৮২ পেরিয়ে অনবদ্য সৈয়দ আব্দুল হাদী
বাংলা গানের জীবন্ত এক কিংবদন্তি শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। গত ছয় দশক ধরে বাংলা গানকে তিনি সমৃদ্ধ করে যাচ্ছেন। গানের সব শাখাতেই রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। বাংলা গানের ভুবনে তিনি অনন্য এক বটবৃক্ষ। যার ছায়াতে বাংলা গান হয়েছে সমৃদ্ধ ও গতিশীল।
১ জুলাই কিংবদন্তি এ গায়কের জন্মদিন। আজ জীবনের ৮২তম বসন্ত পেরিয়ে ৮৩-তে পা রাখলেন তিনি। ১৯৪০ সালের ১ জুলাই ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় কসবা উপজেলার শাহপুর গ্রামে তার জন্ম। তবে তার কলেজ জীবন কেটেছে রংপুর ও ঢাকায়। ১৯৫৮ সালে সৈয়দ আব্দুল হাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
সৈয়দ আব্দুল হাদীর বাবা ছিলেন ইপিসিএস (ইস্ট পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস) অফিসার। তিনি গান গাইতেন এবং কলেরগানে গান শুনতে পছন্দ করতেন। বাবার শখের গ্রামোফোন রেকর্ডের গান শুনেই কৈশোরে সংগীত অনুরাগী হয়ে উঠেন এ শিল্পী। মূলত তখন থেকেই গাইতে গাইতে তিনি গান শিখেছেন।
১৯৬০ সালে ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার শুরু করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে তিনি একক কণ্ঠে প্রথম বাংলা সিনেমায় গান করেন। নাম ছিল ‘ডাকবাবু’। মো. মনিরুজ্জামানের কথায় সংগীত পরিচালক আলী হোসেনের সুর করা একটি গানের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়।
বেতারে তার গাওয়া প্রথম জনপ্রিয় গান ‘কিছু বলো’। সালাউদ্দিন জাকি পরিচালিত ঘুড্ডি চলচ্চিত্রে লাকী আখান্দের সুর ও সংগীতে ‘সখি চলনা, সখি চলনা জলসা ঘরে এবার যাই’ গানটি গেয়ে সেই সময় বিশেষভাবে আলোচনায় আসেন আব্দুল হাদী।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নানামাত্রিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এ শিল্পী। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত হয় তার প্রথম রবীন্দ্র সংগীতের একক অ্যালবাম ‘যখন ভাঙলো মিলন মেলা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সুবল দাস, পি.সি গোমেজ, আবদুল আহাদ, আবদুল লতিফ তাকে গান শেখার ক্ষেত্রে উৎসাহ যুগিয়েছেন।
সৈয়দ আব্দুল হাদী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। সর্বশেষে তিনি লন্ডনে ওয়েলস ইউনিভার্সিটিতে প্রিন্সিপাল লাইব্রেরিয়ান হিসেবেও কাজ করেছেন। অসংখ্য সিনেমা ও অ্যালবামে বহু কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী। তার মধ্যে ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘এই পৃথিবীর পান্থশালায়’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’, ‘চলে যায় যদি কেউ বাঁধন ছিড়ে’, ‘এমনও তো প্রেম হয়’, ‘কেউ কোনো দিন আমারে তো’, ‘যেও না সাথী’, ‘আমি তোমারই প্রেম ভিক্ষারী’, ‘চোক্ষের নজর এমনি কইরা’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সুর্যাস্তে তুমি’, ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’, ‘তেল গেলে ফুরাইয়া’, ‘আউল বাউল লালনের দেশে’, ‘মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার বারিস্টার’ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান।
চলচ্চিত্রে গান গেয়ে সেরা গায়ক ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন সৈয়দ আব্দুল হাদী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচ বার। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক। এ ছাড়াও তিনি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে পেয়েছেন আরও অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।
আজ খ্যাতিমান এ শিল্পীর জন্মদিনে ঢাকাপ্রকাশের পক্ষ থেকে রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
এএম/এসএন