করেছেন। তারপরও আদালত সেকশন ৪৬৩’র অধীনে মামলায় জালিয়াতির অভিযোগ আদালতে শুনানির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অনুমতি দিয়েছেন লতা রজনীকান্তের বিপক্ষে, ভারতীয় পেনাল কোড অনুসারে, যেহেতু এটি বিচ্ছেদ্য আইপিসির ১৯৬ ও ১৯৯ সেকশনের অপরাধগুলো থেকে। একজন স্কুল প্রধান ও রজনীকান্তের ন্ত্রী এ কোন বিপদে পড়লেন?